Advertisement
E-Paper

ট্রাম্প-নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠল শিল্প

ছবি আর ভাস্কর্যের প্রদর্শনী? নাকি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন-নীতির বিরুদ্ধে জার্মানির ধিক্কার?প্রশ্নটা উঠছে এই কলকাতা শহরের এক শিল্প-প্রদর্শনীতে। সিমা গ্যালারির উদ্যোগে, কলকাতা আর্ট ফেস্টিভ্যালে এ বার জার্মানির ‘ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স’ নিয়ে এসেছে ১১ জন জার্মান শিল্পীর কাজ।

গৌতম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৪
দর্শনীয়: সেই প্রদর্শনী থেকে।

দর্শনীয়: সেই প্রদর্শনী থেকে।

ছবি আর ভাস্কর্যের প্রদর্শনী? নাকি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন-নীতির বিরুদ্ধে জার্মানির ধিক্কার?

প্রশ্নটা উঠছে এই কলকাতা শহরের এক শিল্প-প্রদর্শনীতে। সিমা গ্যালারির উদ্যোগে, কলকাতা আর্ট ফেস্টিভ্যালে এ বার জার্মানির ‘ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স’ নিয়ে এসেছে ১১ জন জার্মান শিল্পীর কাজ। তাঁরা কেউই অবশ্য খাঁটি জার্মান নন। কেউ ব্রিটেন, কেউ দক্ষিণ আফ্রিকা, কেউ আবার দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্মেছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকেই তাঁদের শিল্পচর্চার কর্মভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষের বিধ্বস্ত জার্মানিকে।

পাঁচিল তোলা, শিবির বিভাজনের সেই বিধ্বস্ত দুই জার্মানি আজ অতীত। শিল্পীরা কেউ বাসা বেঁধেছিলেন বার্লিনে, কেউ বন শহরে। ‘‘এটা তখনকার পরিস্থিতি। শিল্পীরা তাঁদের রাজনৈতিক পছন্দ অনুসারে বেছে নিয়েছিলেন কে কোথায় কাজ করবেন। কিন্তু শেষ অবধি তাঁরা জার্মানিরই গৌরব’’— জানাচ্ছেন প্রদর্শনীর কিউরেটর উরসুলা জেলার। এই শহরে জাতীয় গ্রন্থাগারের পুরনো বাড়িতে সেই সব ভাস্কর্য সাজিয়ে ফের স্বদেশে ফিরে গিয়েছেন তিনি। পাঁচিল তা হলে টেকে না? বেআইনি অভিবাসী আটকাতে মেক্সিকো সীমান্তে যতই কংক্রিটের দেওয়াল তোলার পরিকল্পনা করুন ডোনাল্ড ট্রাম্প, কলকাতার প্রদর্শনী দেখাচ্ছে, সব পাঁচিলই শেষ পর্যন্ত ক্ষয়ে যায়।

প্রদর্শনীতেই আছে সাবেক চেকোস্লোভাকিয়ার মেয়ে মাগদালেনা জোটলোভার তৈরি এক চিত্রময় ভাস্কর্য: দ্য আটলান্টিক ওয়াল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে হিটলারের বাহিনী অতলান্তিক মহাসাগরের উপকূল ধরে নরওয়ে থেকে স্পেন পর্যন্ত গড়ে তুলেছিল পাথুরে প্রাচীর ও বাঙ্কার। তারই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাদা-কালো ফোটোগ্রাফে পরপর দশটি কার্ড। কোথাও সন্ধ্যার আধো-অন্ধকারে জোয়ারের জলে ডুবে যাচ্ছে সেই পরিত্যক্ত দেওয়াল, আঁকাবাঁকা অক্ষরে ছড়িয়ে পড়ছে লেখা: ‘ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অব ব্যাট্লগ্রাউন্ড’। ঔপন্যাসিক মিলান কুন্দেরার দেশের মেয়ে কি পৃথিবীর শক্তিমান রাষ্ট্রের কর্ণধারকেও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, চিন সমুদ্রে যুদ্ধের হুমকিও চিরস্থায়ী নয়? এক দিন তা পরিত্যক্ত হতে পারে ইতিহাসের প্রলয়পয়োধি জলে?

প্রদর্শনীর এক প্রান্তে রয়েছে তুরস্কে জন্মানো শিল্পী এয়সি আর্কম্যানের কাজ। ভার্নিশড ইস্পাতে তৈরি হাল্কা হলুদ, নীল রঙের কয়েকটি আলাদা কিউব। নির্দিষ্ট কাঠামো নেই, ঘরের আয়তন অনুযায়ী যে ভাবে খুশি, শিল্পী সাজিয়ে রাখতে পারেন ব্লকগুলি। কখনও রেললাইনের মতো সোজা, কখনও বা মালার মতো, কখনও লকেটের মতো। তথাকথিত ‘পোস্ট ট্রুথ’-এর এই দুনিয়ায় সত্যও কি নয় এমনই নমনীয় ভাবে সাজানো কিছু কাঠের ব্লক? নেতা-অভিবাসীদের বিরুদ্ধে, ভিন্‌ ধর্মের বিরুদ্ধে মনগড়া যা কিছু বলবেন, টুইটার-ফেসবুকে সেটিই তো ধ্রুব বলে মেনে নেবে লোকে! যেমন-খুশি ব্লক সাজানোর এই ‘পোস্ট-ট্রুথ’ তো শুধু ইউরোপ, আমেরিকায় আটকে নেই। হাল আমলের ভারতেও সে সর্বশক্তিমান।

এই পোস্ট-ট্রুথের বাহন কে? ফেসবুক, মিডিয়া। প্রদর্শনীতেই আছে কোরীয়-জার্মান নাম জুন পাইকের কাজ। ক্যাবিনেটে রাখা তিনটে টিভি সেট। উপরে চারটে ভিডিও ক্যামেরার খোল। দু’পাশে দু’টি পোলারয়েড ক্যামেরা। নীচে বেয়নেটের মতো উঁচিয়ে মাইক্রোস্কোপের নল। জীবাণু-যুদ্ধের হুঙ্কারে ব্যতিব্যস্ত পৃথিবীতে অণুবীক্ষণের নলও তো অস্ত্র।

ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সফর সেরে প্রদর্শনীটি এই প্রথম বার ভারতে, ‘কলকাতা আর্ট ফেস্টিভ্যাল’-এর অঙ্গ হিসেবে। চলবে আগামী শনিবার, ৪ মার্চ পর্যন্ত। তার মধ্যেই কি রাজনীতি-সচেতন শহরের উচিত এক বার এই প্রদর্শনী ঘুরে যাওয়া? হাসছেন ম্যাক্স মুলার ভবন-গ্যেটে ইনস্টিটিউটের কমিউনিকেশন্স অফিসার শরণ্য চট্টোপাধ্যায়: ‘‘প্রদর্শনীটা প্রথম কিউরেট করা হয়েছিল ২০১১ সালে। তখন ট্রাম্প, ব্রেক্সিট কিছুই ঘটেনি।’’

শিল্পের জয় এখানেই। এই ভঙ্গুর পৃথিবীতেও সে নিরুচ্চারে অনেক কথা জানায়। কখনও তাকে ভবিষ্যদ্বাণী মনে হয়, কখনও বা প্রতিবাদ!

German Painters Exhibition Kolkata Art Festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy