Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Arsalan Pervez

৩২ দিনের মধ্যে জাগুয়ার-কাণ্ডের চার্জশিট জমা দিল পুলিশ

এ দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, জাগুয়ারের গাড়িচালক রাঘিব পারভেজ, তার ছোট ভাই আরসালান পারভেজ এবং তাঁদের মামা মহম্মদ হামজার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে।

রাঘিব পারভেজ। ফাইল চিত্র।

রাঘিব পারভেজ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৮
Share: Save:

ঘটনার ৩২ দিনের মধ্যে জাগুয়ার-কাণ্ডের চার্জশিট পেশ করল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বুধবার সিটি মেট্রোপলিটান আদালতে ওই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। গত ১৬ অগস্ট মধ্য রাতে লাউডন স্ট্রিট এবং শেকসপিয়র সরণির সংযোগস্থলে ওই জাগুয়ারটি ধাক্কা মারে একটি মার্সিডিজকে। রাত ১.৫০ মিনিটের ওই ঘটনায়, জাগুয়ারের ধাক্কায় মার্সিডিজটি পাশের পুলিশ কিয়স্কে গিয়ে ধাক্কা দেয়। তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই বাংলাদেশি নাগরিক। মৃত্যু হয় দু’জনেরই।

এ দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, জাগুয়ারের গাড়িচালক রাঘিব পারভেজ, তার ছোট ভাই আরসালান পারভেজ এবং তাঁদের মামা মহম্মদ হামজার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। চালক রাঘিবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (অনিচ্ছাকৃত খুন), ৩০৮ (অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা) সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য পিডিপিপি আইনের ৩ নম্বর ধারা এবং মোটর ভেহিকল অ্যাক্টের ১১৯ এবং ১৭৭ নম্বর ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্য দিকে, আরসালানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ (প্রমাণ লোপাট এবং তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করা) এবং মামা হামজার বিরুদ্ধে ২০১, ২১২ (তথ্য প্রমাণ লোপাট এবং অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়া ও পালাতে সাহায্য করা) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ওই দিন ঘটনার পরেই তদন্তে জানা যায়, জাগুয়ারটি শহরের নামী বিরিয়ানি চেন আরসালানের মালিকের। এর পরই দুপুরে আরসালান পারভেজ গাড়ির চালক হিসাবে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে পরের দিন আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে পায়। কিন্তু আরসালানকে জেরা করতে গিয়েই গোটা তদন্তে নাটকীয় মোড় নেয়।

আরও পড়ুন: রাজীবকে নিজেদের কব্জায় পেতে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতিতে সিবিআই, এল নতুন দল

আরও পড়ুন: ‘আপনি কোনও ভাষা চাপিয়ে দিতে পারেন না’, হিন্দির বিরুদ্ধে এ বার সরব রজনীকান্ত

তদন্তে জানা যায়, ওই রাতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন আরসালানের দাদা রাঘিব। তিনিই ওই রাতে প্রথমে সেন্ট জেমস কলেজ চত্বরে যান। সেখানে এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এর পর সেখান থেকে এক বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শেকসপিয়র সরণি ধরে যাওয়ার পথে একাধিক ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে লাউডন স্ট্রিটে লাল সিগন্যাল অগ্রাহ্য করে এগোতে যায়। সেই সময় লাউডন স্ট্রিট ধরে আসা মার্সিডিজে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ধাক্কা মারে জাগুয়ার।

ঘটনার পরই গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় রাঘিব। ফোন করে মামা হামজাকে। সেই সল্টলেকে রাঘিবকে এক পরিচিতের বাড়িতে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। পরের দিন দুবাইয়ে পালিয়ে যায় রাঘিব। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর বলেন, ‘‘প্রথমেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। জাগুয়ারের চালকের সামনের এয়ার ব্যাগ আমরা খোলা অবস্থায় পাই। অর্থাৎ সংঘর্ষের পরই সেই এয়ার ব্যাগ খুলে গিয়েছিল। তাতে স্পষ্ট যে চালকের ওই ব্যাগের আঘাত লাগবে। কিন্তু আরসালানের ক্ষেত্রে সেই ক্ষত যা চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় সিলিকন বাইট, তা ছিল না।”

পরবর্তীতে পুলিশ আরসালানের বাড়ির সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখেও জানতে পারেন, ওই রাতে ১১ টা নাগাদ গাড়িতে ওঠেন রাঘিব। এর পরই আরসালানের পরিবারকে চাপ দিয়ে রাঘিবকে দেশে ফেরানো হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। তাঁর সঙ্গেই পাকড়াও করা হয় হামজাকে। কারণ মামার সাহায্যেই দুবাই পালিয়েছিলেন রাঘিব। চার্জশিটে আরসালানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে কারণ তিনি রাঘিবের ভূমিকা গোপন করে আত্মসমর্পণ করেন এবং পুলিশকে বিভ্রান্ত করেন নিজেকে গাড়ির চালক বলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE