Advertisement
E-Paper

ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে কিডনি-চক্র

বেশ কিছু দিন কিছুটা চুপচাপ থাকার পরে এ রাজ্যে ফের কিডনির এই দালালচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠায় কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, কিডনি চক্রের রমরমা রুখতে নিয়মকানুন এখন কড়া।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ১১:৫০

কেউ দর দিচ্ছেন তিন লক্ষ, কেউ বা পাঁচ লক্ষ। কবে, কোথায় পৌঁছে গেলে কথাবার্তা শুরু হবে, ফোন করলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে কথাও। বলা হচ্ছে, আগে রক্ত ও অন্য পরীক্ষা। তাতে ‘ম্যাচ’ করে গেলে অগ্রিম টাকা দেওয়া হবে। বাকিটা অস্ত্রোপচারের পরে। অস্ত্রোপচার হবে বেসরকারি হাসপাতালে। ‘কিডনি দাতা চাই’ বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানা গেল, এঁরা অনেকেই কিডনি গ্রহীতা বা তাঁর পরিবারের লোক নন। এঁরা দালাল। ‘দাতা’ জোগাড় করে, টাকার হিসেব পাকা করে নিজের মুনাফা বুঝে নেন।

বেশ কিছু দিন কিছুটা চুপচাপ থাকার পরে এ রাজ্যে ফের কিডনির এই দালালচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠায় কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, কিডনি চক্রের রমরমা রুখতে নিয়মকানুন এখন কড়া। কিডনির দালালদের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ থাকায় একাধিক হাসপাতালে প্রতিস্থাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পরে কিছু দিন বিষয়টি নিয়ে আর অভিযোগ আসেনি। এখন ফের কী ভাবে এই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠল, তার দিশা পাচ্ছেন না তাঁরা। গত দু’সপ্তাহে বিভিন্ন সংবাদপত্রে কিডনি চেয়ে যতগুলি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, তাতেও তাঁরা স্তম্ভিত। দফতরের শীর্ষকর্তাদের বক্তব্য, কিডনি কেনাবেচা নিষিদ্ধ। বিজ্ঞাপন দিয়ে এ ভাবে ‘দাতা’ চাওয়ার আড়ালেও যে কেনাবেচাই চলে, তা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। সেই কারণে এই ধরনের বিজ্ঞাপনও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও নিজেদের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে কী ভাবে এই ‘ব্যবসা’ চলছে, কোথা থেকে এরা মদত পাচ্ছে, তা জানতে তৎপরতা শুরু হয়েছে দফতরের অন্দরে। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের সঙ্গেও শীঘ্রই বৈঠক হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।

কিডনি দাতা চেয়ে একটি বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কিডনি দিতে আগ্রহী হিসেবে ফোন করে জানা গেল, গ্রহীতা অন্য রাজ্যের। কিন্তু তিনি অস্ত্রোপচার করাবেন এ রাজ্যে। মোবাইল ফোনটি যিনি ধরেছিলেন তিনি জানালেন, যেহেতু অন্য রাজ্যের ‘কেস’, তাই কিছু ‘ঝুটঝামেলা’ আছে। এই কারণে দামটা বেশিই দেওয়া হবে। কত? ‘‘পাঁচ লক্ষ। তবে আমাদেরও অনেক কাজ করতে হয়। তাই ওর থেকে আমরা কিছু টাকা কেটে নেব।’’ প্রশ্ন করা হল, আপনারা কারা? তাঁর জবাব, ‘‘আমরা একটা এজেন্সি।’’ কত টাকা আপনারা কাটবেন? তাঁর জবাব, ‘‘সেটা সব কিছু ফাইনাল হওয়ার পরে জানাব।’’ দ্বিতীয় একটি নম্বরে, দর পাওয়া গেল তিন লক্ষ। ‘‘পুলিশের কোনও চাপ নেই,’’ পাওয়া গেল সেই আশ্বাসও।

রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন মানুষের মধ্যে থেকে যাঁর সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলছে, তাঁর থেকে কিডনি নেওয়ার কথা। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তা হলে রক্তের সম্পর্ক নেই এমন কারও কাছ থেকে কিডনি নেওয়া যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোন আবেগের কারণে তিনি কিডনি দান করছেন, তা জানাতে হয়। কিডনি দানের অনুমতি পাওয়ার আগে সরকার-গঠিত ‘কিডনি বোর্ড’-এর সদস্যদের যথাযথ অনুমতি নিতে হয়। সরকারি প্রতিনিধিরা দাতার বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর করেন। তার পরে এর মধ্যে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেন নেই, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলে তবেই কিডনি দেওয়া যায়।

স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা অদিতি কিশোর সরকার বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপন দিয়ে তো আর আবেগের সম্পর্কের কাউকে পাওয়া যায় না। এটা পুরোটাই ব্যবসা। সেটা বন্ধ করতেই হবে। সংবাদমাধ্যমকেও এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’’
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘বেশ কিছু ঘটনায় আমরা দেখেছি, চার-পাঁচ লক্ষ, এমনকী ১০ লক্ষও টাকাতেও কিডনি বিক্রি হচ্ছে। যিনি দাতা, তিনি হয়তো বড় জোর পাচ্ছেন এক-দেড় লক্ষ টাকা। বাকিটা পাচ্ছে দালালেরা।’’

কিন্তু কী ভাবে চলছে এটা? তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত থেকে গিয়েছে? অদিতি কিশোরবাবু বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে সতর্ক থাকছি। কোথাও কোনও ফাঁক থাকলে, তা ভরাট করা হবে। সমস্যা হল, যত দিন না ব্রেন ডেথ-এর পরে শরীর থেকে অঙ্গ নেওয়ার বিষয়টি জোরদার ভাবে চালু হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত কিডনির দালালেরা সুযোগ পেলেই দাপাদাপি করবে।’’

Kidney Kidney Racket Crime কিডনি-চক্র Organ Transplant
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy