গত তিন সপ্তাহে যা বৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে ৬৯.৯ মিলিমিটার বেশি হয়েছে শেষ ২৪ ঘণ্টায়। বস্তুত, গত ৩৯ বছর পর এক দিনে এমন রেকর্ড বৃষ্টি হল কলকাতা শহরে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলকাতায় ১৭৮.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই ২২ দিনে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৩৫.৭ মিলিমিটার। সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সেই ঘাটতি ধুয়েমুছে সাফ! ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ ২৪৭.৪ মিলিমিটার! এর অধিকাংশই গভীর রাত থেকে ভোর, ৬ ঘণ্টায় হয়েছে।
মৌসম ভবনের তথ্য অনুসারে, সোম থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় দীর্ঘমেয়াদি গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২,৬৬৩ শতাংশ বেশি। বৃষ্টির পরিমাণে এর পরেই রয়েছে হাওড়া। যেখানে দীর্ঘমেয়াদি গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১,০০৬ শতাংশ বেশি। আবহাওয়া দফতর আরও জানাচ্ছে, নিম্নচাপের প্রভাবে পুঞ্জীভূত মেঘ থেকে এত বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে ২৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতায়। সামগ্রিক ভাবে শহরে এটাই বৃষ্টির ষষ্ঠতম রেকর্ড। এক ঘণ্টায় আর ২ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি হলেই এই প্রবল বর্ষণকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা যেত বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
দুপুরেও এক্সাইড মোড়ের সামনে জল জমে! —নিজস্ব চিত্র।
দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিন জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। বাকিদের মৃত্যুর কারণ এখনও অবধি স্পষ্ট নয়।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় সেটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর ওড়িশা উপকূলের উপর অবস্থান করছিল। তা ছাড়া একই সময়ে ওই এলাকায় একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সেটার স্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই দুইয়ের জেরে রাতভর কলকাতায় এত প্রবল বৃষ্টি হয়েছে।
৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত কলকাতা। —নিজস্ব চিত্র।
তার পরে আগামী বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম এবং সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। সেটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার অন্ধ্র এবং ওড়িশা উপকূলের মধ্যবর্তী কোনও স্থানে পৌঁছোতে পারে। এর প্রভাবে কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় মাঝারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
বৃষ্টির গতি কমলেও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার নানা এলাকা জলমগ্ন। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট কম। পুজোর আগে দোকান-বাজারে ক্রেতার সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। দুর্যোগ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “আমি এমন বৃষ্টি কখনও দেখিনি। শুনেছি, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাত-আট জন মারা গিয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, এত মানুষ প্রাণ হারালেন।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি।