Advertisement
E-Paper

নতুন ঘরে চলল ছ’মাসের ছোটা ভীম

কলকাতায় এসে ‘পালক পিতাদের’ হাতে পড়েছিল সে। মায়ের মতো আদরেই তাকে দুধ খাওয়ানো, যত্ন-আত্তি করতেন ‘পালক পিতারা’। আদর করে নাম রাখা হয়েছিল ভীম।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
হাতি মেরে সাথী: চিড়িয়াখানা থেকে জলদাপাড়া নিয়ে যাওয়ার পথে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

হাতি মেরে সাথী: চিড়িয়াখানা থেকে জলদাপাড়া নিয়ে যাওয়ার পথে। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

মাত্র দশ দিন বয়সেই মায়ের কোলছুট হয়েছিল সে। জঙ্গল থেকে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছিল ঝাড়গ্রামে। খাবারের অভাবে কার্যত নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। শেষমেশ বনরক্ষীরাই উদ্ধার করেন তাকে। শুশ্রূষা করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়।

কলকাতায় এসে ‘পালক পিতাদের’ হাতে পড়েছিল সে। মায়ের মতো আদরেই তাকে দুধ খাওয়ানো, যত্ন-আত্তি করতেন ‘পালক পিতারা’। আদর করে নাম রাখা হয়েছিল ভীম। কেউ কেউ ডাকতেন, ছোটা ভীম। কিন্তু সেই ঠাঁইও চিরস্থায়ী হল না মাস ছ’য়েকের পুরুষ হাতিছানার। আলিপুরের আশ্রয় ছেড়ে এ বার ছোটা ভীম পাড়ি দিচ্ছে জলদাপাড়ায়। সেখানকার হাতিশালে থেকেই ভবিষ্যতে কুনকি হয়ে উঠবে সে। যোগ দেবে বন দফতরের ‘চাকরি’-তে।

রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, মাস দুই আগে হাতিছানাটিকে উদ্ধার করার সময়ে সে খুবই অসুস্থ ছিল। বাঁচবে কি না, সংশয় দেখা দিয়েছিল। চিড়িয়াখানায় এনে তার জন্য পশু চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়। মাঝে এক বার পেট খারাপও হয়েছিল। সে সব কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে ভীম। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস সামন্ত জানান, প্রথম মাসখানেক ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করতে হত। পালা করে এক জন কিপার ছোট্ট ছানাটির পাশে থাকতেন।

বর্তমানে আলিপুরে রানি ও তিতির নামে দু’টি ছোট হাতি রয়েছে। এর থেকে বেশি হাতি রাখার অনুমতি নেই। তাই আদরের ভীমকে দূরে ঠেলে দিতেই হচ্ছে চিড়িয়াখানার কিপার বা পালক পিতাদের। মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন হারানোর পরে অচেনা পরিবেশের মানুষেরাই যেন আপন হয়ে উঠেছিল ভীমের কাছে। কিপারেরা কাছে গেলেই আহ্লাদ হত তার। দুধ খেতে খেতে মাঝেমধ্যে আদর করে গায়ে ঢুঁসো দিত সে।

তবে সে ঢুঁসো কেমন, হাড়ে হাড়ে জানেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এক কিপার হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘বাচ্চা হলেও আদতে তো হাতি। ওর আদরের ঢুঁসোও সামলানো মুশকিল।’’ চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, শুক্রবারই উত্তরবঙ্গে জলদাপাড়ির উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে ভীম।

এ দিন ভীম যাওয়ার সময়ে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন আনোয়ার নামে এক কিপার। কিপারদের অনেকেই বলছেন, ‘‘একেবারে একরত্তি তো। ওকে যত্ন করতে করতে কোথাও মায়ার বাঁধন তৈরি হয়েছে। চলে গেলে খারাপ তো লাগবেই।’’ তবে চিড়িয়াখানার রীতি মেনে ভীমের সঙ্গে গিয়েছেন হেড কিপার প্রভাস সামন্ত, এক কিপার অশোক রাম এবং ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট রবীন্দ্রনাথ মাইতি। তাকে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসবেন তাঁরা। নতুন অতিথিকে নিয়ে যেতে জলদাপাড়া থেকেও এসেছিলেন তিন আধিকারিক।

তবে মায়ার বাঁধন কাটিয়ে কোলের ‘ছানা’কে দূরে রেখে আসা কেমন লাগবে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Elephant Jaldapara Alipore Zoo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy