E-Paper

লরিতে পিষ্ট বালকের যুদ্ধ থামল, দাহ না করার সিদ্ধান্ত বাবা-মায়ের

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৃঞ্জয় সল্টলেকের বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। ৩ ডিসেম্বর সকালে বাবা গৌতমের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বাগমারি এলাকার বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯
সৃঞ্জয় দত্ত।

সৃঞ্জয় দত্ত।

অস্ত্রোপচারে বাদ গিয়েছিল ডান পা। তাতেও রক্ষা হল না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যু হল ফুলবাগান থানা এলাকার মানিকতলা রোডে বেপরোয়া লরির ধাক্কায় গুরুতর জখম বছর এগারোর সৃঞ্জয় দত্তের। এক মাত্র সন্তান সৃঞ্জয়কে হারিয়ে দিশাহারা বাবা গৌতম দত্তের হাহাকার, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৃঞ্জয় সল্টলেকের বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। ৩ ডিসেম্বর সকালে বাবা গৌতমের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে বাগমারি এলাকার বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছিল সে। মানিকতলা বাস ডিপোর কাছে রেশন-সামগ্রী বোঝাই বেপরোয়া লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন থেকে গৌতমের বাইকে ধাক্কা মারে। ছেলে-বাবা দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। লরির চাকায় জড়িয়ে যায় সৃঞ্জয়। সেই অবস্থায় লরিটি তাকে বেশ কিছুটা টেনে নিয়ে যায়। গৌতমের হাতে-পায়ে চোট লাগে। সেই অবস্থায় গুরুতর জখম ছেলেকে ভ্যানে চাপিয়ে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল সৃঞ্জয়ের। সে ছিল আইসিইউ-তে। ৫ ডিসেম্বর সৃঞ্জয়ের মারাত্মক জখম ডান পা বাদ দেওয়া হয়। এ দিন গৌতম বলেন, ‘‘সকাল ১০টায় হাসপাতালে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানালেন, ছেলে মারা গিয়েছে। গত কাল রাতে সৃঞ্জয়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।’’

সম্প্রতি বি টি রোডে বেপরোয়া বাসের দৌরাত্ম্যে প্রাণ গিয়েছিল বরাহনগরের বাসিন্দা এক পড়ুয়ার। ঠাকুরপুকুর থানার ডায়মন্ড হারবার রোডে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় এক বাইক আরোহীর পা বাদ যায়। গৌতমের বাইকে ধাক্কা মারার পরে লরিচালককে গ্রেফতার করে ফুলবাগান থানার পুলিশ। আটক করা হয় লরিটিও। প্রশ্ন উঠছে, দুর্ঘটনার আগেই বেপরোয়া গতির যানবাহনকে আটকাতে এ বার কি সক্রিয় হবে পুলিশ? আরও প্রশ্ন, আর কত প্রাণের বিনিময়ে লাগাম পরানো যাবে যানের নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া গতিতে?

এ দিন সৃঞ্জয়ের ক্ষতবিক্ষত শরীরে ফের কাটাছেঁড়া হচ্ছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। বাইরে তখন মোবাইলে ছেলের ছবি দেখছিলেন গৌতম। ছলছল চোখে বললেন, ‘‘দেখে কে বলবে, আমার ছেলেটা নেই। খুব লড়াই করেছে ও। দুর্ঘটনার পরে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ে সৃঞ্জয় বলছিল, ‘দেখ বাবা, আমার পা-টা কেমন হয়ে গিয়েছে।’ হাসপাতালে ভর্তির সময়ে বলল, ‘বাবা জল দাও, জল খাব।’ সেটাই আমার সঙ্গে ছেলের শেষ কথা।’’

ময়না তদন্তের পরে শুক্রবার রাতে মুরারিপুকুর হিন্দু কবরস্থানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় সৃঞ্জয়ের। গৌতম বলেন, ‘‘সৃঞ্জয়ের শরীরে অনেক কাটাকাটি হয়েছে। অনেক কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা। আমরা ছেলেকে আর আগুনে পুড়তে দেখতে পারব না। তাই আমি আর আমার স্ত্রী ওকে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানেই শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকুক ছেলে।’’ অথচ বাবা-মায়ের সেই শান্তিই পিষ্ট হয়ে গিয়েছে লরির চাকায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Case Maniktala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy