Advertisement
E-Paper

কলকাতা-দিঘা খুশি, হতাশ বকখালি

এক প্রান্তে উচ্ছ্বাস। অন্য প্রান্তে হতাশা। হুদহুদের দাপটে বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাস দেখতে রবিবার দিঘা ও বকখালি রাজ্যের দুই পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেছিলেন পর্যটকেরা। দিঘার জলোচ্ছ্বাস আনন্দে মাতিয়ে দিল পর্যটকদের। আর শান্ত সমুদ্র দেখে হতাশ হলেন বকখালির পর্যটকেরা। দিন কয়েক ধরেই আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর ছিল, রবিবার দুপুর নাগাদ অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়বে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ।

সুব্রত গুহ ও দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৪

এক প্রান্তে উচ্ছ্বাস। অন্য প্রান্তে হতাশা।

হুদহুদের দাপটে বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাস দেখতে রবিবার দিঘা ও বকখালি রাজ্যের দুই পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেছিলেন পর্যটকেরা। দিঘার জলোচ্ছ্বাস আনন্দে মাতিয়ে দিল পর্যটকদের। আর শান্ত সমুদ্র দেখে হতাশ হলেন বকখালির পর্যটকেরা।

দিন কয়েক ধরেই আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর ছিল, রবিবার দুপুর নাগাদ অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়বে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। দিঘার সমুদ্র উপকূলে সতর্কতা জারি হয়েছিল। শুক্রবার রাত থেকে দিঘা ও সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি চলছিল। শনিবার বিকেলে সমুদ্রে ভাটা থাকায় পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নামার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। শনিবার রাতভর চলে বৃষ্টি।

রবিবার পৌনে ১২টা। তত ক্ষণে অন্ধ্র উপকূলে শক্তি প্রদর্শন করেছে হুদহুদ। আর তার জেরে দিঘায় শুরু হয় প্রবল জলোচ্ছ্বাস। সেই দৃশ্য দেখতে রাস্তায় ঢল নামে পর্যটকের। বোল্ডারে ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের জল ছাপিয়ে যাচ্ছে রাস্তা। ধারে দাঁড়িয়ে সেই জলে ভিজছেন পর্যটক, এমনকী স্থানীয় বাসিন্দারাও। পুলিশি ঘেরাটোপ এড়িয়ে অনেক অত্যুৎসাহী এগিয়ে গিয়েছেন সমুদ্রের দিকে। তাঁদের ঠেকাতে লাঠি উঁচিয়েও ধরতে হয়েছে পুলিশকে। কোনও আতঙ্ক নয়, উল্টে দিঘার জলোচ্ছ্বাস ঘিরে এ ভাবেই মাতলেন লাখখানেক মানুষ।

কলকাতার মানুষ আবার হুদহুদের পরিণাম দেখে স্বস্তি পেয়েছেন। এ দিন মহানগরীতে শুরু হয়েছে ফুটবলের উৎসব। সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার, মাঝে মাঝে বৃষ্টি আশঙ্কা জাগালেও বেলা ১টার পর থেকেই কলকাতার আকাশে উঁকি মারে সূর্য। আর তখনই এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে মহানগরীর আর কোনও ভয় নেই। বিকেলের ফুটবল উৎসবে তাই কোনও ভাটা পড়েনি। আবহাওয়া দফতরের অবশ্য পূর্বাভাস, আজ, সোমবার রাজ্যের উপকূলের জেলাগুলিতে এবং কলকাতাতেও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হবে। তবে দুর্যোগ গতিপথ বদল করে যে আর পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসবে না তা জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা।

যে হুদহুদের প্রভাব এড়াতে পেরে কলকাতা স্বস্তিতে, তারই জেরে সমুদ্র কী আকার নেয় তা দেখার কৌতূহলে বহু পর্যটক ভিড় জমিয়েছিলেন দিঘায়। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “প্রায় এক লক্ষ পর্যটক হাজির হয়েছিলেন দিঘায়। ভিন্ রাজ্য থেকেও হাজির হন অনেকে।”

কলকাতার কসবা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন বছর চল্লিশের মহুয়া কর। তাঁর কথায়, “এমন জলোচ্ছ্বাস দেখব বলেই বাড়ির সকলকে নিয়ে এসেছি।” ভয় করল না? হাসতে হাসতে উত্তর, “কেন কাগজ-টিভি থেকে তো জেনেছি, ঝড় হবে অন্ধ্র আর ওড়িশা উপকূলে। তার প্রভাবে দিঘায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস হবে। ঘরের এত কাছে, আর এটা দেখব না!” তবে মন ভরেনি তারকেশ্বরের প্রদীপ চক্রবর্তীর। বললেন, “ফি বছর “ষাঁড়াষাঁড়ির কোটালে দিঘায় আসি। এই জলোচ্ছ্বাস, সেই কোটালের থেকে বেশি নয়।”

এত পর্যটককে ঠাঁই দিতে নাজেহাল হলেও খুশি দিঘার হোটেল-মালিকরা। তাঁদেরই এক জন সতীনাথ পাল বলেন, “পুজোয় ভাল ভিড় ছিল। হুদহুদের জেরে পুজোর পরও বাজার ভালই হল।” খুশি স্থানীয় দোকানদাররাও।

শঙ্করপুর ও মন্দারমনির সমুদ্রে তেমন জলোচ্ছ্বাস ছিল না। ভিড়ও ছিল দিঘার তুলনায় কম। রবিবার সকাল থেকে সমুদ্র-স্নানে জারি ছিল নিষেধাজ্ঞা। সারা দিন শহরে টহল দিয়েছে পুলিশের গাড়ি। সতর্কবার্তা প্রচার করা হয় মাইকে। দিনের শেষে এসডিপিও (কাঁথি) ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “রবিবার দিঘায় পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ। কোথাও কোনও বিপর্যয় ঘটেনি।” রামনগর-১ ব্লকের বিডিও তমোজিৎ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, “জেলা প্রশাসন প্রস্তুত ছিল। তবে কোনও বিপর্যয় ঘটেনি। চড়ুইভাতির মজায় জলোচ্ছ্বাস উপভোগ করেছেন সকলে।”

এমনই মজা উপভোগ করতে পর্যটকরা এ দিন ভিড় জমিয়েছিলেন বকখালিতেও। তখন সকাল সাড়ে ৮টা। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টিও। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সৈকতে ভিড় করেন পর্যটকরা। চলে পুলিশি টহল। বেলা যত বেড়েছে, সমুদ্র কিছুটা উত্তাল হয়েছে ঠিকই, তবে তা মন ভরায়নি। এ দিনই ভোরে কলকাতার বাঘাযতীন এলাকা থেকে ট্রেনে চার বন্ধুর সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস দেখতে এসেছিলেন রবীন দত্ত। তাঁর কথায়, “পাঁচ বছর আগে আয়লার দিন বকখালিতেই ছিলাম। দেখেছিলাম সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস। এ বার হুদহুদের কথা জানতে পেরে আর ঘরে থাকতে পারিনি।” শনিবার রাতে হাওড়ার সালকিয়া থেকে বকখালিতে এসেছিলেন এক দম্পতি। আশা ছিল, জলোচ্ছ্বাস মন ভরিয়ে দেবে। নিরাশ হতে হয়েছে তাঁদেরও।

hudhud subrata guha dilip nasker tourists state new online state news kolkata digha Bakkhali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy