কঠিন সময়ে শিকড়ের কাছে ফিরে যাও। বুনিয়াদি শিক্ষায় ভরসা রাখো। এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখেই ভোটের আগে ঘরে নজর দিচ্ছে বঙ্গ সিপিএম।
কয়েক মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রয়েছে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া। অচিরেই যার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ভোট এবং ভোটার তালিকাকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক পরীক্ষায় নামার আগে গোড়ার কথা ফের ঝালিয়ে নিতে চাইছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। উৎসবের মরসুম ফুরোনোর মুখে তাই বসছে পার্টি ক্লাসের আসর। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য কমিটির সদস্যদের ডেকে সেই ক্লাসে পাঠ দেওয়ার কথা সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং আর এক পলিটব্যুরো সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের। চার দেওয়ালের মধ্যে এই শিক্ষার আসরের পাশাপাশি কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় ‘বই-ঠেক খানা’ খুলে বইকে সেতু করেই জনসংযোগে বাড়তি নজর দিচ্ছে সিপিএমের যুব ও ছাত্র সংগঠন।
দলীয় সূত্রের খবর, আলিমুদ্দিনেই আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর বসবে সিপিএমের রাজ্য পার্টি ক্লাস। প্রথম দিন সেখানে অর্থনীতির বাস্তবতা এবং বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট। মাদুরাইয়ে বিগত পার্টি কংগ্রেস থেকে যিনি বয়স-নীতি মেনে দলের কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) শতবর্ষের প্রেক্ষিতে তাদের পরিকল্পনা এবং বিভাজনের রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে বলার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের। দ্বিতীয় দিন বাংলার পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক কর্তব্যের বিষয়ে আলোচক শ্রীদীপ। সে দিন থেকেই আলিমুদ্দিনে শুরু দলের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে ভোট এবং এসআইআর-প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা। অর্থাৎ পার্টি ক্লাসে কেতাবি মোড়কে আলোচনা সেরে দলের বৈঠকে যোগ দেবেন রাজ্য কমিটির সদস্যেরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘পার্টি ক্লাস আমাদের নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি কয়েকটি বিষয়ে মতাদর্শগত এবং রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়ার লক্ষে এ বারের ক্লাসের আয়োজন।’’
বাঁকুড়ায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে ‘বইঠকখানা’য় অমিয় পাত্র-সহ নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
এরই পাশাপাশি, ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআইয়ের উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে এখন চলছে বই-কেন্দ্রিক আসর। সচরাচর দুর্গা পুজোর সময়ে সরাসরি দলের কমিটির আয়োজনে বই বিপণি খোলা হয়। আর দীপাবলির সময়ে গণসংগঠন সেই উদ্যোগের দায়িত্বে থাকে। এ বার সিপিএমের যুব ও ছাত্রদের আয়োজনে কোথাও ‘বই-ঠেক খানা’, কোথাও ‘বই-ঠকখানা’, আবার কোথাও ‘বইয়ের স্পেস’ নাম দিয়ে চালানো হচ্ছে বইয়ের বিপণি। শুধু সমাজমাধ্যম আঁকড়ে না-থেকে বইকে সামনে রেখে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোই এমন উদ্যোগের লক্ষ্য। কলকাতার মধ্যে বেহালায় বিমান বসু, আমহার্স্ট স্ট্রিটে সেলিম বা বাঁকুড়ায় অমিয় পাত্রের মতো নেতারা এমন আসরের কোথাও সূচনা করেছেন, কোথাও উপস্থিত হয়ে মত বিনিময় করেছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘নানা ধরনের ভাবনা নিয়ে ছাত্র-যুবরা কাজ করার চেষ্টা করছে। বইয়ের বিপণি মানে শুধু বই বিক্রি করে চলে যাওয়া নয়, মানুষের মনের কাছে পৌঁছনোও— এই কথা মাথায় রাখা হয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)