Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Medical College Fire

মেডিক্যালে থ্রি ইডিয়টসের দৃশ্য! অস্ত্রোপচারের মধ্যেই চলে গেল বিদ্যুৎ, কী হল অপারেশন থিয়েটারে?

মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই আগুন-আতঙ্ক ছড়ায় মেডিক্যাল কলেজে! হঠাৎ ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লক থেকে। ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে অনেকটা এলাকায়।

A team of doctors in Medical College operates a patient in mobile flash light

নিভে গিয়েছে অপারেশন থিয়েটারের আলো। মোবাইলের আলোতেই চলছে অস্ত্রোপচার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ২০:১৬
Share: Save:

অপারেশন শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোগীর কিডনিতে টিউমার। অস্ত্রোপচারের জন্য কাটাছেঁড়াও করে ফেলেছিলেন চিকিৎসকদের দল। ঠিক সেই সময়েই নিভে গেল অপারেশন থিয়েটারের আলো!

অপারেশন টেবলে যখন অচেতন রোগীকে নিয়ে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা ঠিক তখনই এল দুঃসংবাদ। জানা গেল, ধোঁয়া বেরোতে শুরু করেছে বিল্ডিংয়ের একটি ঘর থেকে। নিরাপত্তার কথা ভেবেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। কখন আলো ফিরবে কারও জানা নেই!

মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে সেই বিপদের মুহূর্তেই বলিউডের সিনেমা ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো ক্লাইম্যাক্সের অবতারণা।

চিকিৎসক সুনির্মল চৌধুরী ছিলেন অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে। সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। তিনি বলেছেন, ‘‘টর্চের আলোয় অস্ত্রোপচারের কাজ সম্পূর্ণ করার কথা মনে হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু তারই বা উপায় কোথায়! ধোঁয়ায় ভরা হাসপাতালের করিডোর পেরিয়ে টর্চ খুঁজতে যাবে কে? শেষে মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলো জ্বেলে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ পরে যদিও টর্চ এবং মোবাইল দুইয়ের আলোতেই রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হয়। এবং তা নির্ধারিত সময়ের কাছাকাছি সময়েই হয় বলে জানা গিয়েছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে।

‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তিন ছাত্র এক প্রসূতির প্রসব করিয়েছিলেন তাঁদের তৈরি জেনারেটরের আলো ব্যবহার করে। মেডিক্যাল কলেজের অপারেশন থিয়েটারে হুবহু তা না হলেও, সেই টানটান উত্তেজনা এবং যে কোনও মূল্যে রোগীকে সুস্থ করে তোলার ইচ্ছেতে অনেক মিল। চিকিৎসক সুনির্মল জানিয়েছেন, তাঁদের রোগীও অস্ত্রোপচারের পর ভালই আছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই আগুন-আতঙ্ক ছড়ায় মেডিক্যাল কলেজে! হঠাৎ ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লক থেকে। ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে অনেকটা এলাকায়। আগুন লেগেছে— এই ভয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেওয়া হয় দমকলে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমকলের ৩টি ইঞ্জিনও। তবে ধোঁয়া কোথা থেকে আসছে, সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের কোনও ঘরে আগুন লেগেছে কি না তা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যেই সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে ভর্তি রোগীদের আত্মীয়দের মধ্যে ছড়ায় আতঙ্ক। পরে অবশ্য ধোঁয়ার রহস্যভেদ হয়।

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনের সার্ভার রুমে যান্ত্রিক সমস্যার জন্য ধোঁয়া বার হতে শুরু করেছিল। তবে বড় কোনও গোলযোগের আগেই গোটাটা সামলে নেওয়া গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত এসে পৌঁছেছিল পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল চিকিৎসা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগও। সিসিইউ, অপারেশন থিয়েটারের মতো জরুরি বিভাগেরও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

পরে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানানো হয়, সার্ভার রুমের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। রোগীদের কোথাও স্থানান্তরিত না করেই সামলানো গিয়েছে গোটা পরিস্থিতি। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন জরুরি বিভাগের একটি সিসিইউতে ৩০ জন রোগী ছিলেন। তবে কোনও অসুবিধা হয়নি। ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের পর ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনা হয় মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical College Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE