Advertisement
E-Paper

কালীঘাটে দম্পতিকে কোপানোয় অভিযুক্তের দেহ উদ্ধার হাওড়ায়

কালীঘাটে এক দম্পতিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে তার নাম উঠে এসেছিল। পুলিশ তার খোঁজও করছিল শনিবার সন্ধ্যা থেকে। কিন্তু কালীঘাটের ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে, রবিবার সকালে সেই অভিযুক্ত রোশনলাল বরদিয়ার (৪১) মৃতদেহ মিলল হাওড়ার রোজমেরি লেনের একটি অতিথিশালায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৬
হাওড়ার অতিথিশালার সিসিটিভি ফুটেজ। —নিজস্ব চিত্র।

হাওড়ার অতিথিশালার সিসিটিভি ফুটেজ। —নিজস্ব চিত্র।

কালীঘাটে এক দম্পতিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে তার নাম উঠে এসেছিল। পুলিশ তার খোঁজও করছিল শনিবার সন্ধ্যা থেকে। কিন্তু কালীঘাটের ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে, রবিবার সকালে সেই অভিযুক্ত রোশনলাল বরদিয়ার (৪১) মৃতদেহ মিলল হাওড়ার রোজমেরি লেনের একটি অতিথিশালায়।

কালীঘাটে জখম দম্পতির আত্মীয় রোশনের পাকস্থলীতে বিষ পাওয়া গিয়েছে বলে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে পুলিশের দাবি। রোশনলাল এক জনের সঙ্গে শনিবার রাতে হাওড়ার ওই অতিথিশালায় ওঠে। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ রোশনলালের সঙ্গী অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে যায়। সব মিলিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।

অতিথিশালায় রোশনলাল যে ঘরে উঠেছিল, সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া একটি থলের মধ্যে দু’টি ভোজালি, দু’টি একনলা দেশি বন্দুক ও কাচের দু’টি খালি শিশি উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই ভোজালি দিয়েই শনিবার রাতে কালীঘাটের বাসিন্দা ওই দম্পতিকে কোপানো হয়েছিল।

কিন্তু একটি অপরাধ সম্পর্কে ধোঁয়াশা কাটার আগেই সেই অপরাধের সন্দেহভাজন অভিযুক্তের রহস্যজনক মৃত্যুতে রহস্য বাঁক দিল অন্য দিকে। রোশনলাল খুন হয়ে থাকলে, তার কারণ কী, সেই ব্যাপারে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ ধোঁয়াশায়।

শনিবার সন্ধ্যায় কালীঘাট মন্দিরের কাছে, কালী টেম্পল রোডে একটি বহুতল আবাসন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নরেন্দ্র জৈন ও তাঁর স্ত্রী সরলাদেবীকে। তাঁরা এখনও হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ওই দম্পতির আত্মীয় রোশনলাল কয়েক জন পেশাদার দুষ্কৃতীকে নিয়ে গিয়ে ওই কাণ্ড করেছে। নরেন্দ্রকে ছাদে নিয়ে গিয়ে মাংস কাটার চপার দিয়ে কোপানো হয়, পরে সরলাকে কোপানো হয় ঘরেই। রোশনের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে নরেন্দ্রর গোলমাল চলছিল বলেও পুলিশ জানতে পারে। তার পর থেকেই রোশন ও তার সঙ্গীদের খোঁজ চলছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে হাওড়ার রোজমেরি লেনের একটি অতিথিশালায় এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন কর্মীরা। তাঁরা ম্যানেজারকে খবর দেন। পরে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ ওই ব্যক্তিকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করার পরে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, শনিবার রাতে কালী টেম্পল রোডে নরেন্দ্র ও সরলা জৈনের উপরে হামলা চালানোর মূলে ওই ব্যক্তিই।

পুলিশ জেনেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রোশননাল তার এক সঙ্গীকে নিয়ে হাওড়ার ওই অতিথিশালায় যায়। সেখানে ঢোকার সময়ে দেখা যায়, রোশনের বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা।

গেস্ট হাউসের কর্মী নবকুমার গায়েনের কথায়, ‘‘হাতে আঘাতের কারণ জিজ্ঞেস করায় ওই ব্যক্তি জানান, দুর্ঘটনার জন্য এমনটা হয়েছে।’’ এর পরে গেস্ট হাউসের ১১২ নম্বর ঘরে ওঠে দু’জন।

রোশনলাল বরদিয়া।

রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ রোশনের সঙ্গীকে গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেন কর্মীরা। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা ওই ঘরের দরজা খুলে দেখেন, বিছানার উপরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে রোশন।

এক অফিসার বলেন, ‘‘রোশন নিজে বিষ খেয়েছিল নাকি ওই সঙ্গী তাকে কৌশলে বিষ খাইয়েছে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সবের আগে ওই সঙ্গীর খোঁজ পাওয়া দরকার।’’ সন্দেহভাজনের হদিস পেতে ওই গেস্ট হাউসের সিসিটিভি-র ফুটেজ থেকে সূত্র পাওয়া যায় কি না, সেটা দেখছে পুলিশ। এক পুলিশ অফিসার জানান, উদ্ধার হওয়া কাচের শিশি দু’টি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

পুলিশ জেনেছে, কাপড়ের ব্যবসায়ী রোশনলালের কারবারে বেশ কিছু দিন ধরে মন্দা চলছিল। নরেন্দ্র জৈনের কাছে মোটা টাকা পাওনা ছিল রোশনলালের। ওই টাকা না পাওয়া নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধকে কেন্দ্র করেই শনিবার রাতে নরেন্দ্র ও তাঁর স্ত্রীর উপরে হামলা চালানো হয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। পুলিশ জানায়, নরেন্দ্র ও সরলা জৈনের মেয়ের উপরেও হামলার ছক কষেছিল রোশনলাল। কিন্তু বাবা-মায়ের চিৎকার শুনে ওই তরুণী ফ্ল্যাট থেকে ছুটে বেরিয়ে যান। তিনিই কালীঘাট থানায় খবর দেন।

রোশনলালের একটি ফ্ল্যাট সল্টলেকে, অন্যটি বাঙুরে। তার স্ত্রী বাঙুরের ফ্ল্যাটেই থাকেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এ দিন ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তালাবন্ধ।

CCTV Footage Kalighat Murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy