E-Paper

কোর্ট পেপারে সই করে দেড় লক্ষ টাকায় ‘হাতবদল’ শ্যামবাজারের ফুটপাথ! শুনে কী বললেন মেয়র

মণিকা জানা, শ্যামবাজার এলাকার কৃষ্ণরাম বসু স্ট্রিটে থাকেন। বছর পঁয়ত্রিশের পার্থের থেকেই তিনি দোকানটি নিয়েছিলেন। সেই সময়ে ৩৫ হাজার টাকাও দেন দোকানের নিরাপত্তা বাবদ।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫২
A Photograph of  a woman who raised a woman regarding legal issue of a property

প্রমাণ: ফুটপাত ‘কেনার’ কোর্ট পেপার দেখাচ্ছেন মণিকা। সোমবার।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

দখল করা ফুটপাতে সাড়ে চার ফুট জায়গা। সেটাই আবার দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক জন আর এক জনকে আজীবন ‘ভোগ-দখলের অধিকার’ দিচ্ছেন! এমনকি, কোর্ট পেপারে দু’পক্ষের সইসাবুদ করে লেখাও হয়ে থাকছে সে কথা। গত শুক্রবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোন করে এক মহিলা শ্যামবাজার চত্বরের ফুটপাতে জায়গা ‘কিনেও’ বসতে না পারার অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরেই সামনে আসতে শুরু করেছে ফুটপাত ঘিরে টাকা লেনদেনের এমনই অজস্র অনিয়মের কথা।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এমন লেনদেন পুরোটাই বেআইনি। আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’’ পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমারও বলেন, ‘‘দু’পক্ষেরই কড়া শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।’’ প্রশ্ন হল, তা হলে কি পুরসভার নাকের ডগায় চলা এমন অনিয়মের কথা তাঁরা আগে জানতেন না?

কাশীপুরের রতনবাবু রোডের বাসিন্দা, মণিকা জানা নামে অভিযোগকারী মহিলার দাবি, বছরকয়েক আগে তিনি শ্যামবাজারের ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ের একটি ফুটপাতের দোকান মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। ওই দোকানটি আগে চালাতেন পার্থ দাস নামে এক ব্যক্তি। তিনি শ্যামবাজার এলাকার কৃষ্ণরাম বসু স্ট্রিটে থাকেন। বছর পঁয়ত্রিশের পার্থের থেকেই তিনি দোকানটি নিয়েছিলেন। সেই সময়ে ৩৫ হাজার টাকাও দেন দোকানের নিরাপত্তা বাবদ। সবটাই কোর্ট পেপারে লেখা রয়েছে। মণিকা বলেন, ‘‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্থ আমাকে জানায়, ওর টাকার দরকার। তাই দোকানটা বিক্রি করে দিতে চায়। তখন দেড় লক্ষ টাকায় রফা হয়। আগে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া ছিল। ফলে আরও ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা দিই। দু’পক্ষই কোর্ট পেপারে সই করি। সবটাই ভিডিয়ো করা রয়েছে।’’

এর পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে হৃদ‌্‌রোগে মারা যান পার্থ। তাঁর স্ত্রী, বছর বাইশের মঞ্জরী বসাক এখনও উত্তর কলকাতার একটি কলেজে পড়েন। তাঁদের বছর দেড়েকের একটি ছেলে রয়েছে। পার্থের মৃত্যুর পরেই দোকানটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয় তাঁর পরিবারের তরফে। তাতেই গোল বাধে। পার্থের দাদা বাবুয়া দাস বলেন, ‘‘ভাই মারা যাওয়ার পরে আমরা দোকানটা আর ভাড়া দেব না ঠিক করি। তখন মণিকা বলতে শুরু করেন, সেটা নাকি ওঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। স্বামীহারা হয়ে ছেলেকে নিয়ে মঞ্জরী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এই জন্যই দোকানটা ছেড়ে দিতে বলি। স্থানীয় নেতাদের জানিয়েছিলাম। এর পরে এক দিন ঝামেলা হওয়ায় মণিকা থানায় অভিযোগ করে বসেন। সেই নিয়ে প্রায়ই আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে আমাদের।’’ পার্থের স্ত্রী মঞ্জরীর কথায়, ‘‘ছেলেকে নিয়ে সংসার টানা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক দিক থেকেই ওই মহিলাকে দোকানটা ছেড়ে দিতে বলেছিলাম। এখন তো শুনছি, মেয়রের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন।’’ তবে এই আইনি জটিলতার মধ্যেই ওই দোকান নতুন করে চালু করে দেওয়া হয়েছে সোমবার।

এ দিনই শ্যামপুকুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল মণিকাকে। সেখানে ঢোকার মুখে তিনি বলেন, ‘‘দোকানটা না পেলে অন্তত টাকাটা ফেরত দেওয়া হোক। যা নিয়ে এত ঝামেলা চলছে, সেই দোকান এ দিন থেকেই বা চালু করে দেওয়া হল কী করে?’’ মহিলার আরও দাবি,মেয়রকে জানানোর আগে তিনি শ্যামপুকুর থানায় গিয়েছিলেন। রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার পুরপ্রতিনিধিরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সুরাহা মেলেনি। মহিলার দাবি, তদন্ত করা তো দূর, পুলিশ-প্রশাসনের কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বাড়াতে রাজি হননি। প্রায় সকলেই বলে দিয়েছিলেন, ‘‘ফুটপাতে জায়গা কেনার সময়ে কি আমায় জিজ্ঞাসা করে টাকা দিয়েছিলেন?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Property Dispute Talk to Mayor Shyambazar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy