Advertisement
E-Paper

যাদবপুরের মামলায় আদালতকক্ষ ছাড়লেন কল্যাণ, বললেন ‘যত দিন ওকালতি করব, এই কোর্টে সওয়াল করতে আসব না’

আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে পুলিশ ছাত্রদের অভিযোগ নিয়েছে। সে বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে কল্যাণ শুক্রবার বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫ ২১:৩২
JU Case: Kalyan Banerjee leaves Court Room after Judge’s observation regarding style of pleading, Says never to plead in that Court Room in future

কেন আদালতকক্ষ ছাড়লেন কল্যাণ? —ফাইল ছবি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একটি মামলায় সওয়াল করবেন না বলে বিচারপতিকে জানিয়ে আদালতকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের সওয়াল করার ভঙ্গি নিয়ে শুক্রবার নিজের পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছিলেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। সেই পর্যবেক্ষণের পরে কল্যাণ জানান, আর কখনও তাঁর এজলাসে সওয়াল করবেন না।

১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে একাধিক ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। মন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে আটকে রাখার চেষ্টা, ধস্তাধস্তি, মন্ত্রীর গাড়ি ভাঙচুর, তৃণমূলপন্থী কর্মচারী সংগঠনের দফতরে অগ্নিসংযোগ-সহ নানা হিংসাত্মক ঘটনায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্রাত্যের গাড়ি ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর সময় দু’জন পড়ুয়াকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির তরফ থেকে অভিযোগও করা হয়। যদিও গাড়ির তলায় চাপা পড়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি। বরং সে দিনের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেই মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা-সহ নানা অভিযোগে একাধিক এফআইআর রুজু হয়। একটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানিয়েছিল, পুলিশ তাদের অভিযোগ নিচ্ছে না। তাদের অভিযোগও পুলিশকে নিতে হবে বলে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বুধবার নির্দেশ দেন। সেই মামলার বিষয়েই রাজ্য সরকারের তরফে কল্যাণ শুক্রবার বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তখনই পরিস্থিতি ‘অপ্রীতিকর’ হয়ে ওঠে।

আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরে পুলিশ ছাত্রদের অভিযোগ নিয়েছে। সেই বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে কল্যাণ শুক্রবার বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। মামলার পরবর্তী শুনানি কবে হবে, তা জানতেই মূলত দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। প্রসঙ্গক্রমে আদালতকে কল্যাণ বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, যাদবপুরে নিরন্তর অশান্তি লেগে থাকে এবং তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। কল্যাণের কথায়, ‘‘২০১৪ সালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।’’ বিচারপতি ঘোষের প্রশ্ন ছিল, সরকারি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষামন্ত্রী কী ভাবে আক্রান্ত হলেন, ব্রাত্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের ক’জন সে দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন? বিচারপতির এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কল্যাণ যা বলেন, তাকে ঘিরেই কথোপকথন কিছুটা তপ্ত হয়।

ব্রাত্য ১ মার্চ কোনও সরকারি কাজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সে কথা জানিয়ে কল্যাণ বলেন যে, ‘‘এ ধরনের দলীয় কর্মসূচিতে মন্ত্রীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন না।’’ কিন্তু বিচারপতি কল্যাণের এই যুক্তি মানেননি। বৈঠক বা কর্মসূচির ভিতরে নিরাপত্তারক্ষীরা না-থাকলেও বাইরে ‘প্রোটোকলের’ মধ্যেই মন্ত্রীর থাকার কথা বলে বিচারপতি মনে করিয়ে দেন। কল্যাণ এই কথার জবাব দেওয়ার পরে বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আপনি এমন ভাবে সওয়াল করছেন, তাতে হয়তো প্রচার হবে, এই আদালতকে আপনি অসম্মান করছেন।’’

আদালতের বাইরের ‘সমালোচনা’ নিয়ে তিনি ভাবিত নন বলে কল্যাণ জানান। বিচারপতি ঘোষকে তিনি বলেন, ‘‘আপনি যদি মনে করেন আদালত অসম্মানিত হয়েছে, তা হলে আমি আর সওয়াল করতে আসব না।’’ বিচারপতি কল্যাণকে মনে করিয়ে দেন যে, শুধু ‘গঠনমূলক সমালোচনা’ই স্বাগত। কল্যাণ হাতজোড় করে ফের বলেন, ‘‘আপনি যদি ভাবেন আমি অসম্মান করেছি, যত দিন ওকালতি করব, এই কোর্টে আসব না। ধন্যবাদ।’’

বিচারপতি ঘোষ অবশ্য কল্যাণকে মামলা থেকে সরে দাঁড়াতে বলেননি। তিনি কল্যাণকেই সওয়াল করতে বলেন। কিন্তু কল্যাণ জানিয়ে দেন, তিনি আর আসবেন না। তার পর আদালত কক্ষ ছেড়ে বেরিয়েও যান।

Kalyan Banerjee Jadavpur University Calcutta High Court Bratya Basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy