Advertisement
E-Paper

‘আন্টি’র ফ্ল্যাটের সামনে যেতেই গোঙানির শব্দ, তার পর…

গোয়েন্দাদের দৃঢ় ধারণা, ওই ছাত্রী ডোরবেল বাজানোর সময়ে ভিতরেই ছিল আততায়ী। পরে সে দরজা টেনে পালিয়ে যায়। পাঁচ বছরেও তার হদিস মেলেনি।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০৪:৪৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তোলপাড় ফেলে দেওয়া হত্যাকাণ্ড। তবে অভিযুক্ত ধরা পড়েনি এখনও। পুরনো মামলাকে নতুন করে দেখা।

রবিবারের বিকেল। কসবা বেদিয়াডাঙা সেকেন্ড লেনের লোকনাথ আবাসনের তেতলার ফ্ল্যাটে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক কিশোরী। দেশপ্রিয় পার্কের ন্যাশনাল গার্লস হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুলোচনা চারির ফ্ল্যাটে ফি-বিকেলে ইংরেজি পড়তে যেত ক্লাস নাইনের ওই ছাত্রী। সে-দিনের ঘটনার কথা পুলিশকে বলার সময়ে কেঁপে-কেঁপে উঠছিল মেয়েটি।

২০১৩-র ৭ জুলাই। ডোরবেল বাজাতেও সাড়া না-মেলায় ‘সুলোচনা আন্টি’কে একবার ফোন করেছিল মেয়েটা। কেউ ধরেনি। পরে আর বাজলই না সে-ফোন। ভিতর থেকে এর পরেই গোঙানি! ফ্ল্যাটের দরজার বাইরে এক জোড়া ক্ষয়ে যাওয়া হাওয়াই চটিও দেখেছিল মেয়েটি। কিন্তু গোঙানি শুনে আর সাহস করে দাঁড়ায়নি। তবে বাড়ি ফিরে মাকে সব বলে সে। তিনি সুলোচনাদেবীর ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী শান্তি রঘুপতিকে সব জানান। শান্তির কাছে থাকত ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি। কিছুক্ষণ পর এক প্রতিবেশীকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে প্রৌঢ়া শান্তি দেখেন, ফ্ল্যাটের একলা বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা, সুলোচনা পড়ে রয়েছেন রক্তাক্ত অবস্থায়।

খবর পেয়েই পৌঁছেছিল পুলিশ। গোটা ফ্ল্যাট লন্ডভন্ড। বৃদ্ধার দেহ দেখে মনে হয়েছিল, কাঁচা হাতের কাজ। কোপগুলোও ফলকাটা ছুরির ঘা! তা ছাড়া, দেওয়ালে রক্তমাখা হাতের ছাপ। লালবাজারের গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, এই কেসের সহজেই কিনারা হবে! প্রায় ছ’বছর
বাদে তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলছেন, ‘‘ছিটেফোঁটা ‘ক্লু’ও আমরা পাইনি। কোনওদিক থেকেই এ রহস্যভেদ করা আমাদের ক্ষমতায় কুলোয়নি।’’

দেওয়ালের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে বা ফ্ল্যাটের দোরগোড়ায় থাকা হাওয়াই চটির বর্ণনার ভিত্তিতেও সূত্র খোঁজার চেষ্টা হয়। লাভ হয়নি। টাকার লোভে পরিচারিকার হাতে একলা বৃদ্ধা খুনের ছকটাই ধরে নিয়েছিল লালবাজার। সে ধারণা মেলেনি। তবে পাওয়া যায়নি সুলোচনার হাতের একটা আংটি। বৃদ্ধার ঘরে কোথায় কী ছিল, তার স্পষ্ট আভাস পুলিশের কাছে না-থাকলেও ‘মার্ডার ফর গেন’ বা লাভের লোভে খুনের তত্ত্বটাই এখনও আঁকড়ে বসে আছে পুলিশ। কিন্তু ফ্ল্যাট থেকে ঠিক কী কী খোয়া গিয়েছিল, তা কেউ বলতে পারেননি।

ঠিক যেমন কে আততায়ী, তা-ও বোঝা যায়নি এখনও। খোঁজ মেলেনি খুনের অস্ত্রেরও। লালবাজার সূত্রের খবর, ১৯৯৫ সাল থেকেই তেতলার এক কামরার ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন সুলোচনা৷ অবসর নেওয়ার পরে বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজি এবং ভূগোল পড়াতেন৷ এ ছাড়া, প্রতিদিন দুপুরে হাজরায় একটি কোচিং সেন্টারেও পড়াতে যেতেন তিনি৷ রোজ আসতেন এক পরিচারিকা। বৃদ্ধা বাড়িতে না-থাকলে প্রতিবেশী শান্তির কাছ থেকে বিকল্প চাবি নিয়েই ঢুকতেন তিনি।

খুনের পর মহিলার মোবাইলটি সম্ভবত নিয়ে গিয়েছিল আততায়ী। পাঁচ বছরে সেটির ব্যবহার হয়নি। আবাসনে সিসি টিভি বা নিরাপত্তা রক্ষী নেই। ফলে ওই বিকেলে কে সুলোচনার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন, তা জানা যায়নি। অথচ গোয়েন্দাদের দৃঢ় ধারণা, ওই ছাত্রী ডোরবেল বাজানোর সময়ে ভিতরেই ছিল আততায়ী। পরে সে দরজা টেনে পালিয়ে যায়। পাঁচ বছরেও তার হদিস মেলেনি।

(শেষ)

Murder Mysterious Death Sulochana Chary School Teacher Elderly Lady Sulochana Aunty Eyewitness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy