Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Tuberculosis

যক্ষ্মায় আক্রান্ত বালিকা অভুক্ত, নজর নেই কারও

শিশু-রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলছেন, “সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ছোটদের মধ্যে এমডিআর টিউবারকিউলোসিসের প্রবণতা বাড়ছে।

অসহায়: সোদপুরের ঘোলার বাড়িতে মা শবনম বিবির সঙ্গে  শাহনাজ খাতুন। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: সোদপুরের ঘোলার বাড়িতে মা শবনম বিবির সঙ্গে শাহনাজ খাতুন। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪১
Share: Save:

ভোটের আগে নজর টানছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের প্রতিযোগিতা। নেতাদের মুখে ঘুরছে মানুষের জন্য কাজ না-করতে পারার আক্ষেপে দলবদলের সিদ্ধান্ত। অথচ যে অসুস্থ সন্তানের মুখে দুধটুকুও তুলে দিতে পারেন না তার ফেরিওয়ালা বাবা, সেই নাগরিকের অবস্থা বদলায় না। ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা সিএনএস) মাল্টি ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিসে (এমডিআরটিবি) আক্রান্ত সেই বালিকার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত অসহায় পরিবার।

গত বছরের শেষে সোদপুরের ঘোলার বাসিন্দা শবনম বিবি ও আশরফ আলি তাঁদের দশ বছরের মেয়ে শাহনাজ খাতুনকে প্রায় আচ্ছন্ন অবস্থায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমে তাকে শিশু বিভাগে ভর্তি করা হয়। যক্ষ্মা সন্দেহ করে বালিকার চিকিৎসা শুরু করেন বক্ষরোগ বিভাগের প্রফেসর অরুণাভ দত্তচৌধুরী। শিরদাঁড়া থেকে ফ্লুইড বার করে প্রথমে তার সিবিন্যাট (সিবিএনএএটি) পরীক্ষা করা হয়। সেই ফ্লুইডের কালচার-সেনসিটিভিটি করে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের মাল্টি ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিসে আক্রান্ত শাহনাজ। অর্থাৎ, যক্ষ্মার
ওষুধ রিফামপিসিন এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না‌।

সঙ্গে সঙ্গে চেস্ট ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। রাইল্‌স টিউবে খাওয়ানো এবং ক্যাথিটার পরিয়ে রাখা সংজ্ঞাহীন ওই বালিকাকে এমডিআর টিউবারকিউলোসিসের নতুন ওষুধ ডিলামানিড দেওয়া হয়।

কিন্তু তিন সপ্তাহ পরেও সংজ্ঞা না ফেরায় দেখা যায়, মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুল অতিরিক্ত ফ্লুইডের জন্য বড় হয়ে চাপ সৃষ্টি করছে আশপাশের অংশে, যার জন্য বালিকাটির অবস্থা সঙ্কটজনক। এর পরেই স্নায়ু-শল্য চিকিৎসক দীনেশ জালুকা মস্তিষ্কের ওই অতিরিক্ত চাপ কমাতে অস্ত্রোপচার করে ভেন্ট্রিকুল পেরিটোনিয়াল শান্টের মাধ্যমে পেটে সেই অতিরিক্ত ফ্লুইড ফেলার ব্যবস্থা করেন। দিন সাতেক পরে জ্ঞান আসে শাহনাজের। ধীরে ধীরে চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে বিপন্মুক্ত হলে তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়।

শিশু-রোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলছেন, “সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ছোটদের মধ্যে এমডিআর টিউবারকিউলোসিসের প্রবণতা বাড়ছে। প্রথম বার যক্ষ্মা ধরা পড়লে এমডিআর হওয়ার আশঙ্কা থাকে ২.৫ শতাংশ। আর যে শিশুদের এক বার যক্ষ্মা হয়ে গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এমডিআর-এ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে হয় ১৫ শতাংশ। রোগ নির্ণয়ে দেরি এবং চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করলে ছোটদের ক্ষেত্রে এই রোগও প্রাণঘাতী হয়। তাই সচেতনতা সব থেকে জরুরি। তবে সেরে গেলেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায় রোগীর।”

টানা চার মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সুস্থ হলেও শাহনাজের আচরণে তেমনই কিছু পরিবর্তন এসেছে বলে জানাচ্ছেন শবনম। হাসপাতালের দেওয়া ওষুধ বিনামূল্যে মিললেও সন্তানের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়ার সামর্থ্য নেই ভাঙা টিনের ফেরিওয়ালা আশরফের। অথচ শাহনাজের চিকিৎসক অরুণাভবাবুর মতে, “নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি ওর জন্য জরুরি পুষ্টিকর খাবার। মেয়েটি তো কোনও খাবারই পাচ্ছে না।”

শবনমের কথায়, “মেয়েটা খুব দুর্বল। একটু হাঁটলেই হাঁফ ধরে যায়। উচ্চ রক্তচাপের জন্য শীতকালেও পাখা চালাতে বলে।” একটু থেমে কান্নাভেজা গলায় তিনি বলেন, “শুধু বেদানা খেতে ভালবাসে। আর কিছুই চায় না। কিন্তু সেটাও দিতে পারি না। কোনও সাহায্য পাইনি। জানি না, ওকে কী ভাবে সুস্থ করতে পারব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tuberculosis RG Kar Medical College And Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE