যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পরে তিন যুবক চেয়েছিলেন একটি ‘সিকিয়োরিটি ডিভাইজ়’ বানাতে। অবশেষে সেই কাজ শেষ হয়েছে। তবে তত দিনে শহর কলকাতাকে সাক্ষী থাকতে হয়েছে আরও একটি মৃত্যুর।
কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি প্রযুক্তি সংস্থার তিন উচ্চপদস্থ কর্মীর চেষ্টায় তৈরি হয়েছে একটি অ্যাপ। উদ্ভাবকদের দাবি, শুধু ঝাঁকুনি অনুভব করলেই বিপদের বার্তা পৌঁছে যাবে পুলিশ থেকে শুরু করে কাছের মানুষের কাছে। আপাতত ডিভাইজ়টি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে।
কী ভাবে বিপদ মাপবে এই নতুন অ্যাপ? উদ্ভাবকদের দাবি, এই অ্যাপ ‘প্লে স্টোর’ কিংবা ‘অ্যাপল স্টোর’ থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করা যেতে পারে। সেই অ্যাপ খোলা মাত্র মোবাইলের ‘লোকেশন’ চালু হয়ে যাবে। ‘ব্লু-টুথে’র সঙ্গে সংযোগ করা থাকলে ৪০ মিটার পর্যন্ত বিপদের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র মোবাইলে ঝাঁকুনি তৈরি হবে। সেই সঙ্গেই মোবাইল ফোন বার করলেই ফ্রন্ট এবং ব্যাক ক্যামেরায় ভিডিয়ো এবং অডিও রেকর্ড হয়ে তা হোয়াটসঅ্যাপ মারফত পৌঁছে যাবে আগে থেকে বেছে রাখা পাঁচটি নম্বরে। এই পাঁচটি নম্বরের মধ্যে প্রিয়জন ছাড়াও যাতে পুলিশের নম্বর রাখা যায়, সেই অনুমতি চেয়েও রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও লালবাজারে মেল
পাঠানো হয়েছে।
উদ্ভাবকদের দাবি, দুষ্কৃতীরা যদি মোবাইল ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ারও চেষ্টা করে, তা হলে সেই ঝাঁকুনি থেকেও একই প্রক্রিয়ায় বিপদ বার্তা এবং ‘লোকেশন’ পৌঁছে যাবে ওই পাঁচ নম্বরে। ওই অ্যাপের সঙ্গে সংযোগ করা একটি ‘কি রিং’ থাকবে ব্যবহারকারীদের পকেটে। মোবাইল বার করা সম্ভব না-হলেও ওই ‘কি রিং’য়ের মধ্যে থাকা বোতাম টিপলেও বিপদ বার্তা এবং ‘লোকেশন’ পৌঁছে যাবে ওই পাঁচটি নম্বরে।
ওই অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত করা বাড়িতেও একটি বিপদঘণ্টা যুক্ত ‘বাল্ব’ রাখা থাকবে। বিপদ-বার্তা আসা মাত্র সেই আলো জ্বলে উঠবে এবং বিপদঘণ্টা বেজে উঠবে। উদ্ভাবকেরা জানিয়েছেন, এই অ্যাপের কার্যকারিতা শুধু বিপদ-বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই নয়, প্রমাণ মজুত রাখা। তবে কোনও কারণে যদি মোবাইল থেকে ছবি, ভিডিয়ো কিংবা অডিও মুছে যায়, তা হলেও অ্যাপ পোর্টালে গিয়ে নির্দিষ্ট ফোনের ‘ইউজ়ার আইডি’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে ‘লগ-ইন’ করলে ওই ছবি, ভিডিয়ো এবং অডিও স্থান, কাল-সহ পাওয়া যাবে।
উদ্ভাবকদের মধ্যে ইন্দ্রনীল দাস নিজে ওই সংস্থার প্রযুক্তি বিশারদ। এ ছাড়াও উদ্ভাবক দলে থাকা অয়ন বাগ সংস্থার মুখ্য প্রযুক্তি আধিকারিক এবং শঙ্খদীপ ঘোষ এক জন ‘অ্যাপ ডেভলপার’। ইন্দ্রনীল বলেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পরেই আমরা ‘অ্যান্টি র্যাগিং কিট’ তৈরির চেষ্টায় ছিলাম। খারাপ লাগছে যে, আর জি করের ঘটনা যখন ঘটল, তখন আমরা কাজটা প্রায় শেষ করে এনেছিলাম। গত ১৪ অগস্ট আমাদের কাজ শেষ হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “আর জি কর-কাণ্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, প্রমাণ সংরক্ষণ করা এই ধরনের ঘটনায় কতটা জরুরি। এই অ্যাপ সেই কাজটি করতে সক্ষম হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
রাজ্য সরকার ‘রাত্রি সাথী’ অ্যাপের ঘোষণা করা সত্ত্বেও নতুন অ্যাপ কেন? ইন্দ্রনীল বলেন, “যে কোনও প্রযুক্তি বিশারদকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলবেন, ‘রাত্রি সাথী’ অ্যাপ পুরোনো আমলের। এক জন বিপদে পড়লে মোবাইল বার করবেন, আনলক করবেন, অ্যাপ খুলবেন, দুষ্কৃতীরা এত সুযোগ দেবে? এই ভাবনা থেকেই এই বিকল্প অ্যাপের নকশা তৈরি করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy