Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Toto Car

Reading: সওয়ারির অপেক্ষায় টোটোয় বসে চালক, চোখ আটকে ইংরেজি বেস্টসেলারে

দিনভর সওয়ারির অপেক্ষা। তবে তার ফাঁকেই শেষ করতে থাকেন একের পর এক বেস্টসেলার বই।

বইয়ের দেশে: বইয়ে মন টোটোচালক মনোতোষ কীর্তনিয়ার।

বইয়ের দেশে: বইয়ে মন টোটোচালক মনোতোষ কীর্তনিয়ার। নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:১৬
Share: Save:

সওয়ারির অপেক্ষায় টোটোয় বসে চালক। তবে চোখ আটকে হাতে ধরা ইংরেজি বেস্টসেলার বইয়ের পাতায়। নেপোলিয়ন হিলের লেখা ‘থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটিই গত কয়েক দিন ধরে গোগ্রাসে পড়ে চলেছেন। শেষ হলেই ধরবেন তাঁর আসনের নীচে রাখা আর একটি বেস্টসেলার— জর্জ এস ক্লাসনের ‘দ্য রিচেস্ট ম্যান ইন ব্যাবিলন’। ভিআইপি রোডের হলদিরাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে রিকশা-টোটো স্ট্যান্ডে এ ভাবেই বই মুখে করে বসে থাকেন বছর পঁচিশের মনোতোষ কীর্তনিয়া।

প্রতিদিন সকাল সাতটায় টোটো নিয়ে স্ট্যান্ডে চলে আসেন মনোতোষ। তার পরে দিনভর সওয়ারির অপেক্ষা। তবে তার ফাঁকেই শেষ করতে থাকেন একের পর এক বেস্টসেলার বই। সিটের নীচে রাখা বইটি দেখিয়ে বললেন, “পয়সা জমিয়ে এই বইটা কিনেছি। হাতেরটা শেষ করেই এটা ধরব।” তবে শুধু বই পড়ে শেষ করাই নয়, তা থেকে পরামর্শ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনও দিন নিজের পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করাটাই তাঁর স্বপ্ন।

গোবরডাঙার বাসিন্দা মনোতোষ রুজির টানে থাকেন তেঘরিয়ায় মামার বাড়িতে। বছর দুয়েক আগে গোবরডাঙা হিন্দু কলেজ থেকে স্নাতক হন। কিন্তু তার পরে সংসারে আর্থিক অনটনের জেরে পড়াশোনায় দাঁড়ি টানতে বাধ্য হন। মনোতোষের কথায়, “বাবা আগে রিকশা চালাতেন। আমি বাবার সেই সাধারণ রিকশাকে টোটোয় পাল্টে নিয়েছি। তবে বই পড়ার নেশা ছাড়তে পারিনি।”

স্নাতক হওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেছিলেন মনোতোষ। কিন্তু কোথাওই ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এর পরে কিছু দিন একটি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। কিন্তু বেশিদিন তা ভাল লাগেনি। তাঁর কথায়, “ওই কাজে কোনও স্বাধীনতা ছিল না। নিজে স্বাধীন ভাবে থাকতে পারব ভেবেই টোটো চালানো শুরু করি। তবে সব সময়ে তো সওয়ারি মেলে না। তাই বই পড়ার নেশাটা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।” তবে তাঁর বইয়ের নেশা খানিকটা অবাক করেছে ওই টোটোস্ট্যান্ডের বাকি চালকদের।

আদতে বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্র হলেও ইংরেজি বইয়ের দিকেই মনোতোষের ঝোঁক বেশি। কেন? মনোতোষ জানাচ্ছেন, ইংরেজির থেকে বাংলায় তাঁর দখল বেশি। তবে ইংরেজি বই পড়তে পড়তে সেই ভাষার চর্চাটাও হয়ে যায়। আর জীবনে সাফল্য পেতে ইংরেজি ভাষার উপরে দখল থাকাটাও জরুরি বলে মনে করেন তিনি। তাই একের পর এক অনুপ্রেরণামূলক ইংরেজি বই পড়েন। আর কোথাও সমস্যা হলে?

ওই যুবকের জবাব, “বই পড়তে গিয়ে কোনও ইংরেজি শব্দের অর্থ বুঝতে না পারলে তার জন্য মোবাইলের একটি অ্যাপ রয়েছে।”

তবে গল্প-উপন্যাস নয়, পঁচিশের ওই তরুণ তুর্কীর পছন্দের তালিকায় রয়েছে একের পর এক এমন বই, যার থেকে আত্মবিশ্বাস আর অনুপ্রেরণা পান তিনি। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের ‘লার্নিং হাউ টু ফ্লাই: লাইফ লেসনস ফর দ্য ইয়ুথ’ বইটা পড়ার ইচ্ছা রয়েছে মনোতোষের। এর পরে টাকা জমিয়ে সেই বইটাই কিনবেন। এ ছাড়াও পছন্দের তালিকায় রয়েছে ‘বিলিভ ইন ইয়োরসেল্ফ’, ‘দ্য পাওয়ার অব পজ়িটিভ অ্যাটিচিউড: ইয়োর রোড টু সাকসেস’। মনোতোষের কথায়, “টোটো চালানোর মধ্যে কোনও গ্লানিবোধ নেই। কিন্তু জীবনটাকে টোটো চালানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। মাইক্রোফিনান্সের ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু তার জন্য পুঁজি দরকার।” তবে টোটোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সাধারণ রিকশার থেকে বেশি, ফলে পুঁজির পরিমাণ বাড়াতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।

তত দিন টোটোয় বসেই চলবে মনোতোষের বই পড়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Toto Car TotoDriver reading
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE