Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গাড়ির আসনে লুকোনো হেরোইন, ধৃত ১

মাদক পাচারের খবর ছিল আগেই। সেই মতো গাড়ি-সহ সন্দেহভাজনকে পাকড়াও-ও করা হয়েছিল। কিন্তু খোঁজ মিলছিল না মাদকেরই। হঠাৎই এক গোয়েন্দা অফিসারের নজরে পড়ল গাড়ির পিছনের সিট। সিট কভারের সেলাইটা কেমন যেন ঠেকছে!

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৫
Share: Save:

মাদক পাচারের খবর ছিল আগেই। সেই মতো গাড়ি-সহ সন্দেহভাজনকে পাকড়াও-ও করা হয়েছিল। কিন্তু খোঁজ মিলছিল না মাদকেরই। হঠাৎই এক গোয়েন্দা অফিসারের নজরে পড়ল গাড়ির পিছনের সিট। সিট কভারের সেলাইটা কেমন যেন ঠেকছে! সিট কভারের সেলাই টেনে ছিঁড়তেই বেরিয়ে এল ছোট ছোট প্যাকেট ভর্তি হেরোইন।

লালবাজার সূত্রের খবর, শুক্রবার ভোরে এমনই কায়দায় মাদক পাচার ধরেছে পুলিশ। বমাল গ্রেফতার হয়েছে পাচারকারী। গোয়েন্দারাও স্বীকার করছেন, হেরোইন পাচারের এমন কৌশল সাম্প্রতিক কালে দেখেননি তাঁরা। ধৃত মোক্তার আলম ওরফে পিন্টু নামে ওই ব্যবসায়ী আন্তঃরাজ্য মাদক পাচারে যুক্ত বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চলতি বাজারে যার মূল্য ৪০ লক্ষ টাকা বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ সূত্রের খবর, পিন্টু প্রচুর পরিমাণে হেরোইন নিয়ে আসছে বলে খবর পেয়েছিলেন লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখার অফিসারেরা। এ-ও জেনেছিলেন, খিদিরপুর এলাকার একটি স্কুলের দারোয়ানের কাছে ওই মাদক পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই মতো ওই স্কুলের কাছাকাছি ওত পেতে দাঁড়িয়েছিলেন গোয়েন্দা অফিসারেরা। একটি এসইউভি গাড়ি নিয়ে পিন্টু আসতেই তাকে পাকড়াও করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, পিন্টু আগে খিদিরপুর এলাকায় থাকত। ইদানীং মহেশতলা এলাকায় নতুন ঘাঁটি গেড়েছে সে। পিন্টু যে বড় পরিমাণে হেরোইন এ রাজ্যে নিয়ে এসেছে, সে ব্যাপারে পুজোর আগেই খবর ছিল। তার পর থেকেই পিন্টুর গতিবিধি নজরে রাখছিলেন গোয়েন্দারা।

শুক্রবারই আলিপুর আদালতে পিন্টুকে হাজির করিয়ে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে লালবাজারের নার্কোটিক্স শাখা। গোয়েন্দারা ধৃতকে জেরা করে জেনেছেন, রাজস্থান থেকে বিহারের সাসারাম হয়ে ট্রেনে করে এই রাজ্যে ঢুকছেমাদক। মহেশতলা এলাকার বিভিন্ন ঠেকে জড়ো হওয়ার পরে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে খিদিরপুর-সহ শহরের বিভিন্ন নেশার ঠেকে। লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, রাজস্থানে পিন্টুর এক আত্মীয় থাকে। সে হেরোইন বিহারের সাসারামের সব থেকে বড় মাদক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেয়। কার কাছে?

পুলিশের এক অফিসার বলছেন, ‘‘সাসারামের সব থেকে বড় মাদক ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করেছে পিন্টু। তাই পিন্টুর শ্বশুরই রাজস্থান ও কলকাতার হেরোইন পাচারের যোগসূত্র।’’ পুলিশের দাবি, পিন্টুর শ্বশুরবাড়িতে হেরোইন ছোট ছোট প্যাকেটে ভরা হয়। সেখানে গিয়ে পিন্টু প্যাকেট ভর্তি হেরোইন নিয়ে আসে। সে কোনও সময়ে বিহারে যেতে না পারলে শ্বশুরই লোক দিয়ে হেরোইন পৌঁছে দেন জামাইয়ের কাছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, এর পরে রেলপথে হাওড়ায় আসে হেরোইন। তবে সরাসরি রাস্তা ধরে হেরোইন আনা হয় না। সেই মতোই স্টেশন চত্বর থেকে হেরোইন চলে যায় দক্ষিণ হাওড়ার বিভিন্ন ঠেকে। রাতের অন্ধকারে সে সব হেরোইন গঙ্গা পেরিয়ে চলে আসে মহেশতলা এলাকায় পিন্টুর ডেরায়। তার পরে সড়কপথে বিভিন্ন ঠেকে চালান করা হয়।

লালবাজারের এক গোয়েন্দা অফিসার বলছেন, উৎসবের মরসুমে রাস্তাঘাটে পুলিশের নজরদারি থাকবে— এটা আঁচ করেই সিট কভারের তলায় হেরোইন লুকিয়ে রেখেছিল পিন্টু।

লালবাজার সূত্রে খবর, শুক্রবারই ক্রাইম বৈঠকে শহরে মাদক ব্যবসার রমরমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। গোয়েন্দারাও বলছেন, সিপি-র উদ্বেগ যে মিথ্যা নয়, পিন্টুর গ্রেফতারেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। গোয়েন্দা অফিসারদের দাবি, এ শহরে পিন্টুর শাগরেদদের খোঁজ চলছে। পাশাপাশি, নিমতলা ঘাট-সহ উত্তর কলকাতার যে সব এলাকায় মাদকের ঠেক রয়েছে, সেগুলিতেও ধরপাকড় চলছে। গ্রেফতার হয়েছে বেশ কয়েক জন মাদক ব্যবসায়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

heroin khidirpur heroin seized
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE