মৃতেরা হলেন সুব্রত সান্যাল (৫০) এবং পারমিতা সান্যাল (৪৬)। ফাইল ছবি।
মোটরবাইক নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বেরিয়েছিলেন মঙ্গলবার। বাড়িতে জানিয়ে গিয়েছিলেন, বাইকেই লাদাখ ঘুরে দিন কুড়ি পরে ফিরবেন। কিন্তু পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের বরাবাঁকীর উপর দিয়ে লাদাখ যাওয়ার পথে বাইক দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হল কলকাতার নাকতলার বাসিন্দা ওই দম্পতির। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে গিয়েছেন মৃতের আত্মীয়েরা।
জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার সকালে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের বরাবাঁকীর কাছে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতেরা হলেন সুব্রত সান্যাল (৫০) এবং পারমিতা সান্যাল (৪৬)। নেতাজিনগর থানা এলাকার নাকতলার বৈষ্ণবঘাটা বাইলেনের বাসিন্দা ওই দম্পতি একটি চারতলা বাড়ির উপরের তলায় দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। কখনও কখনও তাঁদের সঙ্গে এসে থাকতেন সুব্রতর মা। দম্পতির বড় ছেলে ময়ূখ ওড়িশার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। ছোট ছেলে সৃজন নরেন্দ্রপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। সুব্রত ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পারমিতা ইন্টিরিয়র ডিজাইনের সংস্থায় কাজ করতেন।
বাইক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়াই ছিল দু’জনের নেশা। মাঝেমধ্যে সুব্রত ও পারমিতা বাইক নিয়ে দুর্গম এলাকায় বেড়াতে যেতেন। মঙ্গলবারও তাঁরা একটি বাইকে চেপে বাড়ি থেকে লাদাখের উদ্দেশে বেরোন। পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময়ে শুক্রবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথ বিভাজিকায় (ডিভাইডার) বাইকটি ধাক্কা মারে। দু’জনেই ছিটকে পড়েন। স্থানীয় পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ওই দম্পতির ব্যাগে থাকা আধার কার্ড এবং অন্য পরিচয়পত্র দেখে শুক্রবার রাতেই স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তাঁদের বাড়িতে ফোন করে দুর্ঘটনার কথা জানানো হয়। রাতেই সান্যাল পরিবারের সদস্যেরা উত্তরপ্রদেশে রওনা দেন।
রবিবার নাকতলায় সুব্রতদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ঘর তালাবন্ধ। বন্ধ উপরে ওঠার দরজাও। দুর্ঘটনার কথা শুনলেও কী ভাবে তা ঘটল, সে বিষয়ে বলতে পারেননি প্রতিবেশীরা। জানা গিয়েছে, বছর পনেরো ধরে ওই এলাকায় থাকলেও পাড়ায় কারও সঙ্গে খুব বেশি মিশতেন না সান্যাল দম্পতি। কয়েক মাস অন্তর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। ওই ফ্ল্যাটের একতলার বাসিন্দা দেবাঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ভোরে দু’জনে বাইকে বেরিয়েছিলেন। বাবা-মা লাদাখ যাচ্ছে বলে পরে ছেলেরা জানিয়েছিল।’’ একই বক্তব্য আর এক বাসিন্দা সরস্বতী মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘বছরে দু’-তিন বার দু’জনে বেড়াতে যেতেন। এর আগে মধ্যপ্রদেশ গিয়েছিলেন বাইক নিয়ে। ওঁদের এক আত্মীয় সুব্রতর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন, তখনই দুর্ঘটনার কথা জানতে পারি।’’
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, শনিবার সকালেই দম্পতির দুই ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন আত্মীয়েরা। ময়না তদন্তের পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া শেষে ওই রাতেই দেহ দু’টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই রবিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy