Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
CBI

রাজীবকে নিজেদের কব্জায় পেতে বিশেষ অভিযানের প্রস্তুতিতে সিবিআই, দিল্লি থেকে এল নতুন দল

বিশেষ সেই অভিযানের জন্য এ ধরনের ‘অপারেশন’-এ অভিজ্ঞতা থাকা সিবিআইয়ের একটি অতিরিক্ত দল ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছে কলকাতার তদন্তকারীদের সঙ্গে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:০১
Share: Save:

রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান রাজীব কুমারকে দ্রুত নিজেদের হেফাজতে পেতে চাইছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁকে হেফাজতে পেতে এ বার ‘বিশেষ অভিযান’-এর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সূত্রের ইঙ্গিত।

বিশেষ সেই অভিযানের জন্য এ ধরনের ‘অপারেশন’-এ অভিজ্ঞতা থাকা সিবিআইয়ের একটি অতিরিক্ত দল ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছে কলকাতার তদন্তকারীদের সঙ্গে। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই দলটির বেশির ভাগ সদস্যই এসেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উত্তরপ্রদেশ ইউনিট থেকে। এর আগে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশে কয়েকটি হাই প্রোফাইল মামলায় অভিযান চালিয়েছে ওই দলটি। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই দলে থাকছেন দু’জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এবং তিন জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক।

চিটফান্ড মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক সিবিআই আধিকারিক বুধবার বলেন, ‘‘নতুন এই দল গঠন থেকেই স্পষ্ট যে নয়াদিল্লির সদর দফতর রাজীব কুমারের বিষয়টি আর ঝুলিয়ে রাখতে চায় না।’’ সূত্রের খবর, সংস্থার লিগাল সেলের শীর্ষ আইনজীবীরা মত দিয়েছেন যে, রাজীব কুমারকে এই মূহূর্তে গ্রেফতার করতে কোনও আইনি বাধা নেই। গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াও রাজীবকে গ্রেফতার করা সম্ভব যত ক্ষণ না তিনি আদালতকে থেকে আগাম জামিন পাচ্ছেন। সিবিআই আধিকারিকদের একটি অংশ এ দিন ইঙ্গিত দেন যে, রাজীবকে আগাম জামিন দেওয়ার অর্থ ফের একটি দীর্ঘমেয়াদি আইনি লড়াই। সেই সুযোগ আদৌ দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একটি বড় অংশ।

আরও পড়ুন: জামিন অধরাই রইল রাজীবের, খোঁজ না পেলে গ্রেফতারি আর্জি জানাতে পারে সিবিআই​

এরই মধ্যে এ দিন সিআইডি-র এক কর্মী রাজীব কুমারের ৩৪ পার্কস্ট্রিটের ফ্ল্যাটে যান বলে সূত্রের খবর। কয়েকটি ফাইল ওই ফ্ল্যাট থেকে নিয়ে বেরোতে দেখা যায় তাঁকে। সূত্রটি জানাচ্ছে, ওই কর্মী এডিজি সিআইডি-র পার্সোনাল অ্যাসিস্টান্ট (পিএ) পদে রয়েছেন। অর্থাৎ বর্তমানে তিনি রাজীব কুমারের পিএ। সিবিআই আধিকারিকদের ইঙ্গিত, রাজীব কুমারের সঙ্গে নবান্নের যোগাযোগ না হলেও, তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ফাইল সংগ্রহর বিষয়টি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

অন্য দিকে, এ দিন সকালেই আলিপুর জেলা আদালতে রাজীবের আগাম জামিনের আবেদন করতে গিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী গোপাল হালদার। কিন্তু বারাসতের আদালত থেকে কেস ডায়েরি না আসায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেননি তিনি। গোপালবাবু বলেন, ‘‘সম্ভবত কালকের আগে আবেদন করা যাবে না।” একই রকম ভাবে আলিপুরে অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানোর সুযোগ পায়নি সিবিআইও। কারণ সে ক্ষেত্রেও কেস ডায়েরি প্রয়োজন।

আইনি জটিলতার এই দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে না গিয়ে সরাসরি রাজীবকে গ্রেফতার করার পক্ষেই মত তদন্তকারীদের একাংশের। সিবিআই সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন কলকাতার যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তব। ‘বিশেষ অভিযান’ চালালে কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন: ১৮ অক্টোবরের মধ্যে অযোধ্যা-শুনানি শেষ করতে চায় সুপ্রিম কোর্ট​

কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত প্রস্তুতি, সেই রাজীব কুমার কোথায়? সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, তাঁদের কাছে রাজীবের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য আছে। যদিও স্পষ্ট করে তাঁরা জানাচ্ছেন না, রাজীব কলকাতাতে না কি অন্য কোথাও। এক সিবিআই আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘নবান্নে ডিজির কাছে রাজীবের যে সমন আমরা পাঠিয়েছিলাম, তা রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবন অর্থাৎ ৩৪ পার্কস্ট্রিটে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নবান্নের পাঠানো চিঠিতে আমরা তেমনটাই জানতে পেরেছি।” ওই আধিকারিকের যুক্তি, নবান্ন নিজেই জানাচ্ছে ছুটিতে থাকা রাজীবের সঙ্গে তাঁদেরও আর যোগাযোগ হয়নি। তার পরেও ওই সমন পার্কস্ট্রিটের বাড়িতে পাঠানো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। একই সঙ্গে ওই আধিকারিকের ইঙ্গিত, ‘‘একটা অভিজ্ঞ টিম যখন কলকাতাতে পাঠানো হচ্ছে, সেটা থেকে তো এটাই স্পষ্ট যে, এই শহরকে কেন্দ্র করেই অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’

তা হলে কি রাজীব কুমার কলকাতাতেই কোথাও ‘গা ঢাকা’ দিয়ে রয়েছেন? কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন মাপের আধিকারিকরা এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ক্রমাগত বাড়ছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। কলকাতার প্রাক্তন কমিশনারের খোঁজে যদি সিবিআই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালায়, সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা কী হবে? তাঁরা কি গত ফেব্রুয়ারি মাসের মতো সরাসরি সংঘাতে যাবেন, না ‘সোজা ব্যাটে’ আইনি পদ্ধতি মেনে চলবেন— তা নিয়েই আড়াআড়ি বিভক্ত পুলিশের একটা বড় অংশ।

সিবিআই আধিকারিকদের ইঙ্গিত, অভিযানের জন্য প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। সদর দফতরকে জানানো হয়েছে পরিকল্পনার খুঁটিনাটি। এর পর শুধু লোদী রোডের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা। এক সিবিআই কর্তার ইঙ্গিত, ‘‘সঙ্কেত সবুজ হবে না লাল, তা জানা যাবে এ দিন সন্ধ্যার পরেই।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE