E-Paper

দাঁড়ানো স্কুটারে ধাক্কা ট্রাকের, মৃত্যু দম্পতির

শহরের রাস্তায় বেলা ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলার কথা। তার আগে কী ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক বেরোল এবং দুর্ঘটনা ঘটাল, এ দিনের ঘটনায় সেই প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৬:৪১
An image of the accident

অকুস্থল: দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে জুতো। শুক্রবার, বেহালার পাঠকপাড়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ট্র্যাফিক সিগন্যালে একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ট্যাক্সি। তার পিছনে একটি গাড়ি। আর তারও পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল একটি স্কুটার। আচমকা বিকট আওয়াজ শুনে ছুটে এসে লোকজন দেখেন, একটি পণ্যবাহী ট্রাক ধাক্কা মেরেছে স্কুটারের পিছনে। রাস্তায় পড়ে আছেন স্কুটার-আরোহী এক মহিলা। আর সামনে দাঁড়ানো গাড়িটির নীচে স্কুটার সমেত ঢুকে গিয়েছেন চালক। স্থানীয় বাসিন্দারাই তড়িঘড়ি দু’জনকে উদ্ধার করে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মৃত্যু হয় ওই মহিলার। স্কুটারচালককে এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বিকেলে সেখানে মারা যান তিনিও।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে বেহালা থানা এলাকার ডায়মন্ড হারবার রোডের পাঠকপাড়া মোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন ফজরুল রহমান সর্দার (৫৪) এবং রাজিয়া সুলতানা (৪০)। তাঁদের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের পার্বতীপুরে। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কী ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক শহরেরপথে চলতে পারে?

পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, পেশায় ব্যবসায়ী ফজরুল এ দিন স্ত্রী রাজিয়াকে নিয়ে স্কুটারে হাওড়ায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেহালা বাজারের দিক থেকে স্কুটারটি মাঝেরহাটের দিকে যাচ্ছিল। পাঠকপাড়া মোড়ে সেটি সিগন্যালে দাঁড়ায়। সেই সময়েই ট্রাকটি পিছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে। ধাক্কার অভিঘাতে রাজিয়া ছিটকে রাস্তায় পড়েন। আর ফজলুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুটার নিয়ে এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়ানো গাড়িটির পিছনে ধাক্কা মেরে সেটির নীচে ঢুকে যান।

এলাকার এক দোকানদার বলেন, ‘‘আচমকা একটা বিকট আওয়াজ। সকলে ছুটে এসে দেখি, এই কাণ্ড।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, স্কুটারে ধাক্কা মারার পরে পণ্যবাহী ট্রাকটি আরও দু’টি গাড়িতে ধাক্কা মারে। ফজরুল এবং রাজিয়া, দু’জনেরই মাথায় হেলমেট ছিল। দুর্ঘটনার পরে ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পালিয়েছিল। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রসঙ্গত, শহরের রাস্তায় বেলা ১২টা থেকে ৪টে পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলার কথা। তার আগে কী ভাবে পণ্যবাহী ট্রাক বেরোল এবং দুর্ঘটনা ঘটাল, এ দিনের ঘটনায় সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নের মুখে যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকাও। এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ট্রাকটি কোথা থেকে বেরিয়ে কোথায় যাচ্ছিল, চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সে সব জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

এ দিন এসএসকেএমে গিয়ে দেখা যায়, ভিড় করেছেন ফজরুল এবং রাজিয়ার বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা। পরিবার সূত্রের খবর, ফজরুল ও রাজিয়ার তিন ছেলে, তিন মেয়ে। তাঁদের এক ছেলে জাহির হুসেন সর্দার বেশি কিছু বলতে চাননি। মহেশতলার বাসিন্দা জাহিরের মাসি সুলতানা রাজিয়া বিবি বলেন, ‘‘ফজরুল-রাজিয়ার ছোট মেয়েটির মানসিক সমস্যা রয়েছে। ওকে এখন কে দেখবে?’’

এ দিন পাঠকপাড়া মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলটি ঘিরে রেখেছেন পুলিশকর্মীরা। রাস্তায় পড়ে আছে জুতো, স্কুটারের যন্ত্রাংশ। এমন একটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হতে দেখে মর্মাহত স্থানীয় লোকজন। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘এ ভাবেও মানুষের প্রাণ যায়!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident Death Truck accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy