মায়ের সঙ্গে ভূমি। নিজস্ব চিত্র
একুশ দিনের শিশু ডান পা বিশেষ নাড়াচাড়া করছিল না। পা সামান্য এ পাশ-ও পাশ করলেও ত্রিপুরার আগরতলার বাসিন্দা সদ্যোজাত ভূমি রায় যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠত। পরীক্ষা করে দেখা যায়, সমস্যা বেশ জটিল। সফল অস্ত্রোপচারের পরে সেই শিশুকে সুস্থ করেই শনিবার ত্রিপুরার বাড়িতে পাঠাল কলকাতার মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক বাবা বাপ্পাদিত্য রায় ও মা পিয়ালী চক্রবর্তীর মুখে হাসি ফুটিয়ে ভূমিষ্ঠ হয় ভূমি। জন্মের পরে ভূমির ওজন ছিল মাত্র ১.১৬ কিলোগ্রাম! ভূমি যখন একুশ দিনের, তখন ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতি দেখে আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুকন্যাকে ভর্তি করেন বাবা। আগরতলার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা লক্ষ্য করেন, ভূমির ডান পায়ের ঊরু ফুলে গিয়েছে। পা নাড়ানোও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করানো হলে দেখা যায়, সদ্যোজাতের ঊরুসন্ধিতে (হিপ জয়েন্ট) পুঁজ জমে রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, দ্রুত অস্ত্রোপচার না হলে সদ্যোজাতের বড় ক্ষতির আশঙ্কা ছিল।
দেরি না করে গত ২০ মার্চ ত্রিপুরা থেকে কলকাতায় এসে মেয়েকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান বাবা। সেখানে চিকিৎসক অতনু জানা পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সার্জন সৌম্য পাইকের কাছে সদ্যোজাতকে রেফার করেন। এমআরআই করানো হলে তাতেও ঊরুসন্ধিতে পুঁজ জমে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এ দিন চিকিৎসক সৌম্য পাইক বলেন, ‘‘হিপ জয়েন্ট একটা ক্যাপসুলের মধ্যে থাকে। এই ক্যাপসুল একটা ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগের মতো। অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও ওই ব্যাগের মধ্যে ঢুকে কাজ করবে না। অস্ত্রোপচার করেই পুঁজ বার করতে হত। অস্ত্রোপচার সময়ে না হলে হিপ জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। যার জেরে প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।’’ সৌম্যবাবু জানান, ওইটুকু শিশুর অস্ত্রোপচার সহজ নয়। তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘গর্ভাবস্থায় কিছু সমস্যার জন্য সাত মাসের মাথায় ওই শিশুর জন্ম হয়েছিল। একে অপরিণত শিশু, তার উপরে খুবই কম ওজন। তাকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা খুব মুশকিল। আইসিইউ-তে শিশু যাতে সংক্রামিত না হয়, তার খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’’ ভূমি যে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তা যে সচরাচর দেখা যায় না, সে কথা জানিয়ে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক শিবশঙ্কর গায়েন বলেন, ‘‘শিশুটির হিপ জয়েন্টে পুঁজ জমল কী ভাবে, সেটা জানা জরুরি।’’ ভূমির চিকিৎসকের মতে, অপরিণত শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। এই সমস্যার পিছনে সেটিও একটি কারণ হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
কলকাতার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে এ দিনই সস্ত্রীক ত্রিপুরার বাড়িতে পৌঁছেছেন বাপ্পাদিত্য। চিকিৎসক বাবা বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে যে ভাবে আমার মেয়ের যত্ন নেওয়া হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। তার জন্যই আমার মেয়ে এখন সুস্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy