Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

বিচারপতির মন্তব্যের পর বেআইনি নির্মাণ ভাঙল কলকাতা পুরসভা, তবে ‘যোগীর বুলডোজারে’ নয়

কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়, গত শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ ওই বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট পেয়ে মামলাকারী রানু পালকেও ওই রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।

Kolkata municipal corporation breaks illegal construction after Justice Abhijit Gangopadhyay’s comment

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ১৬:৫৭
Share: Save:

দরকার পড়লে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের থেকে কিছু বুলডোজ়ার ভাড়া করতে হবে। মানিকতলার একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়ে কলকাতা পুরসভার উদ্দেশে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার সেই মামলার শুনানির সময় কলকাতা পুরসভার এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এবং ব্লিডিং বিভাগের ডিজি হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানান, গত ৪ অগস্ট, শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ মানিকতলা থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ওই বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। তবে ‘যোগীর বুলডোজার’ দিয়ে নয়, বেআইনি ওই নির্মাণ ভাঙা হয়েছে পুরসভার যন্ত্রেই। পুরসভা সূত্রে খবর, এই ধরনের যে কোনও নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে বুলডোজার দিয়ে ভাঙা অনেক বেশি সুবিধাজনক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেআইনি নির্মাণটি যে রাস্তার উপরে রয়েছে, তা অত্যন্ত সরু এবং জনবসতিপূর্ণ হওয়ার কারণে ওখানে বুলডোজার নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই পুরসভার যন্ত্রপাতি দিয়েই বেআইনি নির্মাণটি ভাঙা হয় বলেই পুরসভা সূত্রে খবর। শুনানির সময় কলকাতা পুরসভার রিপোর্ট পেয়ে মামলাকারী রানু পালকেও ওই রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ১২১/৪জেড/২ মানিকতলা মেন রোডের বাসিন্দা রানু কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ ছিল, তাঁর পৈতৃক বাড়ি দখল করে বেআইনি নির্মাণ করেছেন এক প্রতিবেশী। ওই প্রতিবেশী কলকাতা পুরসভায় বাড়ি মেরামতের আবেদন করে পাশের ভবনে যাতায়াতের জন্য বেআইনি ভাবে পথ নির্মাণ করেন। পুরসভায় বার বার অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি বলে আদালতে জানিয়েছিলেন মামলাকারী রানু।

মামলাকারীর আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালে প্রথম এই মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। তখন বিচারপতি দেবাংশু বসাক নির্মাণটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সময় আংশিক ভাবে বেআইনি নির্মাণ ভেঙেও দিয়েছিল পুরসভা। তখনকার মতো মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে যায়। কিন্তু মামলাকারীর অভিযোগ ছ’মাস যেতে না যেতেই আবার নতুন করে নির্মাণ শুরু করে ওই প্রতিবেশী পরিবারটি। এ নিয়ে মানিকতলা থানায় অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। পুলিশ এফআইআর দায়ের করেনি বলে অভিযোগ। তাঁর মক্কেলকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন রানুর আইনজীবী।

২০২১ সালে আবার নতুন মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে শুনানির জন্য ওঠে মামলাটি। ওই বছর ২৬ জুন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একাংশ নয়, গোটা ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রতারণা করায় রানুর ওই প্রতিবেশীকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবারটি। ডিভিশন বেঞ্চ জরিমানার অঙ্ক কমিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ বহাল রাখে।

এর পর প্রতিবেশী ওই পরিবার এবং মানিকতলা থানা এত দিনেও আদালতের নির্দেশ কার্যকর না করায় আদালত অবমাননার মামলা করেন মামলাকারী রানু। এর আগে প্রতিবেশী পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। গত ২৮ জুলাই মানিকতলা থানাকেও মামলায় যুক্ত করে আদালত অবমাননার মামলা করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মন্তব্য করেন, কোনও গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। গুন্ডাদের কী ভাবে শায়েস্তা করতে হয় জানা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দরকার পড়লে যোগী আদিত্যনাথের থেকে কিছু বুলডোজ়ার ভাড়া করুন।’’ এর পর বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। মানিকতলা থানাকেও সেই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। সেই নির্দেশ মেনেই বেআইনি নির্মাণটি ভাঙা হয়েছে বলে আদালতে জানাল কলকাতা পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE