Advertisement
E-Paper

পাওনা ১৭০ কোটি, হাওড়ায় বকেয়া কাজে নারাজ ঠিকাদারেরা

ঠিকাদার সংগঠন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাস্তাঘাট মেরামতি-সহ নিকাশি সংস্কারের কোনও কাজে তারা হাত দেবে না।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩৬
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

পাঁচ বছর ধরে হাওড়া পুরসভার ঠিকাদারদের পাওনা প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। তাই বর্ষার পরেও বেহাল রাস্তাঘাটের মেরামতি-সহ কোনও উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিতে পারছে না পুরসভা। কারণ পুরসভার ঠিকাদার সংগঠন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাস্তাঘাট মেরামতি-সহ নিকাশি সংস্কারের কোনও কাজে তারা হাত দেবে না। পুরসভার ঠিকাদারদের সংগঠন ‘এইচএমসি কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুরসভার প্রায় ১০০ জন ঠিকাদার পাঁচ বছর ধরে বকেয়া টাকা পাচ্ছেন না। বকেয়া টাকা না পেলে কোনও কাজ তাঁরা করবেন না।

২০১৩ সালে পুরসভায় তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে হাওড়া জুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কার, অলিগলি-মাঠে ত্রিফলা আলো থেকে শুরু করে হাইমাস্ট আলোয় ভাসিয়ে দেওয়া হয় হাওড়া পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডেই। কিন্তু অভিযোগ, তার পর থেকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে ১০ বছর আগের পুরনো হাওড়া ফিরে আসে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ২০১৮ সালের পর থেকে পুরসভায় কোনও নির্বাচিত বোর্ড না থাকায়।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় যেমন কমেছে, তেমনই প্রায় সাত হাজার অস্থায়ী চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের বেতন দিতে গিয়ে পুরসভার কোষাগারের ঘাটতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের থেকে অর্থ সাহায্য প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে পুর প্রশাসন।

সব থেকে কঠিন সমস্যা হয়ে গিয়েছে শহরের উন্নয়নমূলক কাজ তড়িঘড়ি করতে গিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই কোটি কোটি টাকার কাজ হয়ে গেলেও যে সব ঠিকাদার সংস্থা নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে কাজ করেছিল, সেই সংস্থাগুলি আর টাকা ফেরত পাচ্ছে না। ফলে বকেয়া টাকা পাহাড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরসভার অর্থ দফতর সূত্রের খবর, সড়ক দফতরের সরকারি অনুমোদন মিলেছে কিন্তু এখনও বকেয়া রয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। একই ভাবে দরপত্র ডাকা হয়েছে অথচ ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই কাজ হয়েছে ২৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই কাজ হয়েছে সাড়ে সাত কোটি টাকার। ২০১৮-’১৯ সালে পুজোর আগে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামতির কাজ হয়েছে সাড়ে ৫ কোটি টাকার। এই সমস্ত টাকা বকেয়া রয়েছে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য দফতর ও রাস্তাঘাট মিলিয়ে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা-সহ বালির রবীন্দ্র সরণি মেরামতি ও জলের পাইপ লাইন বসানো নিয়ে বকেয়া রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু রাস্তা মেরামতির জন্যই পুরসভার কাছে ঠিকাদারদের বকেয়া রয়েছে ৩০ কোটি এবং গ্রিন সিটি প্রকল্পে পাওনা রয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা।

পুরসভার ‘কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কাশীনাথ দাস জানান, ঠিকাদারেরা টাকা না পাওয়ায় অনেকে পেশা পাল্টে মুদিখানা বা তেলেভাজার দোকান করেছেন। পাওনাদারদের জ্বালায় তাঁরাও অতিষ্ঠ। এর পরে তো তাঁরা না খেতে পেয়ে মরবেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। বকেয়া অর্থ না পেলে আমরা নির্বাচনের আগে রাস্তা মেরামত থেকে যাবতীয় উন্নয়নমূলক কোনও কাজ করব না। তাতে যা হওয়ার হবে।’’

এক পুরকর্তা বলছেন, ‘‘পুরসভার কোষাগারের অবস্থা শোচনীয়। এই অবস্থায় এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ধীরে ধীরে সমস্ত টাকাই মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

Contractors Crores Money due Howrah Municipal Corporation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy