Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিন বছর ধরে ফুসফুসে প্লাস্টিক!

এ দিন শিশুটির মা জানান, দাদা যে কোনও বস্তু গিলে ফেলেছে তা বছর তিনেক আগেই বাড়িতে জানিয়েছিল রোহিতের ভাই। কিন্তু ছেলের কীর্তির কথা স্থানীয় চিকিৎসকেরা ধরতে পারেননি।

অস্ত্রোপচারের পরে রোহিত। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

অস্ত্রোপচারের পরে রোহিত। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

মাঝেমধ্যেই জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগত ঘাটালের দাসপুরের বাসিন্দা ছ’বছরের রোহিত দলুই। এর কারণ যে এত গভীরে, ধারণাই করতে পারেননি মা মানবী দলুই। বিস্মিত এসএসকেএমের চিকিৎসকেরাও। তিন বছর আগে প্লাস্টিকের একটি বস্তু গিলে ফিলেছিল শিশুটি। সে জন্যই ফুসফুসের ডান দিক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। রবিবার সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করে যে বস্তুটি বার করলেন এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র চিকিৎসকেরা।

এ দিন শিশুটির মা জানান, দাদা যে কোনও বস্তু গিলে ফেলেছে তা বছর তিনেক আগেই বাড়িতে জানিয়েছিল রোহিতের ভাই। কিন্তু ছেলের কীর্তির কথা স্থানীয় চিকিৎসকেরা ধরতে পারেননি। এ দিন মানবী জানান, তার পর থেকে প্রায়ই সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগত ছেলে। কিছুতেই কাশি কমছিল না। গত মে থেকে ছ’বছরের শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পাঁশকুড়ার এক চিকিৎসককে দেখালে তিনি কলকাতার কোনও হাসপাতালে রোহিতকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শনিবার এসএসকেএমের বহির্বিভাগে ছেলেকে দেখান মানবী। আগেই রোহিতের ‘ফাইবার অপটিক ব্রঙ্কোস্কোপি’ পরীক্ষা হয়েছিল। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেই রিপোর্টে দেখেন, শিশুর ফুসফুসের ডান দিকের নীচের অংশে একটি বস্তু আটকে।

এর পরে বুকের এক্স-রে এবং যাবতীয় রক্তপরীক্ষার পরে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়। এসএসকেএমের ইএনটি বিভাগকে সম্প্রতি ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’তে উন্নীত করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারের জন্য গঠিত চিকিৎসক দলের অন্য সদস্যেরা হলেন অরিন্দম দাস, সায়ন হাজরা, মৃদুল জুনেজা এবং অ্যানাস্থেটিস্ট অয়ন দাস। এ দিন সন্ধ্যা ছ’টা থেকে এক ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে ফুসফুসে আটকে থাকা প্লাস্টিকের বস্তুটি বার করা হয়েছে। চিকিৎসক অরিন্দম দাস বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে বস্তুটি আটকে থাকায় বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ হত। ডান ফুসফুসের অংশ কাজ করছিল না বলে শিশুর শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল। সফল অস্ত্রোপচারের পরে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন ভাল আছে।’’

বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে ফরেন বডি শরীরে আটকে রয়েছে, এমন ঘটনা বিরল। শিশুটি যে বেঁচেছিল সেটাই অবিশ্বাস্য। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পরেও যদি কারও কাশি না কমে তা হলে ফুসফুসে কোনও বস্তু আটকে রয়েছে কি না তা দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Lungs Plastic SSKM Kid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE