Advertisement
E-Paper

ট্রেনে কাটা দুই পা, ট্রলি নিয়ে ফের হাঁটছে তৈমুর

গত ৭ জানুয়ারি ইছাপুর স্টেশনের কাছে ট্রেনের নীচে পড়ে গিয়েছিল তৈমুর। তখন সে মাত্র দেড় মাসের। পিছনের দু’টি পা-ই কাটা পড়ে। ব্যারাকপুর পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পায়ে অস্ত্রোপচার করা হলেও সে বাঁচবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০১:৫১
হাঁটিহাঁটি: ওয়াকিং ট্রলি নিয়ে ছোট্ট তৈমুর। শ্যামনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

হাঁটিহাঁটি: ওয়াকিং ট্রলি নিয়ে ছোট্ট তৈমুর। শ্যামনগরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ট্রেনের নীচে পড়ে পিছনের দু’টি পা বাদ চলে গিয়েছিল একরত্তি কুকুরছানাটির। চিকিৎসকেরা আশা দেখেননি। কিন্তু হাল ছাড়েননি এক জন। গত তিন মাস ধরে চিকিৎসা করে পথকুকুরটিকে শুধু প্রাণেই বাঁচাননি, তার জন্য বানিয়েছেন আস্ত ‘ওয়াকিং ট্রলি’। দু’চাকাওয়ালা সেই ট্রলি নিয়েই এখন মহানন্দে ঘুরছে পাঁচ-ছ’মাসের ‘তৈমুর’।

গত ৭ জানুয়ারি ইছাপুর স্টেশনের কাছে ট্রেনের নীচে পড়ে গিয়েছিল তৈমুর। তখন সে মাত্র দেড় মাসের। পিছনের দু’টি পা-ই কাটা পড়ে। ব্যারাকপুর পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পায়ে অস্ত্রোপচার করা হলেও সে বাঁচবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এর পরে উদ্ধারকারীরা খবর দেন শ্যামনগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ গোস্বামীকে। গত ৩৫ বছর ধরে ওই এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকা পশু-পাখিদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলাই তাঁর নেশা। গুরুতর জখম তৈমুরকে বাঁচানোটাই তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পেশায় পিয়ানো শিক্ষক প্রসেনজিৎবাবুর কাছে। তাঁর দাবি, ‘‘প্রথমে ওর অবস্থা দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। ব্যারাকপুর হাসপাতাল ওর পায়ে চট সেলাই করার মতো করে সেলাই করেই ছেড়ে দিয়েছিল। পায়ের কিছু হাড়ের অংশ বাইরে বেরিয়ে ছিল।’’ ওই অংশ থেকে গ্যাংগ্রিন হওয়ার ভয় ছিল। প্রসেনজিৎবাবু নিজেই ওর পরিচর্যা করেন। তাঁর দাবি, ‘‘৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এই কাজ করেছি। ঝুঁকি ছিল, কিন্তু না হলে ওকে বাঁচানো যেত না।’’

তৈমুরকে সুস্থ করতে চিকিৎসায় খামতি থাকেনি। কিন্তু শুধু সেখানেই থেমে থাকেননি বছর একান্নের প্রসেনজিৎবাবু। ‘‘আড়াই মাস পরে যখন ও অনেকটাই সুস্থ, মনে হয় আর পাঁচটা বাচ্চার মতো ওকে হাঁটাব। কেনই বা ও একটা ছোট্ট ঘরে বন্দি হয়ে থাকবে!’’— বলছেন তিনি। সেই মতো ইন্টারনেট ঘেঁটে কুকুরদের জন্য ওয়াকিং ট্রলির নকশা তৈরি করেন তিনি।

তৈমুরের শরীরের দৈর্ঘ্য, ওজন সব কিছু দেখে কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম শিট, বেল্ট, প্লাইউড দিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেলেন আস্ত ওয়াকিং ট্রলি! পিছনের পা দু’টি যাতে মাটিতে ঘষে না যায়, সে জন্য পা রাখার ব্যাগও রাখেন তাতে। দুর্ঘটনার ঠিক তিন মাস ২২ দিনের মাথায়, গত বুধবার ওই ওয়াকিং ট্রলি উপহার পায় তৈমুর।

নতুন ট্রলি পেয়ে কেমন আছে তৈমুর? শ্যামনগরের রথীন ভৌমিক বলছেন, ‘‘ও খুবই উত্তেজিত। তবে চাকা দিয়ে হড়হড় করে এগিয়ে যাচ্ছে বলে একটু ভয়ও পাচ্ছে। এখনও ছোট তো!’’ দুর্ঘটনার পরে রথীনবাবুই তৈমুরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে তাঁর আবাসনের একতলাতেই আশ্রয় পেয়েছে তৈমুর। ওই আবাসনের কেয়ারটেকার ওর দেখভাল করেন। আর প্রসেনজিৎবাবু বলছেন, ‘‘এক জায়গায় কুঁইকুঁই করে কাঁদত। সেই জায়গা থেকে খুশিমতো হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে, এটা যে কী তৃপ্তি বলে বোঝানো যাবে না।’’ কিন্তু ছোট্ট তৈমুর বড় হয়ে যাওয়ার পরে কী হবে? প্রসেনজিৎবাবু জানাচ্ছেন, প্রতি ছ’মাস অন্তর তৈমুরের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ট্রলির মাপ বদল করে দেওয়া হবে।

যেখানে এনআরএস হাসপাতাল চত্বরে ১৬টি কুকুরছানা পিটিয়ে মারা বা বেহালায় পথকুকুরের গায়ে অ্যাসিড মারার ঘটনা ঘটে, সেখানে পথকুকুরের জন্য প্রসেনজিৎবাবুর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনদের একাংশ। ফেসবুকে একটি গ্রুপে তৈমুরের ট্রলি সংক্রান্ত পোস্ট ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।

তবে ভ্রূক্ষেপ নেই ছোট্ট তৈমুরের। নতুন ঠিকানার চৌহদ্দিতে ওয়াকিং ট্রলি নিয়ে খোশমেজাজে হেঁটে বেড়াচ্ছে সে।

Dog Walking Trolley Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy