Advertisement
E-Paper

থানায় ফোঁস, ভয়ে কাঁটা হয়ে আছে পুলিশ

সবে সন্ধ্যা নেমেছে। কাজ সেরে ‘অ্যান্টি চেম্বারে’র সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে সবেমাত্র একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন প্রগতি ময়দান থানার এক অফিসার। এমন সময় হঠাৎই ‘ফোঁস, ফোঁস’ শব্দ!

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:০৯

সবে সন্ধ্যা নেমেছে। কাজ সেরে ‘অ্যান্টি চেম্বারে’র সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে সবেমাত্র একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন প্রগতি ময়দান থানার এক অফিসার। এমন সময় হঠাৎই ‘ফোঁস, ফোঁস’ শব্দ!

প্রথমে গা করেননি তিনি। কিন্তু ফের একই শব্দ। এ বার কিছুটা ভয় পেয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠলেন ওই তাবড় অফিসার। তবে আলো জ্বালানোর জন্য সোফা থেকে নামার সৌভাগ্য আর হয়নি। তার আগেই টর্চ জ্বেলে দেখেন ঘরের মাটিতে ঘাড় উঁচিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দুলছে ধূসর রঙের চার ফুট লম্বা চন্দ্রবোড়া!

ততক্ষণে ওই অফিসার বুঝে গিয়েছেন এ সাপ কিন্তু বাবুরাম সাপুড়ের নয়। এর বিষ তো রয়েছেই এমনকী ঢুঁসঢাঁস মেরেও দিতে পারে। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে ফোন করে অন্য অফিসারদের ডেকে এনে সে যাত্রায় কোনও মতে চন্দ্রবোড়ার কোপ থেকে রক্ষা পান।

ওই থানারই এক অফিসারের মন্তব্য, আলিপুর থানায় প্রতাপ সাহার অনুগামীরা যে ভাবে আছড়ে পড়েছিল, সে ভাবেই কেউটে, চন্দ্রবোড়ার দলও যেন ‘টার্গেট’ করে রেখেছে প্রগতি ময়দান থানাকেই!

কেন শুধু প্রগতি ময়দান? এক অফিসারের সংযোজন, ‘‘সাপ তো আর আমাদের জায়গায় আসেনি। আমরাই সাপের জায়গায় এসেছি। উপদ্রব তো সহ্য করতেই হবে।’’

সূত্রের খবর, প্রগতি ময়দান থানার পিছনেই রয়েছে আড়ুপোতা এলাকা। সেখানে পুকুর ও জঙ্গলে বহু বছর ধরেই কেউটে, চন্দ্রবোড়া-সহ বিভিন্ন বিষধর সাপের বাস। বাম আমলে পুকুরের একাংশ বুজিয়ে তৈরি হয় থানা। কিন্তু ক্রমশ জনবসতি বাড়তে থাকায় সাপের দল বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। হাতের সামনে থানা পেয়ে সেখানেই পাকাপাকি আস্তানাও গড়তে তেড়েফুঁড়ে নামে তারা। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রগতি ময়দান থানায় অফিসার পদে যোগ দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক। তিনি আবার সাপুড়েদের মতোই সাপ ধরতে পটু ছিলেন। প্রগতি ময়দান থানায় থাকাকালীন একাধিক বার সাপ ধরে নজরও কেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাস কয়েক আগে তিনি বদলি হওয়ার পর থেকেই ফের ঘুম ছুটেছে অফিসারদের।

অফিসারেরা জানালেন, কিছু সাবধানতার পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। সকলকে বলা হয়েছে, থানায় ঢোকার সময়ে প্রথমে নীচের দিকে ভাল করে দেখে নিয়ে তার পরেই গাড়ি থেকে নামতে। কারণ থানার সামনে মাঝেমধ্যে সর্পবাহিনী টানটান হয়ে একটু জিরিয়ে নেয়। গায়ে পা পড়লে আর রক্ষা নেই। বিশেষত সন্ধ্যে হলেই আতঙ্কে থাকে গোটা থানা। পাছে মাটিতে থাকা সাপের গায়ে পা পড়ে এই ভয়ে ঘর থেকে বেরোতে চান না কেউ। কিন্তু শান্তি নেই সেখানেও। কারণ ঘরের চালে অবিরাম ধুপধাপ শব্দেও প্রাণ প্রায় খাঁচাছাড়া হওয়ার হাল হয়। এক অফিসার বললেন, ‘‘যে কোনও সময়ে দেওয়াল বেয়ে নীচে নামলেই বড় বিপদ। একে তো পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকি। তার উপরে এ ভাবে সাপের উপদ্রবে কবে যে প্রাণ যায় সেই ভয়েই আমরা কাঁটা।’’

থানায় কান পাতলেই শোনা যায়, অনবরত চলছে প্রতিযোগিতা। এক অফিসার বললেন, ‘‘আমি পাঁচটা কেউটে দিয়েছি।’’ অন্য জন বলে উঠলেন, ‘‘আমি তো সাতটা চন্দ্রবোড়া দিয়েছি।’’ খোঁজ করে জানা গেল, সাপের খোঁজ পেলেই অফিসারেরা জানান বন দফতরে। তারাই সাপ উদ্ধার করেন। থানা থেকে কে কত সাপের খোঁজ বন দফতরকে দিতে পারেন তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।

অগত্যা ভোলানাথের উপরেই ভরসা থানার। এক অফিসার বলেন, ‘‘থানা চত্বরেই মহাদেবের মন্দির রয়েছে। বাঁচালে তিনিই বাঁচাতে পারবেন।’’

তবে বিষয়টি সামনে আসতেই বেজায় ফাঁপরে পড়েছেন ওই থানা এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘থানায় তো
আসাই দায়। মারধরের অভিযোগ করতে এসে শেষে সাপের কামড়ে মরব নাকি!’’

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

Snake Police station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy