Advertisement
E-Paper

আচমকা ধেয়ে আসা বানে মৃত্যু যুবকের, নিখোঁজ বৃদ্ধা

প্রত্যক্ষদর্শীদের তৎপরতায় দ্রুত উদ্ধারকাজে নামেন স্থানীয়েরা। খবর যায় রিভার ট্র্যাফিকে। আট জনকে কোনও রকমে তুলে আনা হয়। তবে খোঁজ মেলেনি মিতালি চৌধুরী নামে ৬১ বছরের এক বৃদ্ধার। তিনি 

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২১
জলোচ্ছ্বাস: নিমতলা ঘাটে জোয়ার। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জলোচ্ছ্বাস: নিমতলা ঘাটে জোয়ার। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বছর সাতাত্তরের বৃদ্ধা মীরা কুন্ডুর শেষকৃত্য তখন সবে হয়েছে। মায়ের অস্থি বিসর্জন দিতে আত্মীয়দের সঙ্গে গঙ্গায় নেমেছিলেন মেয়ে অন্বেষা। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের উপরে আছড়ে পড়ে বিশাল জলোচ্ছ্বাস। জোয়ারের জলে মুহূর্তে গঙ্গায় ডুবে যান ন’জন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তৎপরতায় দ্রুত উদ্ধারকাজে নামেন স্থানীয়েরা। খবর যায় রিভার ট্র্যাফিকে। আট জনকে কোনও রকমে তুলে আনা হয়। তবে খোঁজ মেলেনি মিতালি চৌধুরী নামে ৬১ বছরের এক বৃদ্ধার। তিনি

মীরাদেবীর ননদ। পুলিশ জানায়, জল থেকে উদ্ধার হওয়া সকলকে নিমতলা পুলিশ পোস্টের তৎপরতায় এর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রসেনজিৎ মজুমদার নামে বছর তিরিশের এক যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তিনি সম্পর্কে মীরাদেবীর নাতি। রাতে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্বেষা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান বুধবার ভোরে। মঙ্গলবার রাতের পরে এ দিন সকাল থেকে নিখোঁজ বৃদ্ধার খোঁজে নতুন করে তল্লাশি চালানো হয়। উত্তর বন্দর থানার ওসি-র নেতৃত্বে রিভার ট্র্যাফিকের পাশাপাশি তল্লাশিতে নামেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরাও। রাতের দিকে উত্তর বন্দর থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের ওই মহিলার খোঁজ চালানো হবে। ঘাট লাগোয়া থানাগুলিতেও খবর পাঠানো হয়েছে।’’

অন্বেষাদের বাড়ি নিউ টাউনে। তিনি জানান, বাবা বলরাম কুন্ডু অসুস্থ। মা মীরাদেবী বেশ কিছু দিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৫ দিন ধরে তিনি ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। শেষকৃত্যের জন্য মরদেহ নিয়ে নিমতলা শ্মশানে গিয়েছিলেন মীরাদেবীর আত্মীয়েরা। অন্বেষা বলেন, ‘‘নিমতলায় যেতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা বেজে যায়। রাত পৌনে ১০টা নাগাদ মায়ের অস্থি বিসর্জন দিতে গঙ্গায় নেমেছিলাম। এর পরে কী যে হল, বলে বোঝাতে পারব না!’’ এখনও সেই আতঙ্ক কাটছে না বলে জানালেন প্রত্যক্ষদর্শী, নিমতলা শ্মশান লাগোয়া চায়ের দোকানের কর্মী, সৌমেন হাজরার। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঢেউ আগে কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছিল, সব কিছু ভেঙে নিয়ে চলে যাবে। শুধু বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার কানে আসছিল।’’

বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আগের রাতে গঙ্গার জলোচ্ছ্বাসের চিহ্ন স্পষ্ট। গঙ্গা লাগোয়া সিঁড়ির রেলিংগুলি ভেঙে উঠে এসেছে পাড়ে। অন্বেষার আত্মীয়দের অভিযোগ, এত বড় ঢেউ যে আসতে পারে, সে সম্পর্কে কেউই সতর্ক করেননি তাঁদের। রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের অবশ্য দাবি, বড় ঢেউ যে আসতে পারে, তা নিমতলা পুলিশ পোস্টকে জানানো হয়েছিল। সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল অন্য ঘাটগুলিতেও। নিমতলা পুলিশ পোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাতের অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি সতর্ক করেছিলেন সকলকেই।’’

এখন দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তর্কে ঢুকতে চায় না মিতালিদেবীর পরিবার। নিউ টাউনে অন্বেষাদের আবাসনেই বাড়ি মিতালিদেবীর। তাঁর পুত্র সায়ন্তন চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনার আগেই মাকে ফোন করেছিল আমার স্ত্রী। শুনেছে, মা বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাচ্ছে। সতর্ক করা হয়েছিল কি না, জানি না। পুলিশ অন্তত আমার মাকে খুঁজে বার করুক।’’

Tide Drowning Nimtala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy