E-Paper

পুজোর রাতে স্টেশনে ‘হেনস্থা’, ম্যাডক্সে বাংলা বলায় ‘মার’

বাংলায় কথা বলার জন্য পুজো মণ্ডপে এক যুবককে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মারধরের অভিযোগ উঠ‌েছে কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে। নবমীর রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৪৬
ঘটনাটি নিয়ে সমাজমাধ্যমে শোরগোল চললেও পুলিশের কাছে কোনও খবর নেই।

ঘটনাটি নিয়ে সমাজমাধ্যমে শোরগোল চললেও পুলিশের কাছে কোনও খবর নেই। —প্রতীকী চিত্র।

নবমীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রেল স্টেশনের সাবওয়েতে এক তরুণীকে উত্ত্যক্ত এবং তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠল এক দল যুবকের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় ওই তরুণীকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে সোদপুর স্টেশনে। অন্য দিকে, বাংলায় কথা বলার জন্য পুজো মণ্ডপে এক যুবককে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মারধরের অভিযোগ উঠ‌েছে কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে। নবমীর রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারে।

এই দুই ঘটনাকে ঘিরে বুধবার রাত থেকে সমাজমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ ঘটনা দু’টি একত্রিত করে পুজোর সময়ে বাঙালি অস্মিতা নষ্টের অভিযোগ তুলেছেন। সোদপুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দমদম জিআরপি-র কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই তরুণী। একই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে তাঁর অভিযোগ, কোথায় অভিযোগ জানানো যাবে, তা নিয়ে তাঁকে বিস্তর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।তবে তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চাননি। অন্য দিকে কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, ম্যাডক্স স্কোয়ারের ঘটনা নিয়ে তাদের কাছে কোনও খবর নেই।

তবে, সোদপুরের ঘটনাটি উৎসবের মরসুমে রেলের নিরাপত্তাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ৩০ হাজার বা তার বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন, এমন ৪০০টি স্টেশনে এ বছর বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি ছিল, বিপুল সংখ্যক রেল রক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা থেকে সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলিতে সিসি ক্যামেরার নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, শিয়ালদহ ডিভিশনে বিশেষ ‘ওয়ার রুম’ খুলে সেখান থেকেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে নজরদারি চালানোর কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রেল রক্ষী বাহিনী এবং রেল পুলিশের মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয় সাধন হয়েছিল কি? যদি হয়ে থাকে, তা হলে সোদপুরের মতো ব্যস্ত স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে কী ভাবে?

পেশায় সাংবাদিক ওই তরুণী সমাজমাধ্যমে বিবরণে জানিয়েছেন, বুধবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ তিনি সোদপুর স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ৭-৮ জন অবাঙালি যুবক তাঁকে অনুসরণ করার পাশাপাশি, কটূক্তিও করতে থাকে। সাবওয়েতে নেমে ওই তরুণী চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে আচমকাই এক যুবক তাঁর কাঁধে হাত দেয় এবং পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে অভিযোগ। ওই তরুণী ঘুরে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত যুবকের জামার কলার ধরে থাপ্পড় মারতেই দলে থাকা অন্য যুবকেরা তাঁর উপরে চড়াও হয়।

তরুণীর দাবি, তাঁকে এমন চড় মারা হয়, যাতে কলার ধরা হাতের মুঠি খুলে যায়। এর পরেই ওই যুবকেরা চম্পট দেয়। ধাওয়া করেন তরুণীও। কিন্তু, প্ল্যাটফর্মে উঠে তিনি কাউকে খুঁজে পাননি। তরুণীর আরও দাবি, সেই সময়ে স্টেশনে এবং সাবওয়েতে ভাল ভিড় ছিল। কিন্তু চেঁচামেচি শুনেও কেউ তাঁকে রক্ষা বা সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেননি।

ঘটনার খবর পেয়ে তরুণীর পরিচিতেরা স্টেশনে চলে আসেন। অভিযোগ, প্ল্যাটফর্মে থাকা জিআরপি কর্মীকে বিষয়টি জানালে উত্তর আসে, ‘আপনি খুঁজে পেলে আমায় জানান, আমরা গিয়ে ধরব’। তরুণী লিখিত অভিযোগ করতে চাইলে তাঁকে দমদমে যেতে বলা হয়। তাঁর বন্ধুরা জিআরপি-তে ফোন করলে জানানো হয়, বেলঘরিয়া স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ করতে হবে। সেখানে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, ঘটনাটি দমদমের। শেষে শিয়ালদহ জিআরপি থেকে তরুণীকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকালে দমদমে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে হবে তাঁকে।

এ দিন লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরে ওই তরুণী আবারও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে দমদম জিআরপি-র সহযোগিতা এবং ঘটনার তদন্ত শুরুর কথা জানান। রেল পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। অভিযোগ দায়ের নিয়ে কী সমস্যা হয়েছিল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সব রকম সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।

অন্য দিকে, ম্যাডক্স স্কোয়ারে দুই পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়েছিল। সেই সময়ে অবাঙালি যুবকদের বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশি, চুপ করে থাকবি।’ তাতে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিতহওয়া যুবক প্রশ্ন করেন, ‘‘বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি? পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে বাংলায় কথা বললে বাংলাদেশি বলে মারা হবে কেন?’’ তাতে ওই যুবকের দল বলে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের বাইরে?’’ ঘটনাটি নিয়ে সমাজমাধ্যমে শোরগোল চললেও পুলিশের কাছে কোনও খবর নেই। ম্যাডক্স স্কোয়ার বালিগঞ্জ থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের দাবি, ‘‘এমন কোনও বিষয় আমাদের নজরে আসেনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Maddox Square

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy