Advertisement
E-Paper

এক ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার, ভেসে গেল দক্ষিণ কলকাতা

মরসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টি। আর তাতেই কার্যত অচল হয়ে পড়ল দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাসল মধ্য কলকাতার একাংশও। সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টির পরে সাদার্ন অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, চেতলা দিয়ে যিনি যে পথেই যেতে গিয়েছেন, জমা জলে আটকে পড়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩২
জলে থইথই রাজপথ। সঙ্গী যানজট। সোমবার বালিগঞ্জ এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ।

জলে থইথই রাজপথ। সঙ্গী যানজট। সোমবার বালিগঞ্জ এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ।

মরসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টি। আর তাতেই কার্যত অচল হয়ে পড়ল দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাসল মধ্য কলকাতার একাংশও।

সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টির পরে সাদার্ন অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, চেতলা দিয়ে যিনি যে পথেই যেতে গিয়েছেন, জমা জলে আটকে পড়েছেন। জল জমে যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, ১৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। এরই মধ্যে ভবানীপুরের রমেশ মিত্র রোডে জলমগ্ন রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক বালকের।

বালিগঞ্জ প্লেস ও কর্নফিল্ড রোড়ের সংযোগস্থলে সন্ধে ছ’টা থেকে প্রায় এক ফুটের উপরে জল জমে যায়। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই রাস্তার মাটির নীচে থাকা ছ’টি বিদ্যুতের কেব্‌ল বিকট শব্দে ফেটে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সিইএসসি কর্মীরা আসেননি। জল তড়িৎবাহী হয়ে রয়েছে কি না, তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। রাত সাড়ে ন’টাতেও জল নামার খবর মেলেনি।

অবিরাম বৃষ্টিতে গাছ পড়ে শর্ট স্ট্রিটের সার্ভে অব ইন্ডিয়া ভবনের পাঁচিলের একাংশ ভেঙে পড়ে। রাস্তায় থাকা সাতটি গাড়ির উপরে গাছ-সহ পাঁচিলটি পড়ে। একটি গাড়িতে আটকে পড়েন চালক। পরে তিনি কোনও মতে বেরোলেও এই ঘটনার জেরে প্রায় তিন ঘণ্টা ওই গাড়ি চলাচল আটকে যায়। পরে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ টালিগঞ্জের সিটিসি বাস ডিপোয় বাস পৌঁছে গেলেও তুমুল বৃষ্টি ও মুহুর্মুহু বজ্রপাত দেখে ৪৫ মিনিট বাসের ভিতরেই বসে থাকেন যাত্রীরা। যানজটের জেরে কী ভাবে বাড়ি পৌঁছবেন, তা নিয়ে আতান্তরে পড়েন বহু যাত্রী। এ দিন মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরছিলেন সেমন্তী মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘কসবা থেকে যোধপুর পার্ক, মাত্র দশ মিনিটের পথ আসতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। তার উপরে লাক্সারি ক্যাবে ভাড়া গুণতে হয়েছে প্রায় চার গুণ।’’ নাকতলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনেও হাঁটুজল জমার খবর মেলে। গড়িয়াহাট উড়ালপুলের উত্তরে ৯ নম্বর বরো অফিসের সামনেও জল জমে যায়।

পুরসভার ৮ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করেন, বৃষ্টিতে ঢাকুরিয়া সংলগ্ন পঞ্চাননতলা, কাঁকুলিয়া রোডের কোথাও কোথাও কোমর-জল উঠে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এখানে যে বৃষ্টি হলে জল জমে, তা পুরসভায় আগেও একাধিক বার জানানো হয়েছে।’’

যদিও মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহের সাফাই, ‘‘ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রাস্তায় জল জমে থাকে। তার বেশি হলে পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয় যে পুরসভার কিছু করার থাকে না।’’ পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন দক্ষিণ কলকাতার বহু অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১০০-১০৫ মিলিমিটার।

ফেসবুকের পোস্টেও সোমবার ছিল দেদার কটাক্ষ। জলমগ্ন রুবি মোড়ের ছবি শেয়ার করে শতদ্রু সেন লিখেছেন, ‘‘সবে নৌকায় উঠলাম। ডুবব না ভাসব জানি না।’’ সৌম্য সাহার পোস্ট, ‘‘মনে হচ্ছে বাড়িটা ভেনিসে।’’ জল জমার খবর পেয়েই পুরসভার কন্ট্রোল রুমে যান মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ, নিকাশি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল ও অন্য আধিকারিকেরা। তারকবাবু বলেন, ‘‘শহরের সব ক’টি পাম্পিং স্টেশন সচল রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

অন্য দিকে, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পুরসভা জল জমা সমস্যার মোকাবিলা করতে সব রকমের ব্যবস্থা নিয়েছে। কোথাও জল না নামলে পুরসভার একটি বিশেষ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

Heavy Rain Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy