Advertisement
E-Paper

Mahua Moitra Controversy: মহুয়ার মন্তব্যে কি সত্যিই মহাকালী ‘অশুদ্ধ’? মদ-মাংস প্রসঙ্গে বিশিষ্টরা বিভক্ত

মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে সরব বিজেপি। বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ মহুয়াকে সমর্থন করছেন না। শাস্ত্রের কথা বলছেন। আবার অনেকেই তাঁর পাশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ২০:৫৭
কালী-বিতর্ক চলছেই।

কালী-বিতর্ক চলছেই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

বিতর্কের শুরু হয়েছিল কানাডাবাসী ভারতীয় লীনা মণিমেকালাইয়ের ছবির পোস্টার নিয়ে। কিন্তু সে বিতর্কে এখন বাংলার। বাংলাকে কেন্দ্র করে ভারতের। কারণ, লীনার পোস্টারটিকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজের ভাবনায় দেবী কালী কেমন তা বলে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মহুয়ার দল তৃণমূলও তাঁর মন্তব্যের পাশে নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে। অন্য দিকে, মহুয়ার বক্তব্য হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছে অভিযোগে সরব বিজেপি। কৃষ্ণনগরের সাংসদকে গ্রেফতার করার দাবি উঠেছে। রাজ্যের থানায় থানায় চলছে অভিযোগ জমা দেওয়া। রাজ্যের বাইরেও এফআইআর হয়েছে।

কিন্তু মহুয়া যে কথাগুলি বলেছেন তা কি একান্তই তাঁর একার বিশ্বাস, একার কথা? কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘তৈরি করা বিতর্ক সম্পর্কে আমি অপরিচিত নই। তা সত্ত্বেও মহুয়াকে যে ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তাতে আমি বিস্মিত। মহুয়া যা বলেছেন, তা প্রত্যেক হিন্দু জানেন। দেশ জুড়ে নানা রীতিতে পুজো করা হয়। এখন ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বললেই কেউ না কেউ আঘাত পান। আমরা এমনই এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। নিশ্চিত ভাবেই মহুয়া কাউকে আঘাত করার চেষ্টা করেননি। প্রত্যেককে নিজের ধর্মাচারণের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ সমর্থন করেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করও। টুইটারে লিখেছেন, ‘মহুয়া মৈত্র অসাধারণ! আরও শক্তি পাক তাঁর স্বর।’

তবে মহুয়ার পাশে নেই বিশিষ্ট পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। বিতর্কিত ‘কালী’ পোস্টার এবং মহুয়ার বক্তব্য, দুইয়েরই তিনি সমালোচনা করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, ‘‘মহুয়া আমার কাছে শ্রদ্ধেয় একজন বক্তা। তাঁর বক্তৃতা শুনে আমি মুগ্ধ হই। কিন্তু দেবী কালী সম্পর্কে যেটা উনি বলেছেন সেটা ঠিক নয়। ওই কথাটা বলা যায় না।’’ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কালীর যে ভয়ঙ্করী মূর্তি, তার পিছনে পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। রক্তবীজের যে কাহিনি তাতে কালী রক্তপান করেছেন। তাই বলে কি বলা যায় যে কালী রক্তপিপাসু! এটা বলা যায় না।’’ পুজোয় সুরা ব্যবহার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কালী পুজোয় মদ থাকে। কিন্তু সেটা তন্ত্র সাধনার একটা অঙ্গ। সেটা কেন তাঁরা করেন, কেন এমন ভাবেন তা না জেনে তো বলা যাবে না। তন্ত্রমতে অনেক গূঢ় সাধনের তত্ত্ব রয়েছে। সেই সাধন-অঙ্গকে এটা বলে দেবীর উপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না যে তিনি সুরাপ্রিয়। সেটা বলা মনে হয় ঠিক হয়নি।’’

মহুয়ার মন্তব্য এসেছে লীনা মানিমেকালাইয়ের তথ্যচিত্রের পোস্টারে দেবী কালী রূপে এক মহিলাকে ধূমপান করতে দেখা যাওয়া প্রসঙ্গে। সেই পোস্টারকেও সমর্থন করছেন না নৃসিংহপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘ধরা যাক যাত্রায় কোনও পুরুষ রাধা সেজেছেন। আমি নিজে দেখেছি সাজঘরে রাধা সেজে অভিনেতা বিড়ি খাচ্ছেন। কিন্তু সেটা কখনও পোস্টারে দেওয়া যায় না। কোনও বহুরূপী বিড়ি খেতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে কালী সিগারেট খাচ্ছেন ছবি দিয়ে পোস্টার করা যায় না। আবার দেবীকে মদ্যপ বলাও যায় না।’’

পোস্টার এবং মহুয়ার বক্তব্য দুইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পরিচালিত ‘শংকর মুদি’ ছবির একটি দৃশ্যে কালী সাজা বহুরূপী রয়েছে। তেমনই ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে অনিকেত লিখেছেন, ‘হাল্কা হিন্দুত্ববাদ খেলতে যাওয়ার ফলে আম এবং ছালা দুইই হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। এই বাংলায় কালী পোস্টার বিতর্ক নিয়ে মহুয়া মৈত্র যা বলেছেন, তাকে সমর্থন না করার কোনও কারণ দেখছি না। ঠিকই তো বলেছেন। একে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী।’

ঠিক উল্টো কথাটাই বলছেন পশ্চিমবঙ্গ বৈদিক অ্যাকাডেমির সচিব তথা ‘কালী পুজোর নিয়মকানুন ও জোগাড়’ বইয়ের লেখক নবকুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘মদ কালীকে নিবেদন করা হয় না। মদ দিয়ে দেবীর তর্পণ হয়। এটাই তো অনেকের জানা নেই।’’ মহুয়ার বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে নবকুমার বলেন, ‘‘উনি হুইস্কির কথা বলেছেন। কিন্তু শাস্ত্রমতে মদের বিকল্প দেওয়ার কথা। আর তন্ত্রমতে কিছু করণক্রিয়া রয়েছে যেটা আভিচারিক কর্ম। তাতে মদ লাগে। সেটাও হুইস্কি নয়। পঞ্চ ম-কারের যে পুজো তাতে সামবেদী মতে ইক্ষুগুড়, আদা এবং হলুদ বাটা দিয়ে সুরা তৈরি হয়। আর যজুর্বেদীয় মতে মহুয়া ফুলের রস দিয়ে তৈরি হবে। শাস্ত্রে এটাও উল্লেখ রয়েছে যে, কাঁসার পাত্রে ডাবের জল এবং তামার পাত্রে দই দিলেও তা মদ-তুল্য।’’ একই সঙ্গে নবকুমারের দাবি, ‘‘কালীপুজোর ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক ভুল করে থাকেন। মদ দেওয়াটাও তেমনই একটা ভুল। দিতে হয় কারণবারি।’’

মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে অবশ্য তেমন আপত্তির কিছু দেখছেন না শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বা কবি সুবোধ সরকার। মহুয়ার কথা নিয়ে এত উত্তেজনা তৈরি ঠিক নয় দাবি করে পবিত্র বলেন, ‘‘মা কালী মদ পান করেন বলে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে শ্যামাসঙ্গীতে। মাংস খাওয়ার কথাও রয়েছে। আর দেবদেবীদের নিয়ে লোকস্তরে প্রচুর হাসি, ঠাট্টা, ইয়ার্কি, প্যারোডি রয়েছে। শিবকে নিয়ে ঠাট্টা তো ভারতচন্দ্র প্রচুর করেছেন। মঙ্গলকাব্যগুলোতে রয়েছে। চৈতন্যদেবকে ব্যঙ্গ করেও লোকায়ত বাংলায় গান প্রচলিত রয়েছে। এগুলো লোকে সহ্য করে। তাই নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই।’’ তৃণমূল মহুয়ার পাশে না থাকা নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাঁর। পবিত্র বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা সারদার অবতার বলা হলে সেটা নিয়ে কোনও মন্তব্য নেই, কিন্তু এইটা নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে।’’

মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হওয়ার জন্য এই সময়টাকেই দায়ী করছেন কবি সুবোধ। তিনি বলেন, ‘‘এই সমস্যাটা আগে ছিল না। পাঁচ, দশ বছর আগেও হিন্দু দেবতা, হিন্দু দেবীদের অন্য অনেক রকম ভাবে দেখা হত। সেটা এখন আস্তে আস্তে লোপ পেতে চলেছে। সেটা হচ্ছে দেশে ধর্ম নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে বলে।’’ সুবোধের আরও সংযোজন, ‘‘দেবদেবীদের নিয়ে অনেক রকমের ব্যঞ্জনা আছে, অর্থ আছে। এখন একটাই বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেউ যদি কিছু বলেন সেটাকে নিয়ে রাজনীতি করা।’’

তাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক হলেও মহুয়া তাঁর বক্তব্য অনড়ই রয়েছেন। নিজেকে কালীর উপাসক বলে দাবি করে বিজেপিকে বার্তাও দিয়েছেন। বুধবারই টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি কালীর উপাসক। কোনও কিছুতে ভয় পাই না। বিজেপি যা করতে পারে করে নিক।’ বিজেপিকে নিশানা করে আরও লিখেছেন, ‘আমি তোমাদের অজ্ঞতাকে ভয় পাই না, তোমাদের গুন্ডাদের ভয় পাই না, তোমাদের পুলিশকে ভয় পাই না, তোমাদের সমালোচনাকে তো নয়ই।’ এ সবের পরে বুধসন্ধ্যায় পাল্টে ফেলেছেন হোয়াটস্অ্যাপ ডিপি। সেখানে এসেছে কালীঘাটের পটের কালী।

Mahua Moitra BJP TMC kali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy