Advertisement
E-Paper

জগ-বোমা রেখে নেতাকে ইনামের টোপ

রাতে বেজেই যাচ্ছিল মোবাইল। অন্য প্রান্ত থেকে বার বার অচেনা পুরুষকণ্ঠে সেই এক কথা— ‘‘পুলিশের তাড়ায় আপনার বাড়ির কাছেই ফেলে এসেছি কোটি টাকার সম্পদ। ওটা তুলে রাখুন। ইনাম দেব ১০ লাখ টাকা।’’ কৌতূহলে শনিবার খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মিলেছিল পিতলের চকচকে জগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬
এই জগেই রাখা ছিল বোমা। — নিজস্ব চিত্র

এই জগেই রাখা ছিল বোমা। — নিজস্ব চিত্র

রাতে বেজেই যাচ্ছিল মোবাইল। অন্য প্রান্ত থেকে বার বার অচেনা পুরুষকণ্ঠে সেই এক কথা— ‘‘পুলিশের তাড়ায় আপনার বাড়ির কাছেই ফেলে এসেছি কোটি টাকার সম্পদ। ওটা তুলে রাখুন। ইনাম দেব ১০ লাখ টাকা।’’ কৌতূহলে শনিবার খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে মিলেছিল পিতলের চকচকে জগ। কিন্তু জগের নীচে লোহার রডের ছোট্ট টুকরো দেখে বোমা বলে সন্দেহ হওয়ায় তা নামিয়ে রেখেছিলেন বর্ধমানের কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল নেতা অনন্ত হালদার। আশঙ্কাই সত্যি হল। বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের দড়ির টানে জগ-বোমা ফেটে গেল টুকরো টুকরো হয়ে।

শনিবার বিকেলে বিস্ফোরণের পরেই পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের হাঁসপুকুর এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা সরলা হালদারের স্বামী অনন্তবাবু দাবি করেছেন, তাঁকে খুন করতেই পরিকল্পিত ভাবে জগ-বোমা বাড়ির কাছে রেখে প্রলোভন দেখিয়ে ফোন করা হয়েছিল। এসডিপিও (কালনা) ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘জগের ভিতরে দেশি বোমা (‌পেটো) রাখা ছিল। যে নম্বর থেকে অনন্তবাবুকে ফোন করা হয়েছিল, সেটির সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

হাঁসপুকুর গ্রামের বাসিন্দা অনন্তবাবু দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। শুক্রবার রাত প্রায় ১০টায় প্রথম বার তাঁর কাছে ফোন-প্রস্তাব আসে। তাঁর কথায়, ‘‘অচেনা একটা লোক ফোনে বলে, কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে সে গুপ্তিপাড়া ঘাট পেরোচ্ছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে আমার বাড়ির কাছে জিনিসটা ফেলে গিয়েছে। ওটা তুলে রাখলে আমাকে ১০ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল লোকটা।’’ অনন্তবাবুর দাবি, বহু পীড়াপিড়িতেও লোকটি পরিচয় জানাতে চায়নি। ‘সম্পদ’টাই বা কী তা-ও খোলসা করেনি।

প্রথমে কেউ ঠাট্টা করছে বলে ভেবেছিলেন অনন্তবাবুর। ঘুমোতে চলে যান। কিন্তু দু’চোখের পাতা এক হওয়ার আগেই ফের বাজে মোবাইল। একই নম্বর থেকে সেই লোকটি জানতে চায়, ‘জিনিস’টা তুলে আনা হয়েছে কি না। অনন্তবাবু ফোন রেখে দেন। কিন্তু অপরিচিতের ফোন আসা বন্ধ হয়নি। বিরক্ত হয়ে রাত ১টা নাগাদ মোবাইল বন্ধ করে দেন তিনি।

তবে কৌতূহলের বশে এ দিন ভোরে ভাই শিবশঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে বাঁশবাগানের মুখে দেখেন, কাগজে জড়ানো একটি পিতলের জগ পড়ে রয়েছে। চকচকে জগটার মুখ ঝালাই করে বন্ধ করা। অনন্তবাবু বলেন, ‘‘ভাই জগটা তুলতে নজরে আসে, তলায় ছোট্ট লোহার রড। সন্দেহ হয়, জগে বোমা নেই তো! তড়িঘড়ি জগটা নামিয়ে রেখে দৌড়ে পালাই।’’

খবর যায় পুলিশে। জগ দেখতে ততক্ষণে বাঁশবাগানে ভিড় জমেছে। জনতাকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে সরিয়ে বালির বস্তা দিয়ে জগটা ঘিরে ফেলে পুলিশ। বিকেলে দুর্গাপুরের বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের সদস্যেরা এসে যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, জগে বিস্ফোরক রয়েছে। পুলিশ আধিকারিকেরা ঠিক করেন, বাঁশবাগানে টেনে নিয়ে গিয়ে বিস্ফোরকটি নিষ্ক্রিয় করা হবে। আপাদমস্তক বিশেষ পোশাক পরে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের এক সদস্য জগের হাতলে লম্বা দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কয়েক পা যেতে না যেতেই চারপাশ কাঁপিয়ে ফেটে যায় জগ। তবে কারও চোট লাগেনি। বিস্ফোরণের ঘোর কাটতেই অনন্তবাবু বলে ওঠেন, ‘‘আমাকে মারতেই ওটা বাড়ির কাছে রেখে যাওয়া হয়েছিল!’’

কিন্তু তাঁকে কারা, কেন খুন করতে চাইবে? জবাব দেননি অনন্তবাবু। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজনীতি ছাড়াও তিনি জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত। সম্প্রতি এলাকার একটি বন্ধ ইটভাটা খুলতেও উদ্যোগী হয়েছেন। তা ছাড়া, এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রবল। এই ঘটনার সঙ্গে সে সবের কোনও যোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এলাকায় দলের অন্দরে কোনও দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মানতে চাননি তৃণমূলের পূর্ব সাতগাছিয়া অঞ্চল সভাপতি বলাই উপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘অনন্তবাবুকে খুন করাই মতলব ছিল, এটা বোঝা যাচ্ছে। ভাবুন, সে জন্য কেউ একটা জগ-বোমা বানিয়েছে!’’

TMC leader bomb
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy