Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তা চাইছেন আহত শালওয়ালা

গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের পরেই নদিয়ার তাহেরপুরে স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমী’দের মারে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছিল তাঁর রক্তাক্ত, শঙ্কিত ছবিতে।

সে দিন হামলার ঠিক পরে জাভেদ। সামলে ওঠার পরে জাভেদ আহমেদ খান (ডানদিকে)। ফাইল চিত্র

সে দিন হামলার ঠিক পরে জাভেদ। সামলে ওঠার পরে জাভেদ আহমেদ খান (ডানদিকে)। ফাইল চিত্র

সম্রাট চন্দ 
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণের সন্ধ্যায় সূদূর কাশ্মীর থেকে মোবাইলে ভেসে আসছিল এক শালওয়ালার আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশার কথা— ‘‘সবাই যেন নিরাপত্তা পান। সবাই যেন ঠিক মতো নিজের কাজ করতে পারেন। ভারতের সব মানুষ যেন এক সঙ্গে ভাল থাকতে পারেন। নতুন সরকারের কাছে আর কী-ই বা চাওয়ার আছে আমাদের!”

তিনি জাভেদ আহমেদ খান। গত ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা বিস্ফোরণের পরেই নদিয়ার তাহেরপুরে স্বঘোষিত ‘দেশপ্রেমী’দের মারে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছিল তাঁর রক্তাক্ত, শঙ্কিত ছবিতে। প্রশাসনের তরফে তাঁকে উদ্ধার করে কয়েক দিন নিরাপদ, গোপন জায়গায় রাখা হয়। তার পরে তিনি ফিরে যান কাশ্মীরে। এখনও পর্যন্ত আর এ রাজ্যে পা রাখেননি। এরই মধ্যে ভোটের আগে ওই তাহেরপুরেই মোদীর সভায় উপচে পড়েছে জনস্রোত। এবং তুমুল জয় পেয়ে দেশে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি।

মধ্য কাশ্মীরের বদগাম জেলার সাইবাগের বাসিন্দা জাভেদ গত প্রায় দশ বছর ধরে তাহেরপুরে শাল, গরম জামাকাপড় বিক্রি করতে এসেছেন। সঙ্গী ছিলেন ভাই মেহরাজউদ্দিনও। তাহেরপুর বাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। স্থানীয় অনেকের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। তা সত্ত্বেও কাশ্মীরে পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার পরে নিজেদের ভাড়াবাড়িতেই আক্রান্ত হন জাভেদ। পুলিশ নিজে মামলা রুজু করে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে।

তাহেরপুরে বছরভরই ঘরটা ভাড়া নেওয়া থাকত জাভেদের। গরমের সময়ে ফিরতেন কাশ্মীরে নিজের গাঁয়ে। ফের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফিরে আসতেন নদিয়ায়। দীর্ঘদিন এখানে থাকার সুবাদে পারিবারিক বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল অনেকের সঙ্গে। পরিচিত অনেকে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে তাঁদের বাড়িতে থেকেও এসেছেন। জাভেদের আত্মীয়েরা এখানে এসে অনেকের বাড়িতে ঘুরেছেন, খাওয়া-দাওয়া করেছেন। দুর্গাপুজো ও ইদে মিলে-মিশে আনন্দ করেছেন জাভেদ। ফলে ওই হামলার শুধু তাঁর শরীর নয়, মনটাকেও ক্ষতবিক্ষত করেছিল।

এ দিনও টেলিফোনে জাভেদ বলেন, “যে সময়ে হামলা হয়, তার কিছু দিনের মধ্যেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ব্যবসায় ক্ষতিও হয়ে গেল অনেক।” কাশ্মীরেই আপাতত ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি আর ভাই। আবার কবে তাহেরপুরে ফিরবেন? ইতস্তত করে জাভেদ বলেছেন, “দেখা যাক, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়...।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmiri Kashmiri Shawal Vendor Religious Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE