পুলিশ থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর কাছে তোলাবাজ হিসেবেই পরিচিত সে। সেই পরিচয় আড়াল করতে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনটি রিয়েল এস্টেট সংস্থা গঠন করেছিলেন গিরিশ পার্কে সাব-ইনস্পেক্টরকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারি।
লালবাজার সূত্রের খবর, মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার পরামর্শেই সমাজসেবীর পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছিল গোপাল তিওয়ারি। সে জন্যই ভিন্ রাজ্যেও নিজের ব্যবসার জাল ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল মধ্য কলকাতার ওই দুষ্কৃতী। ইতিমধ্যেই হায়দরাবাদ, উত্তরপ্রদেশ এবং জয়পুরে গোপালের সংস্থা অফিস খুলেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, গোপালের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েই তার বিভিন্ন সংস্থার হদিস পান গোয়েন্দারা। শুক্রবার বিকেলেই গোপালের পাথুরিয়াঘাটের বাড়িতে হানা দিয়ে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত নানা বৃত্তান্ত, সম্পত্তির বিভিন্ন নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গোপাল ও তার স্ত্রীর নামে অ্যাকাউন্ট থাকলেও তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা নেই। গিরিশ পার্কের ঘটনার পরে পালানোর সময়ে গোপাল টাকা সরিয়েছে কি না, তা জানতে ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার পরে দশ দিন কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি গোপাল ও বাকি অভিযুক্তদের। গোয়েন্দাদের মতে, গোপাল ভিন্ রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছে। ভিন্ রাজ্যে গোপালের ব্যবসা থাকায় সেখানে আশ্রয় পেতে তার সুবিধে হবে বলেই মনে করেছেন তদন্তকারীরা। তবে গোপালের সবগুলি মোবাইল ফোন বন্ধ বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, বছর দুয়েক আগে জামিনে জেল থেকে বেড়িয়ে প্রথমে শাসকদলে নাম লেখায় গোপাল। পরে মধ্য কলকাতার ওই নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুযোগে গোপাল জোড়াবাগান, জোড়াসাঁকো, বড়বাজার, পোস্তা-সহ মধ্য এবং উত্তর কলকাতায় প্রোমোটিং ব্যবসা শুরু করে। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘প্রোমোটিংয়ের পাশাপাশি ওই সব এলাকায় তোলবাজিতে গোপাল ছিল এক নম্বর। শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকাতে কেউ তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেনি। সেই তোলাবাজিকে আড়াল করতেই গোপাল বছর দেড়েক আগে ওই তিনটি প্রোমোটিং সংস্থা খোলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে পুলিশ জানতে পেরেছিল, এ বারের পুরভোটে নিজের স্ত্রীকে শাসকদলের প্রার্থী করতে চেয়েছিল গোপাল। কিন্তু এক মন্ত্রী বেঁকে বসায় গোপালের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি।
লালবাজারের কর্তাদের অনুমান, গোপাল নিজের ভাবমূর্তি বদল করতে চেয়েছিল। তাই একের পর এক সংস্থা খুলেছিল সে। তবে এক গোয়েন্দা কার্তার মতে, ব্যবসা বাড়ালেও গোপাল তার তোলাবাজি বা অপরাধমূলক কাজকর্ম বন্ধ করেনি। তার প্রমাণ ভোটের দিনের কলকাতা পুলিশের অফিসার জগন্নাথ মণ্ডলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তার নাম উঠে আসে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, এর মধ্যে চার জন সক্রিয় তৃণমূলকর্মী। বাকি দু’জন গোপালের শাগরেদ বলে দাবি পুলিশের। এই ঘটনায় নাম উঠে আসা রাজু সোনকার, রামু সোনকার ওরফে রামুয়া, বাবলি, মোটা রাজা, দীপক, মনোজ সিংহরাও গোপালের শাগরেদ বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
সোমবার রাতে মোটা রাজা এবং দীপকের খোঁজে লেক টাউনে দীপকের বাড়িতে হানা দেন তদন্তকারীরা। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই বাড়িতে মোটা রাজা এবং দীপক আছে ওই খবর পেয়েই হানা দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্তকারীরা পৌছনর আগেই সেখান থেকে গা ঢাকা দেন অভিযুক্তরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy