E-Paper

দারিদ্র নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙার গল্প নোবেলজয়ী দম্পতির হাত ধরে

এস্থার দুফলোর বলা গল্প এবং শেন অলিভিয়ের আঁকা ছবিতে ছোটদের জন্য অর্থনীতির গল্পের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে শহরের স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতার আসরটি বসেছিল আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫০
আলোচনা: বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) সিনে অলিভিয়ের, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলো। সোমবার, আইসিসিআরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

আলোচনা: বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) সিনে অলিভিয়ের, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এস্থার দুফলো। সোমবার, আইসিসিআরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

গরিব মানুষের জন্য নগদ না নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর জোগান— কোন পথে কমবে দারিদ্র?

মঞ্চে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতির দিকে কমলা গার্লস স্কুলের এক ছাত্রী মারফত ধেয়ে এল প্রশ্নটা। সোমবার সন্ধ্যায় এস্থার দুফলো ওই প্রশ্নের জবাব দিতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এগিয়ে দিলেন। অভিজিৎ বললেন, ‘‘আমরা গরিবদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবি। যেন উল্টোপাল্টা খরচে সব উড়িয়ে দেবে। এই ধারণা সব সময়ে ঠিক নয়।’’ ইন্দোনেশিয়ার গ্রামের একটি দৃষ্টান্ত মেলে ধরে অভিজিৎ বোঝালেন, ‘‘অনেক সময়ে গ্রামে ভাত তুলে দেওয়া হলেও বিস্তর অপচয়, অপব্যবহার হতে পারে। কিন্তু চাল কেনার ভাউচার হাতে থাকলে সাধারণ মানুষ সময় মতো যথাস্থানে গিয়ে তা সংগ্রহ করবেন। দারিদ্র হটাতে এটা অনেক বেশি কাজের। সব কিছু সরবরাহের ঝকমারি, সরকার নিজের হাতে রাখলেই তা কাজে আসে না।’’

এস্থার দুফলোর বলা গল্প এবং শেন অলিভিয়ের আঁকা ছবিতে ছোটদের জন্য অর্থনীতির গল্পের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে শহরের স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে আলাপচারিতার আসরটি বসেছিল আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে। কয়েকটি বাছাই প্রশ্ন নিয়েই আলোচনা করলেন নোবেলজয়ীরা। দারিদ্র হটানো নিয়ে অভিজিতের উত্তর শুনে অন্য একটি স্কুলের ছাত্রীও প্রশ্ন করলেন, তা হলে কি টাকা দিয়েই সব সমস্যার মুশকিল আসান? এস্থার কিন্তু বোঝালেন, না টাকা সব পারে না। গত কয়েক বছরে ভারত জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কথা তুলেও তিনি বোঝালেন, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে তো সরকারের সক্রিয় ভূমিকা সব সময়েই জরুরি। এর আগে অভিজিৎও বলেছিলেন, ‘‘আমেরিকায় কোভিডের টিকার মতো সমস্যায় আবার সব কিছু সাধারণ মানুষের উপরে ছেড়ে সুবিধা হয়নি। টিকা প্রয়োগ কার্যকর করতেও সরকারের সক্রিয় ভূমিকা থাকা চাই।’’

কারা গরিব? বস্তির স্কুলছুট মজুরদের ঘরেও কী করে শোভা পায় টিভি, মোটরবাইক বা ইন্টারনেট সংযোগ? এমন নানা প্রশ্ন মন দিয়ে শুনেছেন নোবেলজয়ীরা। এস্থার বললেন, ‘‘শুধুমাত্র আয়-ব্যয়ের ক্ষমতায় কাউকে গরিব বলা যায় না। ভাল স্কুল বা স্বাস্থ্যের অভাব, মেয়েদের পছন্দের কাজ না-পাওয়াও দারিদ্র।’’ আবার অভিজিৎ বুঝিয়েছেন, ‘‘যিনি গরিব, তাঁরও বিলাসিতা বা বিনোদনের অধিকার আছে। গরিবের ঘরে টিভি দেখলে তা নিয়ে কটাক্ষের অধিকার কারও নেই।’’ নানা প্রশ্নে চমৎকৃত হয়ে কলকাতার নোবেলজয়ী ঘরের ছেলে বলেছেন, ‘‘এটাই চেয়েছিলাম! এমন আড্ডার আসরেই অনেক সহজে জটিল অর্থনীতি বোঝা যায়।’’

অনুষ্ঠানটির নেপথ্যে অন্যতম উদ্যোক্তা লিভার ফাউন্ডেশন-এর কর্ণধার, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীও শুরুতেই গল্পের মোড়কে অর্থনীতির কচকচি বোঝানোর জন্য এস্থার এবং অলঙ্করণ-শিল্পী শেনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। ইংরেজি, বাংলা-সহ ছ’টি ভারতীয় ভাষায় এ দিনই প্রকাশিত হল এস্থারের লেখা পাঁচটি গল্পের সিরিজ়। পাতায় পাতায় শেনের আঁকা রংচঙে ছবি। বাংলা তর্জমায় ‘গোড়ার কথা’ (হিন্দিতে বুনিয়াদি বাতেঁ)-র গল্পগুলি দেখাচ্ছে, আর্থসামাজিক নীতি কী ভাবে গরিব মানুষের জীবন উন্নত করতে পারে। নিজের বই প্রসঙ্গে এস্থার বললেন, ‘‘আমি আট বছর বয়সে পড়েছিলাম, কলকাতায় এত ভিড় এবং দারিদ্র যে, সবাই এক বর্গমিটার জমিতে ঘুমোতে বাধ্য হয়। খুব কষ্ট হয়েছিল। ভুল ধারণা ভাঙতে অনেক সময় লাগে। দারিদ্র নিয়ে ছোটদের মনে নানা ভুল ধারণা ভাঙতেও লিখতে চেয়েছি।’’ ‘পুয়োর ইকনমিক্স’-এর নতুন সংস্করণে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঢুকবে বলেও জানিয়েছেন নোবেলজয়ী দম্পতি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abhijit Banerjee Economy Poverty

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy