Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik 2020

নিজের সঙ্গেই যুদ্ধে জয়ী কৃতী ছাত্রী

মাধ্যমিকে মেয়ের ভাল ফল হবে, এমন আশা ছিল বাবা-মায়ের। নিয়মিত প্রথম সারিতে থাকা অন্বেষাকে নিয়ে স্কুলের আশাও কিছু কম ছিল না।

মা-বাবার সঙ্গে অন্বেষা বিশ্বাস। বুধবার, বরাহনগরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

মা-বাবার সঙ্গে অন্বেষা বিশ্বাস। বুধবার, বরাহনগরের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ০১:৩৬
Share: Save:

নিয়মিত স্কুল যাওয়ায় প্রথম ছেদ পড়ে যখন সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। একটানা স্কুল না-যাওয়ার সেই শুরু। আবৃত্তি, আঁকা, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিয়ে আসা মেয়েটির সেই বছরই স্কুলের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শেষ অংশগ্রহণ। এর পর থেকে কখনও হাসপাতাল, কখনও বাড়ির চার দেওয়ালের গণ্ডির মধ্যেই আটকে থাকতে হয়েছে তাকে। কারণ— এসএলই নেফ্রাইটিস। তবে এই অটো ইমিউন রোগের থাবায় বদ্ধ জীবনেও অক্ষরের হাতছানি বরাহনগরের সৎচাষিপাড়ার অন্বেষা বিশ্বাসকে বরাবর মুক্তির আনন্দ দিত। অবশেষে সেই আনন্দের স্বীকৃতি মিলল বুধবার। রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুলের ছাত্রীটির এ বছরের মাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৬।

মাধ্যমিকে মেয়ের ভাল ফল হবে, এমন আশা ছিল বাবা-মায়ের। নিয়মিত প্রথম সারিতে থাকা অন্বেষাকে নিয়ে স্কুলের আশাও কিছু কম ছিল না। আর অন্বেষা? হাল্কা হেসে কিশোরী বলে, “বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। কবে হবে জানি না। সাড়ে চার মাস বাড়ির বাইরে যাইনি। সব মিলিয়ে মন তো খারাপ ছিলই। এই খবরে ভাল লাগছে।” দিনে ছ’-সাত ঘণ্টার বেশি পড়তে পারত না অন্বেষা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রিয় বিষয় ছিল অঙ্ক। এখন অবশ্য বেশি ভাল লাগে জীবনবিজ্ঞান। মাধ্যমিকে সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে অপছন্দের ইতিহাসে— ৯৩। আর অঙ্ক ও ভূগোলে সেঞ্চুরি হাঁকানো অন্বেষার চোখে এখন ডাক্তার হতে চাওয়ার স্বপ্ন।

২০১৪ সালে অন্বেষার বাবা-মা বিশ্বজিৎ এবং পারমিতা বিশ্বাস প্রথম জানতে পারেন মেয়ের এই অসুখের কথা। অন্বেষার জ্বর তখন কোনও ভাবেই কমছিল না। হাত-পা ফুলে উঠছিল। রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে, প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত প্রোটিন। কারণ খুঁজতে গিয়ে একের পর এক পরীক্ষা শুরু হল। চিকিৎসক জানালেন, এসএলই নেফ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু রোগ থমকে দিতে পারেনি ছোট্ট মেয়েটিকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন দম্পতি। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ফলিত গণিত বিভাগের টেকনিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট বিশ্বজিৎবাবু জানাচ্ছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি থাকা, ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন, কড়া মাত্রার স্টেরয়েড, ইমিউনিটির ওষুধ, নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসক দেখানো― এ সবেই সীমাবদ্ধ অন্বেষার ভাল থাকা।

এমন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে অন্বেষার এই সাফল্য যে অনন্য— সে কথা বলছেন নেফ্রোলজিস্ট উপল সেনগুপ্ত। জানাচ্ছেন, এই অটো ইমিউন ডিজ়িজের পুরো নাম ‘সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমেটস’ (এসএলই)। এটি চুল থেকে পায়ের নখ, শরীরের যে কোনও জায়গায় আক্রমণ করতে পারে। কিডনিকে আক্রান্ত করলে তখনই এর নাম এসএলই নেফ্রাইটিস। উপলবাবু বলেন, “অ্যান্টিবডির মূল কাজ প্যাথোজেনের (বাইরের শত্রু) সঙ্গে লড়াই করা। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি বাইরের শত্রুকে ভুলে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অকেজো করতে থাকে। এই রোগ সারে না। এক জন এসএলই রোগীর কাছে অসুখের পাশাপাশি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধটাও খুব কঠিন। এর মধ্যেও অন্বেষার এই সাফল্য নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের।”

পড়াশোনার বাইরেও ভাল থাকার রসদ পেয়েছে এই কিশোরী। অবসরে আঁকতে ভালবাসে। এ ছাড়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মগ্ন শ্রোতা। আর ভাল লাগে রহস্য। তবে ফেলুদা-ব্যোমকেশ নয়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবুই ওর বেশি প্রিয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik 2020 SLE Nephritis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE