Advertisement
E-Paper

জয়পুরিয়ায় পদত্যাগ চার শিক্ষকের

কলেজ সূত্রের খবর, এ বছর বাণিজ্য বিভাগের প্রথম সিমেস্টারে প্রাত, দিবা ও সান্ধ্য বিভাগে অনার্স ও জেনারেলে প্রায় ৬৫৫ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তার মধ্যে অনার্স ও জেনারেলে মোট ১৩৪ জনের ৬০ শতাংশ উপস্থিতি নেই।

সুপ্রিয় তরফদার ও জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪২
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

উপস্থিতির হার পর্যাপ্ত না থাকা সত্ত্বেও বাছাই করা পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ। আর তার প্রতিবাদেই নজিরবিহীন ভাবে পদত্যাগ করলেন প্রাত ও সান্ধ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা (শিফ্‌ট ইনচার্জ) দু’জন শিক্ষক এবং দু’জন বিভাগীয় প্রধান। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর কলকাতার শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজে। ওই চার জন জানিয়েছেন, কলেজে শিক্ষক হিসেবে থাকলেও আর কোনও দায়িত্বে থাকতে চান না তাঁরা। এই ঘটনার জেরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে শিক্ষা মহলে।

দক্ষিণ কলকাতার দেশবন্ধু কলেজ ফর গার্লসে উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশ না থাকায় বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক স্তরের প্রথম সিমেস্টারে ১০৭ জনের মধ্যে ৮৯ জন ছাত্রীকেই পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রবল গোলমাল হয়। শিক্ষক-নিগ্রহ থেকে শুরু করে ভাঙচুরও চলে। কিন্তু একই শহরের অন্য একটি কলেজের কর্তৃপক্ষ সেই পথে কেন হাঁটতে পারলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই কলেজের শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, যেখানে খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হাজিরার বিষয়ে কড়া হতে বলেছেন, সেখানে কেন আপস করলেন অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়? এই ঘটনার প্রতিবাদে যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁরা হলেন প্রাতর্বিভাগের শিফ্‌ট ইনচার্জ মৌ চট্টোপাধ্যায়, সান্ধ্য বিভাগের শিফ্‌ট ইনচার্জ অনিল সাহা এবং প্রাত ও দিবা বিভাগে বাণিজ্যের দুই বিভাগীয় প্রধান শান্তা দত্ত ও রাধানাথ পাইন।

কলেজ সূত্রের খবর, এ বছর বাণিজ্য বিভাগের প্রথম সিমেস্টারে প্রাত, দিবা ও সান্ধ্য বিভাগে অনার্স ও জেনারেলে প্রায় ৬৫৫ জন পড়ুয়া রয়েছেন। তার মধ্যে অনার্স ও জেনারেলে মোট ১৩৪ জনের ৬০ শতাংশ উপস্থিতি নেই। গত ২০ ডিসেম্বর এই পর্যন্ত তালিকা তৈরি করেছিলেন বিভাগীয় প্রধান এবং প্রাত, দিবা ও সান্ধ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা। কিন্তু ওই দিন কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় ওই ১৩৪ জনের মধ্যে থেকে শুধু সান্ধ্য বিভাগের ৩২ জনকে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেন। শিক্ষকেরা জানান, যে নিয়ম খোদ উপাচার্য অমান্য করতে পারেন না, সেটা কী ভাবে করলেন অধ্যক্ষ?

অধ্যক্ষের যুক্তি, চলতি শিক্ষাবর্ষে ওই কলেজে বারবার গোলমাল বেধেছে, ঘটেছে রক্তারক্তি কাণ্ড। তাই বহু অভিভাবক সন্ধ্যায় তাঁদের সন্তানদের কলেজে পাঠাননি। তাই দেখা গিয়েছে, শুধু ওই বিভাগ থেকেই ১১৩ জনের ৬০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল না।

তিনি জানান, ১৩৪ জন নয়, ১৯৬ জনকে আটকানো হয়েছিল। তার মধ্যে সান্ধ্য বিভাগের ৩২ জনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, তাঁদের উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশ। অশোকবাবু বলেন, ‘‘যারা ৫০ শতাংশ দিনে আসতে পারে, তারা ৬০ শতাংশ দিনেও আসতে পারত। কিন্তু কলেজে গোলমালের জেরে তাদের উপস্থিতির হার কমে গিয়েছে। তাই ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে।’’

এক দিকে পড়ুয়াদের তরফে চাপ, অন্য দিকে শিক্ষকদের তরফে চরম অসহযোগিতাও এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে একটা কারণ বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামছে না। কারণ, কলেজ গোলমালমুক্ত রাখার দায় বর্তায় কর্তৃপক্ষের উপরেই। তা হলে কি এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ছাত্রদের উপরে রাশ টানতে পারেননি তাঁরা?

সান্ধ্য বিভাগের শিফ্‌ট ইনচার্জ অনিলবাবু বলেন, ‘‘শুধু সান্ধ্য বিভাগের ৩২ জনকে ছাড় দেওয়ার ফলে অন্য পড়ুয়াদের প্রতি অবিচার করা হল। এটা মেনে নিতে পারিনি। তাই পদত্যাগ করলাম।’’ দিবা বিভাগে বাণিজ্যের বিভাগীয় প্রধান রাধানাথবাবু বলেন, ‘‘একে নিয়ম অমান্য করা হল। অন্য দিকে, বাছাই করা পড়ুয়াকে সুবিধাও পাইয়ে দেওয়া হল। তাই ভেবেছি, এ সবের মধ্যে না থাকাই ভাল।’’

ছাত্রদের মধ্যে গোলমালের জন্যই যে কলেজের পঠনপাঠনে বিঘ্ন ঘটছে, এ দিন অধ্যক্ষ তা-ও পরোক্ষে স্বীকার করে নিলেন। সম্প্রতি পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে পড়ুয়ারা যখন তাঁকে ঘেরাও করেছিলেন, সে সময়ে তাঁর পাশে কোনও শিক্ষক ছিলেন না বলেই দাবি অশোকবাবুর। তাই কিছুটা চাপের মুখে পড়েই এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি তাঁর। কিন্তু এর ফলে সমাজে যে উল্টো বার্তা গেল, সেটাও একযোগে মানছেন সকলেই। শিক্ষা মহলের প্রশ্ন, দেশবন্ধু কলেজ ফর গার্লস যদি ১০৭ জন ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিতির হার পর্যাপ্ত না থাকায় ৮৯ জনকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি না দিতে পারে, তা হলে জয়পুরিয়া তা পারবে না কেন?

শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ Seth Anandram Jaipuria College Jaipuria College
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy