Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩

যৌনপল্লি ছেড়ে আইনজীবী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওঁরা

ওঁরা মোট ১৯ জন। ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া শৈশব-কৈশোর। ধ্বস্ত শরীর, ধ্বস্ত মন। তবু নাছোড় জেদ। তীব্র লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। ছিনিয়ে আনতে চাইছেন কাঙ্খিত ন্যায়, অধিকার, মুক্তি।

প্রতিবাদী: (বাঁ দিকে উপর থেকে ) সঙ্গীতা, আশা, কল্যাণী এবং শবনম। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদী: (বাঁ দিকে উপর থেকে ) সঙ্গীতা, আশা, কল্যাণী এবং শবনম। নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

আশা পটাবি। ৯ বছর বয়সে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার যৌনপল্লিতে।

Advertisement

শবনম শিসোদিয়া। ৮ বছর বয়সে নিজেরই বাবা যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

কল্যাণী চক্রবর্তী। ১৬ বছর বয়সে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন অভিভাবকেরা। স্বামী নিজের বন্ধুদের সঙ্গে তাঁকে সহবাসে বাধ্য করেছিল দিনের পর দিন।

সঙ্গীতা মণ্ডল। ৯ বছর বয়সে লোকের বাড়ি কাজে ঢুকে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তার পরে বিক্রি হয়ে যান যৌনপল্লিতে।

Advertisement

ওঁরা মোট ১৯ জন। ছিঁড়েখুঁড়ে যাওয়া শৈশব-কৈশোর। ধ্বস্ত শরীর, ধ্বস্ত মন। তবু নাছোড় জেদ। তীব্র লড়াই করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। ছিনিয়ে আনতে চাইছেন কাঙ্খিত ন্যায়, অধিকার, মুক্তি। নিজেদের জন্য ও নিজেদের মতো আরও অনেক মেয়ের জন্য। বার্তা দিচ্ছেন— যারা তাঁদের মতো অসংখ্য মেয়েকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে, তাদের আর রক্ষা নেই। তাদের শাস্তি দিতে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধে নামতে চলেছে এই মেয়েরা।

যৌন অত্যাচার থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে এঁরা ঠাঁই পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হোমে। সেখানেই নয়া জীবন শুরু। দাঁতে দাঁত চেপে পড়াশোনা করে ভাল নম্বরে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন, স্নাতক হয়েছেন। পরে এক সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘ফ্রি আ গার্ল মুভমেন্ট’-এর মাধ্যমে সামিল হয়েছেন আঘাতকারীদের পাল্টা আঘাত দেওয়ার অভিযানে। ১৯ জনই এখন আইনজীবী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কলকাতার হোম থেকে রয়েছেন আশা, শবনম, কল্যাণী আর সঙ্গীতা।

আরও পড়ুন:সংযত হোক বাহিনী, চান নগরপাল

তাঁরা নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। যাতে নিজেদের ও তাঁদের মতো অন্য নির্যাতিতাদের হয়ে মামলা লড়ে ন্যায় ছিনিয়ে আনতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর, বর্ধমান ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়ে গিয়েছে।

সংস্থার তরফে ফ্রান্সিস গ্রেসিয়াসের কথায়, ‘‘নারী পাচারের ঘটনায় আমাদের দেশে যত জন ধরা পড়ে, তার মধ্যে মাত্র ১০-১৪ শতাংশ শাস্তি পায়। বাকিরা ছাড়া পেয়ে অত্যাচারিত মেয়েদের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ায়। বুক ফুলিয়ে ফের পাচার শুরু করে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই অবস্থা তখনই বদলাবে যখন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা থাকা মহিলাই আইনজীবী হয়ে অন্য নির্যাতিতার পক্ষে আদালতে দাঁড়াবেন, সওয়াল করবেন। কারণ ওই মেয়েদের যন্ত্রণাটা তাঁদের মতো করে আর কেউ বুঝবে না।’’

ঠিক এই কথাটাই বলছেন আশা, শবনম, সঙ্গীতা, কল্যাণীরাও। পাচার হয়ে উদ্ধার হওয়া মেয়েরা বছরের পর বছর আদালতের চক্কর কেটে যায়, সমাজে এক ঘরে হয়ে থাকে আর পাচারকারীরা খুল্লমখুল্লা ঘোরে— এই অন্যায় বন্ধ করাটাই এখন তাঁদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আর এই লড়াইয়ের শুরুতে তাঁরা ঠিক করেছেন, নিজেদের নাম লুকোবেন না। মুখ লুকোবেন না। বরং এমন প্রত্যাঘাত দেবেন যাতে অন্ধকার জগতের কারবারিরা মুখ লুকোতে মরিয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.