Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

নিয়োগ মামলার সবচেয়ে বড় রায়! ৩৬ হাজার চাকরি বাতিল কি নজির হয়ে গেল দেশের আইনি ইতিহাসেও?

৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই প্রথম নয়। ২০২২ সালের মে মাস থেকে একের পর এক চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

image of Justice Abhijit Gangopadhyay

এর আগে বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক নির্দেশে চাকরি গিয়েছে নবম-দশম থেকে প্রাথমিক শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের। — ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৩ ১৯:৩৭
Share: Save:

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হল। তাঁরা সকলেই অপ্রশিক্ষিত। এর আগে বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক নির্দেশে চাকরি গিয়েছে নবম-দশম থেকে প্রাথমিক শিক্ষক, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের। সেই সংখ্যাটা প্রায় ৪,৭৮৪। ত্রিপুরাতেও ২০১৪ সালে হাই কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছিল প্রায় ১০ হাজার শিক্ষকের। কিন্তু অনেকের মতে, অদূর তো বটেই সুদূর অতীতেও একসঙ্গে এত জনের চাকরি বাতিলের নজির গোটা দেশে নেই।

২০২২ সালের ২০ মে প্রথম চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তৎকালীন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক হিসাবে যত টাকা বেতন পেয়েছিলেন, তা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। এর পরেই একের পর এক শুনানিতে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের চাকরি গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন মোট ৪,৭৮৪ জন।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিযুক্ত ৯৫২ জন নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) বিকৃত করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এই মামলা প্রথমে ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। পরে সেই মামলা হস্তান্তর হয়ে যায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর একক বেঞ্চে। বিচারপতি বসুর বেঞ্চে মামলাটি উঠলে তিনি ওই ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করে তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন এসএসসি-কে। ওই ৮০৫ জনের উত্তরপত্রে দুর্নীতির কথা স্বীকার করে নেয় এসএসসি-ও। তার পরেই ৬১৮ জনের নাম প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে আরও ১৫৭ জন শিক্ষক চাকরি হারান। তাঁরাও নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক ছিলেন।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২৬৯ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই ২৬৯ জনকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা যাবে না। গত বছর সেপ্টেম্বরে বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চে যায়। সেখানেও বহাল থাকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়। অক্টোবরে সেই রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তবে সিবিআই তদন্তে কোনও বাধা দেয়নি।

গত ১০ মার্চ ৮৪২ জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। হাই কোর্ট নির্দেশে আরও জানিয়েছে, ওই ৮৪২ জন আর স্কুলে প্রবেশ করতে পারবে না। ২০২২ সালের মে-জুন মাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে আরও ৩৮১ জন গ্রুপ সি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়। ওই সময়েই ৬০৯ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

এর পর ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে ১,৯১১ জন গ্রুপ ডি কর্মীর চাকরি যায়। চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এই গ্রুপ ডি কর্মীদের বেতন ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই রায়ের বিরুদ্ধে চাকরি হারানো গ্রুপ ডি কর্মীরা সওয়াল করে জানান যে, তাঁরা কাজ করেছেন। তাই তাঁদের বেতন কেন ফেরত দিতে হবে? ওই সওয়ালের পর তাঁদের বেতন ফেরতের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

২০১৪ সালে ত্রিপুরায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, ২০১০ থেকে ২০১৩ সালে শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ১০,৩২৩ জনকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই নিয়োগ বাতিল করে ডিভিশন বেঞ্চ। গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে তারা। জানায়, স্বচ্ছ পদ্ধতিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।

এ বার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি বাতিল হল ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের। তবে বিচারপতি নির্দেশে জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী চার মাস স্কুলে যেতে পারবেন। প্যারা টিচার হিসাবে বেতনও পাবেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই ৩৬ হাজার শূন্যপদে রাজ্য সরকারকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE