শহরের বিভিন্ন দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তায় উন্নত প্রযুক্তির সিসি ক্যামেরা বসাবে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। রাস্তায় যানবাহনের গড় গতিবেগ, ভিড়ের বহর এবং দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে ইতিমধ্যেই শহরের দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত সেই সব অংশে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোতেও জোর দিচ্ছে লালবাজার। শ’তিনেক ক্যামেরা বসাতে প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে ধরা হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, পথ-নিরাপত্তা প্রকল্পের অংশ হিসাবে ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক রাস্তা পরিদর্শন করেছেন খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা। দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম ই এম বাইপাসও পরিদর্শন করেছেন তাঁরা। উল্টোডাঙা থেকে দক্ষিণের কামালগাজি পর্যন্ত, বাইপাসের ২১ কিলোমিটার অংশের ১৮টি জায়গা ‘অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, শহরের আরও একাধিক রাস্তার দুর্ঘটনাপ্রবণ অংশ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। মূলত রাস্তায় যানবাহনের গড় গতিবেগের পাশাপাশি ভিড় এবং পথচারীরা কী ভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন, সে সবই খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেখা হয়েছে, গত কয়েক বছরের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান। তারই ভিত্তিতে বাইপাস-সহ শহরের একাধিক রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশে ৩০০টি সিসি ক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়েছে পুলিশের তরফে। সেখানে ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের শর্তও রাখা হয়েছে।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য চিহ্নিত জায়গার মধ্যে ভাঙড়ের মতো এলাকাও আছে। জানা গিয়েছে, ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডে ৪৩টি, বেলেঘাটা ট্র্যাফিক গার্ডে ১৩টি, ভবানীপুর ট্র্যাফিক গার্ডে ১৮টি, ডায়মন্ড হারবার রোড ট্র্যাফিক গার্ডে চারটি, হেড কোয়ার্টার্স ট্র্যাফিক গার্ডে ২৭টি এবং দক্ষিণ ট্র্যাফিক গার্ডের ২২টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত অংশের মধ্যে বাইপাসের ময়লাখাল, বেলেঘাটা কানেক্টর, সল্টলেক স্টেডিয়াম সংলগ্ন অংশ, চিংড়িঘাটা উড়ালপুল, মেট্রোপলিটন, পাটুলি, কালিকাপুরের মতো একাধিক জায়গা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এ জে সি বসু রোড, ডায়মন্ড হারবার রোডের মতো ব্যস্ত রাস্তাতেও ক্যামেরা বসানো হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে সব মিলিয়ে শহরে প্রায় চার হাজার সিসি ক্যামেরা রয়েছে। অপরাধ বা দুর্ঘটনার তদন্তে এই সমস্ত ক্যামেরার সাহায্য নেন পুলিশকর্তারা। গত কয়েক মাসে শহরের একাধিক দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে ক্যামেরার ফুটেজের পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে কোথাও গাড়ির বেপরোয়া গতি, কোথাও আবার পথচারীদের সিগন্যাল না মেনে রাস্তা পেরোনোর প্রবণতাই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। তাই শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে নগরপাল মনোজ বর্মা-সহ পুলিশকর্তারা রাস্তায় পুলিশকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি বাড়ানোর উপরেও জোর দিচ্ছেন। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
বেপরোয়া যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই নজরদারি বাড়ানোর এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পথের নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের তরফে সারা বছর চেষ্টা চলে। সেই সঙ্গে বেপরোয়া চালকদের যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার জন্য বরাবরই ক্যামেরার ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়। রাস্তা নিরাপদ করতে যা যা প্রয়োজন, সবই করা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)