Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেতাগিরিতে সায় নেই, অভিনয়ের দিকেই গেল রায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তারকা প্রার্থীদের সুবাদেই কি হার-জিতের ফয়সালা হয়ে গেল, ফিসফাস করছিলেন ওঁরা। ‘পরাজিত পক্ষে’র দু’জন লড়াকু সদস্য।সোম-সন্ধ্যায় ক্যালকাটা ক্লাবের বাগানে এবিপি আনন্দ আয়োজিত ‘নেতা বনাম অভিনেতা’ বিতর্কসভা তখন সবে শেষ হয়েছে।

নেতা বনাম অভিনেতা— বিতর্কসভায় পক্ষে বললেন (ছবিতে বাঁ দিক থেকে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, মানব মুখোপাধ্যায়, অরুণাভ ঘোষ, রাহুল।

নেতা বনাম অভিনেতা— বিতর্কসভায় পক্ষে বললেন (ছবিতে বাঁ দিক থেকে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, মানব মুখোপাধ্যায়, অরুণাভ ঘোষ, রাহুল।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তারকা প্রার্থীদের সুবাদেই কি হার-জিতের ফয়সালা হয়ে গেল, ফিসফাস করছিলেন ওঁরা। ‘পরাজিত পক্ষে’র দু’জন লড়াকু সদস্য।

সোম-সন্ধ্যায় ক্যালকাটা ক্লাবের বাগানে এবিপি আনন্দ আয়োজিত ‘নেতা বনাম অভিনেতা’ বিতর্কসভা তখন সবে শেষ হয়েছে। যাতে কার্যত অভিনেতাদেরই হার হল। দর্শকদের রায়, রাজনীতির মাঠে পর্দার তারকা বা অভিনেতাদের ব্যাটিং তাঁদের মোটে পছন্দ হচ্ছে না।

প্রতিযোগী দু’পক্ষেই অবশ্য অভিনেতাদের পাল্লা ছিল ভারী। রাজনীতিবিদ সাকুল্যে দু’জন। বাম আমলের মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের আইনজীবী-নেতা অরুণাভ ঘোষ এক দিকে ছিলেন। তাঁদের টিমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন ও টলিউডের অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে রাহুল। বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁদের সবাইকেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোক বলা যায়। ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, গায়ক-পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী। কবি-গীতিকার শ্রীজাতরও ইতিমধ্যে বড় পর্দায় অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছে।

বিতর্কের বিষয় ছড়ায় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ‘রাজনীতি শুধু নেতারই কাজ, পর্দাতে থাক অভিনেতা-রাজ’। ধৃতিমান যাকে পাল্টা ছড়ায় বিঁধলেন, ‘সাচ্চা রাজনীতি সকলের কাজ, আমরা ঘুচিয়ে দেব নেতাদের রাজ’।

বিপক্ষে ছিলেন (বাঁ দিক থেকে) ঋতাভরী চক্রবর্তী, শ্রীজাত, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত এবং ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়।

তার আগে অবশ্য সৌমিত্র তর্কের ধরতাইটা দিয়ে ফেলেছেন। দক্ষিণ ভারতে এমজিআর, এনটিআর, জয়ললিতাদের সূত্র ধরে ঠারেঠোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে টালিগঞ্জের সাংসদদের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। ‘‘ওঁদের কোনও রাজনৈতিক শিক্ষা আছে কি? শুধু দল ভারী করতে সংসদে গেলে কী লাভ?’’ প্রশ্ন সৌমিত্রের। তাঁর মতে, ‘‘এ ভাবে সংসদে গিয়ে সুবিধে পাওয়াটা ‘আনআর্মড ইনকাম’। মানে চৌর্যবৃত্তি।’’ সঞ্চালক সুমন দে তথ্য দিলেন, দেব, মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, তাপস পাল, শতাব্দী রায়দের সংসদে কালে-ভদ্রে বিতর্কে যোগ দিতে বা প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে। উপস্থিতির হারও কম। কিন্তু জয়াপ্রদা, জয়া বচ্চন বা শত্রুঘ্ন সিংহের মতো তারকারা তো সংসদে যথেষ্ট সরব। ‘‘তা হলে অভিনেতা-শিল্পীদের রাজনীতি করার বিরুদ্ধে কেন হুইপ জারি করা হবে?’’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন অনিন্দ্য। শ্রীজাত’র মতে, ‘‘সভার বিষয়টা অত্যন্ত বৈষম্যপূর্ণ।’’ ডাক্তার-উকিলরা রাজনীতিতে নামলে অভিনেতারা কেন পারবেন না?। নন্দীগ্রাম গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে এ রাজ্যের নাগরিক আন্দোলনে শিল্পীদের ভূমিকাই বা কী করে উহ্য থাকে! অঞ্জন দত্তের প্রশ্ন, পরিবর্তনকামী নাগরিক আন্দোলনে কোন মুখগুলোর কথা বারবার মনে পড়ে? সেই ‘পরিবর্তনকামী’দের অন্যতম কৌশিক সেন কিন্তু এ দিন অঞ্জনের প্রতিপক্ষ। যিনি ব্যাখ্যা করলেন, নাগরিক আন্দোলন আর দলীয় রাজনীতি এক নয়। দলভুক্ত নেতা-নেত্রীর পায়ে-পায়ে বেড়ি। ‘‘তাঁরা তখন দিল্লি আর পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের প্রেক্ষিত বিচার করেন।’’ নন্দীগ্রাম-পর্বে তাঁর সহযোদ্ধা, অধুনা শাসক দলের নাট্যকর্মী-সাংসদকে এ ভাবেই বিঁধলেন তিনি। রাহুলেরও মত, দলহীন প্রতিবাদীরাই সম্মান পান। সিপিএম নেতা মানব মুখোপাধ্যায়ের ভাঁড়ারে তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কদের অজস্র কুকথার ফিরিস্তি। তাপস পালের ‘রেপ করানোর হুমকি’ থেকে দেব-চিরঞ্জিতদের মন্তব্যে নারীর ‘অসম্মান’-প্রসঙ্গ।

কিন্তু কুকথা কি বায়োস্কোপের লোকেদের একচেটিয়া? রাজনীতির লোকেরা কীসে কম? পাল্টা ফিরিস্তি দিল বিপক্ষ শিবির। শ্রীজাতর খোঁচা, ‘‘এ রাজ্যে তো জেল থেকেই একজন ভোটে লড়ছেন!’’ হেসে ফেললেন অরুণাভ ঘোষ। তবে তাঁর মত, ‘‘অভিনেতা-সাংসদ বা বিধায়কেরা কসমেটিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব তাঁদের লোভ দেখিয়ে পায়ের তলায় নিয়ে এসেছেন।’’ অরুণাভর মন্তব্য, ‘‘রাজনীতির লোকেরা খাট সাজায়, ওঁরা (তারকা) ফুলশয্যা করেন।’’ অনিন্দ্যর জবাব: ‘‘খাট না-সাজিয়ে দেশটা সাজান আপনারা! আমাদের মাদুরেই চলবে!’’

সব থেকে আবেগমথিত মুহূর্তটি কিন্তু উঠে এল তরুণতম বক্তা ঋতাভরীর কথায়। রং দে বসন্তী-র সংলাপ আউড়ে যিনি বললেন, ‘‘দেশ পারফেক্ট হয় না। তাকে পারফেক্ট করে তোলাটা সবার দায়িত্ব।’’ ‘নায়ক’-এর উত্তমকুমার রাজনীতির ছোঁয়াচ বাঁচাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ হল আমির খানের যুগ, যাঁর একটা মন্তব্যেই দেশ জুড়ে ঝ়ড় ওঠে। তা হলে অভিনেতারা কেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন?

প্রশ্ন উঠলেও বেশির ভাগ দর্শক কিন্তু বিপক্ষেই হাত তুললেন।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

actors politicians westbengal tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE