Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গাড়ি ‘জিততে’ বই কিনুন, ডাক গিল্ডের

দু’টো জামা কিনলে তৃতীয়টা অনেক সময়েই ফ্রি। ফ্ল্যাট বুক করলে ভাগ্যবানেরা অনেক সময় লটারিতে গাড়ির মালিক হন বলেও বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। আসন্ন বইমেলায় অবশ্য ৫০০ টাকার বই কিনলেও আপনি লক্ষাধিক টাকার গাড়ির মালিক হতে পারেন। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে শনিবার এমনটাই জানাল কলকাতার ‘বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ড’।

গৌতম চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০৫
Share: Save:

দু’টো জামা কিনলে তৃতীয়টা অনেক সময়েই ফ্রি। ফ্ল্যাট বুক করলে ভাগ্যবানেরা অনেক সময় লটারিতে গাড়ির মালিক হন বলেও বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। আসন্ন বইমেলায় অবশ্য ৫০০ টাকার বই কিনলেও আপনি লক্ষাধিক টাকার গাড়ির মালিক হতে পারেন। নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে শনিবার এমনটাই জানাল কলকাতার ‘বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ড’। গিল্ডের দুই কর্তা সুধাংশুশেখর দে ও ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, ফি বছর বইমেলায় দর্শনার্থী বাড়লেও বই বিক্রি বাড়ছে না। সেই উদ্বেগ থেকে ব্যবসা বাড়াতে এ বার প্রতিদিন লটারির আয়োজন। রোজই ৫০০ ও তার চেয়ে বেশি টাকার ক্রেতাদের নিয়ে লটারি। আর শেষ দিনে সেই বিজেতাদের নিয়ে মোটরগাড়ি জেতার মেগা-লটারি, মহা ধামাকা!

বইয়ের সঙ্গে গাড়ি দিতে অবশ্য বাধা নেই। বিপণন বিশেষজ্ঞ রাম রে কিংবা বই প্রকাশের ইতিহাসবিদ স্বপন চক্রবর্তী, সকলে একটি বিষয়ে একমত, খদ্দের লক্ষ্মী। তাঁকে ব্যাঙ্কক-পাটায়ায় মুফতে ছুটি বা গাড়ি, যে কোনও উপায়ে বই কিনতে আগ্রহী করা যেতে পারে। কিন্তু দু’জনেই একটি বিষয়ে সন্দিগ্ধ। এই বিজনেস-মডেল আদতে কার্যকরী হবে তো? ইংরেজিতে জনপ্রিয় বইয়ের মাস-প্রোডাকশনে বিভিন্ন প্রকরণ (ফর্ম্যাট) আছে। প্রথমে হার্ড কভার, পরে পেপারব্যাক ইত্যাদি। কিন্তু বাংলায় সেই ফর্ম্যাট, বহুলসংখ্যক মাস-প্রোডাকশন নেই। ‘‘অঙ্কটা মিলছে না। কত দামে কত সংখ্যক বই বিক্রি হলে গাড়ি দেওয়া যায়!’’ বলছেন রাম রে।

কলকাতা বইমেলায় বই বিক্রির অঙ্ক অবশ্য গত সাড়ে তিন দশক ধরেই মেলে না। কত লোকের পায়ের ধুলো পড়ল, সেই ‘ফুটফল’-এর হিসেবে দুনিয়ার বৃহত্তম বইমেলা, অবশ্যই। কিন্তু পদধূলি দেওয়া সেই দর্শকের অধিকাংশ বই কেনার থেকে ফিশফ্রাই, তেলেভাজা খেতে ও টিভি-কুইজের স্টলে ভিড় জমাতে আগ্রহী, এটি সর্বজনবিদিত সত্য। বই বিক্রির অঙ্কে ইংরেজি বই বেশির ভাগ সময়ে বাংলা বইকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কিন্তু গিল্ডকর্তারা আত্মতুষ্টির হাসি হেসেছেন, ‘ইংরেজি বইয়ের দাম বেশি। কিন্তু বাংলা বই সংখ্যায় বেশি বিক্রি।’ যে মেলা বই পড়ানো বা পাঠক তৈরির চেয়ে সাড়ে তিন দশক ঘরে ‘বইয়ের জন্য হাঁটুন’ স্লোগান দিতে বা ‘বই ডাকছে ওই’ গানে বেশি ব্যস্ত থাকে, তার এ রকমই হওয়ার কথা ছিল। ওয়াকিবহাল মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, ফ্লিপকার্ট ইতিমধ্যেই তাদের ই-বই বিক্রি বন্ধের ঘোষণা করেছে। কারণ ই-বইয়ের চেয়ে এ দেশের পাঠক হাতে-ধরা দুই মলাটের বই পড়তে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। গিল্ডকর্তাদের আজকের সাংবাদিক বৈঠক জানাল, কলকাতার ক্ষেত্রে তথ্যটা ঠিক নয়। সেখানে দুই মলাটের বই বিক্রি করতে গেলেও গাড়ির ‘টোপ’ দিতে হয়।

অনেকের মতে, এ রকমই হওয়ার কথা ছিল। তাঁদের হিসেব, পশ্চিমবঙ্গে সারা বছর যত বই বিক্রি হয়, তার সিংহভাগই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের বইমেলায়। গিল্ডের কর্তারা সাড়ে তিন দশক ধরে এতেই খুশি হয়েছেন। বোঝেননি রক্তাল্প শরীরে উজ্জ্বল মুখ আদপে স্বাস্থ্যের লক্ষ্মণ নয়। আনন্দ পাবলিশার্সের সুবীর মিত্র জানাচ্ছেন, ‘‘এক সময় আমরাও চিন্তায় পড়েছিলাম। কিন্তু এখন সারা রাজ্যে আমাদের বিয়াল্লিশটি কাউন্টার। আসল কথা, পাঠক বা ক্রেতার কাছে আপনাকে পৌঁছতেই হবে।’’ কলকাতা বইমেলা সেখানে স্থাণু পর্বত হয়েই বসে আছে, ক্রেতালক্ষ্মীর কাছে পৌঁছয়নি।

বইমেলার উদ্যোক্তাদের কাছে তাই এখন বই মানে রিয়ালিটি শো! শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় হাসছেন, ‘‘গাড়ি তো রিয়ালিটি শো-তে জিতলে দেয় জানি। তা বলে বইমেলায়?’’ বিজয়ী গাড়ি চালিয়ে বাড়ি চলে গেলন, বইগুলি খুলেই দেখলেন না, এমনটা হলে দুঃখ পাবেন লেখক। তাই তাঁর কথা, ‘‘বই দেওয়াই তো ভাল ছিল, লোকের অভ্যাস ফিরত।’’

(সহ-প্রতিবেদন: অনমিত্র সেনগুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata book fair book sale gautam chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE