Advertisement
E-Paper

শিশুর চিকিৎসার জন্য ‘গ্রিন করিডর’

বুধবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিট। কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলি। আটকে রাখা হল লরি-সহ সমস্ত বড় গাড়ি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৫
পাইলট-সহ চলেছে অ্যাম্বুল্যান্স। বুধবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

পাইলট-সহ চলেছে অ্যাম্বুল্যান্স। বুধবার রাতে। নিজস্ব চিত্র

রাতের যানজটে আটকে ‌অ্যাম্বুল্যান্স। ভিতরে আশঙ্কাজনক এক নবজাতক। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কী ভাবে? মুশকিল-আসান হয়ে দেখা দিল পুলিশ। বেনজির তৎপরতায় রাস্তা ফাঁকা করে তারা তৈরি করে ফেলল ‘গ্রিন করিডর’। সামনে-পিছনে মোটরবাইক পাইলট দিয়ে হুটার বাজিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে বিনা বাধায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হল। এর পরেও অবশ্য শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। তবে এই উদ্যোগ আরও এক বার দেখিয়ে দিল, সদিচ্ছা থাকলে এ ভাবেও পাশে দাঁড়ানো যায় মানুষের।

বুধবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিট। কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলি। আটকে রাখা হল লরি-সহ সমস্ত বড় গাড়ি। সব সিগন্যাল সবুজ করে ফাঁকা রাখা হল গোটা রাস্তা। এ ভাবেই ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করে বালির নার্সিংহোম থেকে শিশুটিকে কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে পাশে দাঁড়াল বালি ট্র্যাফিক পুলিশ। কয়েক মাস আগে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক রোগিণীকে কলকাতায় পাঠাতেও ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করেছিল বালি থানা।

পুলিশ জানায়, রাত ন’টার পরে ‘নো এন্ট্রি’ উঠে গেলে জিটি রোডে লরি ও ট্রেলারের গাড়ির চলাচল শুরু হয়। ঘিঞ্জি রাস্তায় মাঝেমধ্যেই গাড়ি বিকল হয়ে প্রবল যানজট তৈরি হয়। সেই রাতেও তেমনটাই হয়েছিল। বেলুড় থেকে বালি ব্রিজের রাস্তায় ছিল তীব্র জট। তা কাটিয়ে নার্সিংহোম থেকে এক কিলোমিটার দূরে বালি ব্রিজে পৌঁছতেই অন্তত এক ঘণ্টা লেগে যাওয়ার কথা।

রাত দশটা নাগাদ বালির বাদামতলার ওই নার্সিহোমের অধিকর্তা ও চিকিৎসক শিউলি মুখোপাধ্যায় বালি ট্র্যাফিক গার্ডের আইসি কল্যাণ চক্রবর্তীকে ফোন করে তাঁর সাহায্য চান। বিষয়টি শুনেই ট্র্যাফিকের সমস্ত কর্মীকে অ্যাম্বুল্যান্স না বেরোনো পর্যন্ত রাস্তাতেই থাকার নির্দেশ দেন আইসি। দ্রুততার সঙ্গে যানজট কাটিয়ে নার্সিংহোমে পাঠানো হয় অফিসার-সহ পাইলট বাইক। সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ছোটে আর জি করের দিকে।

ওই নার্সিংহোম সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা, ২১ দিনের ওই শিশুটিকে ‘নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এ ভর্তি করা হয়। শিশুটির শরীর নীল হয়ে যাচ্ছিল। ছিল শ্বাসকষ্টও। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, শুইয়ে দুধ খাওয়ানোর সময়ে কোনও ভাবে তা শ্বাসনালীতে ঢুকে গিয়েছে। যার ফলে ফুসফুসে ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন ঠিকমতো যাচ্ছে না। রাতেই শিশুটির রক্ত পরীক্ষা করে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়।

শিউলিদেবী জানান, বুধবার ভোরে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, শিশুটির ‘সিভিয়ার সেপসিস’ হয়েছে। ফুসফুস পুরো দুধে ভর্তি হয়েই ওই সমস্যা বলে অনুমান করেন চিকিৎসকেরা। সকালে কিছুটা উন্নতি হলেও পরে ফের সমস্যা দেখা দেয়।

চিকিৎসকেরা জানান, বিকেলে শিশুটির শিরা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হৃদ্‌যন্ত্রের পেশিও ঠিক মতো পাম্প করছিল না। গলার কাছে ফুটো করে ‘সেন্ট্রাল লাইন’ করার প্রয়োজন থাকলেও এত ছোট শিশুর ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে পারেননি চিকিৎসকেরা। শিউলিদেবী বলেন, ‘‘এর পরেই আমরা ব্যক্তিগত ভাবে আর জি করের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করি। ওঁরা আশ্বস্ত করেন, শিশুটিকে পাঠালে ভর্তি নেওয়া যাবে।’’ তখন নার্সিংহোম থেকেই যোগাযোগ করে দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স আনানো হয়। শিউলিদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ না-থাকলে ওই লরির লাইন কাটিয়ে বেরোনো যেত না। নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে ওঁরা ২০-২৫ মিনিটেই আর জি করে পৌঁছে যান।’’ তবে শিশুটি বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যায়।

হাওড়া সিটি পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্র্যাফিক) শেখর রায় বলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। আমরা মানুষের পাশে আছি। থাকব।’’

Green corridor Treatment Child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy