Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পেটে টিউব, মেডিক্যালে ঠোক্কর ক্যানসার রোগীর

রোগীর বক্তব্য, ‘‘টিউব নোংরা হয়ে যাওয়ায় খাবার-ওষুধ ঠিক মতো যাচ্ছে না। দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।’’ একাধিক বার টিউব খুলে যাওয়ায় সেলাই করতে হয়েছে।

হয়রান: মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে নারায়ণ দে ( বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

হয়রান: মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে নারায়ণ দে ( বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৭
Share: Save:

চিকিৎসার আর্জি নিয়ে তিন মাস ধরে সরকারি হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে ঘুরছেন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী। সময় পেরিয়ে গিয়েছে, তাই অস্ত্রোপচার করে পেটে ঢোকানো টিউব খুলতে মরিয়া তিনি। চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি আছে মনে করে বন্ডে সই করাতে চাইলে তা করতেও রাজি ওই রোগী। তবুও কাজ হয়নি। উপরন্তু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের ‘ইউনিট-৪’-এর এক চিকিৎসক রোগীকে ‘দিদিকে বলো’র পরামর্শ দিলেন! কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারের কার্যালয়ে শনিবার তাঁর হয়রানির কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগে এমনই দাবি করেছেন রাজপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের নারায়ণ দে।

এ দিন রোগীর ভাই রামকৃষ্ণ দে জানান, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ২ মে তাঁর অটোচালক দাদাকে সিএমসি-তে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, নারায়ণের পেটের টিউমার ফেটে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভর্তির এক সপ্তাহ পরে অস্ত্রোপচার করেন সার্জারি বিভাগের ‘ইউনিট-৪’-এর চিকিৎসকেরা। খাদ্যনালীর উপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাকস্থলীর সঙ্গে টিউব লাগিয়ে দেওয়া হয়। নারায়ণ জানান, ২৭ মে ছুটি দিয়ে দু’সপ্তাহ পরে তাঁকে সার্জারির বর্হিবিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়।

সেই মতো ওই দিন নারায়ণ গেলে তাঁকে জানানো হয়, টিউমারটি ক্যানসারে পরিণত হয়েছিল, তাই অঙ্কোলজি মেডিসিন চিকিৎসা করবে। ছ’দিন পরে অঙ্কোলজি মেডিসিন বিভাগে যান তিনি। তখন তাঁকে টিউমার বোর্ডে পাঠানো হয়। সিএমসি সূত্রের খবর, পাইপের পথেই রোগীকে খাওয়ার পরামর্শ দেয় বোর্ড। এ জন্য রোগীর দেখভাল যথাযথ প্রক্রিয়ায় হওয়া জরুরি বলে জানায় বোর্ড।

অভিযোগ, সেটাই হচ্ছে না। রোগীর বক্তব্য, ‘‘টিউব নোংরা হয়ে যাওয়ায় খাবার-ওষুধ ঠিক মতো যাচ্ছে না। দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।’’ একাধিক বার টিউব খুলে যাওয়ায় সেলাই করতে হয়েছে। নারায়ণ বলেন, ‘‘টিউব যে পথে পাকস্থলীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেখান থেকে রস গড়াচ্ছে।’’ রোগীর সঠিক যত্ন নেওয়ার জন্য অঙ্কোলজি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে ফের জেনারেল সার্জারি বিভাগে রেফার করেন। ১ অগস্ট সার্জারি বিভাগ নারায়ণকে আবার গ্যাস্ট্রো সার্জারিতে পাঠায়। নারায়ণ বলেন, ‘‘আবার রেফার করা হচ্ছে দেখে কেঁদে ফেলি। ঝুঁকি থাকলে চিকিৎসার জন্য বন্ড সই করতেও রাজি। তা শুনে মুখ্যমন্ত্রীকে বলার পরামর্শ দেন ইউনিটের বড় ডাক্তার!’’

গ্যাস্ট্রো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের বক্তব্য, যে বিভাগের চিকিৎসকেরা টিউব লাগিয়েছেন, তাঁরাই খুলবেন। বৃহস্পতিবার ফের সার্জারি বিভাগে দাদাকে নিয়ে যান রামকৃষ্ণ। এ বার রেফার করা হয় অঙ্কো সার্জারি বিভাগে। এ দিন বহির্বিভাগের টিকিটে পুনরায় জেনারেল সার্জারিতে রেফার করা হলে সুপারের দ্বারস্থ হন তাঁরা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের আশ্বাস, ‘‘টিউব বদলে রোগী যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যত্ন পান, সেটা দেখছি। অঙ্কোলজি মেডিসিনের চিকিৎসক এ নিয়ে জেনারেল সার্জারির চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করি, দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Patient Calcutta Medical College amd Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE