বিতর্কের শুরু হয়েছিল কানাডাবাসী ভারতীয় লীনা মণিমেকালাইয়ের ছবির পোস্টার নিয়ে। কিন্তু সে বিতর্কে এখন বাংলার। বাংলাকে কেন্দ্র করে ভারতের। কারণ, লীনার পোস্টারটিকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজের ভাবনায় দেবী কালী কেমন তা বলে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মহুয়ার দল তৃণমূলও তাঁর মন্তব্যের পাশে নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে। অন্য দিকে, মহুয়ার বক্তব্য হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছে অভিযোগে সরব বিজেপি। কৃষ্ণনগরের সাংসদকে গ্রেফতার করার দাবি উঠেছে। রাজ্যের থানায় থানায় চলছে অভিযোগ জমা দেওয়া। রাজ্যের বাইরেও এফআইআর হয়েছে।
কিন্তু মহুয়া যে কথাগুলি বলেছেন তা কি একান্তই তাঁর একার বিশ্বাস, একার কথা? কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘তৈরি করা বিতর্ক সম্পর্কে আমি অপরিচিত নই। তা সত্ত্বেও মহুয়াকে যে ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তাতে আমি বিস্মিত। মহুয়া যা বলেছেন, তা প্রত্যেক হিন্দু জানেন। দেশ জুড়ে নানা রীতিতে পুজো করা হয়। এখন ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বললেই কেউ না কেউ আঘাত পান। আমরা এমনই এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। নিশ্চিত ভাবেই মহুয়া কাউকে আঘাত করার চেষ্টা করেননি। প্রত্যেককে নিজের ধর্মাচারণের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ সমর্থন করেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করও। টুইটারে লিখেছেন, ‘মহুয়া মৈত্র অসাধারণ! আরও শক্তি পাক তাঁর স্বর।’
তবে মহুয়ার পাশে নেই বিশিষ্ট পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। বিতর্কিত ‘কালী’ পোস্টার এবং মহুয়ার বক্তব্য, দুইয়েরই তিনি সমালোচনা করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, ‘‘মহুয়া আমার কাছে শ্রদ্ধেয় একজন বক্তা। তাঁর বক্তৃতা শুনে আমি মুগ্ধ হই। কিন্তু দেবী কালী সম্পর্কে যেটা উনি বলেছেন সেটা ঠিক নয়। ওই কথাটা বলা যায় না।’’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কালীর যে ভয়ঙ্করী মূর্তি, তার পিছনে পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। রক্তবীজের যে কাহিনি তাতে কালী রক্তপান করেছেন। তাই বলে কি বলা যায় যে কালী রক্তপিপাসু! এটা বলা যায় না।’’ পুজোয় সুরা ব্যবহার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কালী পুজোয় মদ থাকে। কিন্তু সেটা তন্ত্র সাধনার একটা অঙ্গ। সেটা কেন তাঁরা করেন, কেন এমন ভাবেন তা না জেনে তো বলা যাবে না। তন্ত্রমতে অনেক গূঢ় সাধনের তত্ত্ব রয়েছে। সেই সাধন-অঙ্গকে এটা বলে দেবীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না যে তিনি সুরাপ্রিয়। সেটা বলা মনে হয় ঠিক হয়নি।’’