E-Paper

‘ভারতে থাকো, হিন্দি জানো না’, দাবিতে দৌরাত্ম্য মেট্রোয়

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১৪
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে। ছবি: সংগৃহীত।

মেট্রো স্টেশনে তির্যক সুরে হিন্দি, ইংরেজিতে খোঁচা দিয়ে চলেছেন এক তরুণী! তিনি বলছেন, ‘‘এটা বাংলাদেশ নয়! ইন্ডিয়া। পশ্চিমবঙ্গ ভারতে। ইন্ডিয়া কা ল্যাঙ্গুয়েজ হ্যায় হিন্দি! ভারতে থাকো, হিন্দি জানো না! তুমি কি বাংলাদেশি?’’ উল্টো দিকে বাংলায় আর একটি তরুণী কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমি বাঙালি, আমি ভারতীয়! এটা আমার মাটির ভাষা।’’ এর পরে বাংলা বলার জন্য হিন্দিভাষী তরুণী তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন, ‘‘আমি মামলা করব (আই উইল স্যু হার)।’’

এমনই একটি দৃশ্যের ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) এখন সমাজমাধ্যমে এবং অনেকের ফোনে ফোনে ঘুরছে। বাংলাভাষী মেয়েটি জানান, গত ১৮ নভেম্বর ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে। এই ঝামেলার জেরে তিনি এবং অন্য মেয়েটি পাঁচ ঘণ্টারও বেশি আটকে ছিলেন সেখানে। শক্তিরূপা সাধুখাঁ নামে ওই তরুণীর অভিযোগ, ‘‘আমি হিন্দি বা কোনও ভাষাকে অসম্মান করিনি। কিন্তু বাংলা বলার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আমায় বাংলাদেশি বলা হল! মেট্রো, আরপিএফ সব ধামাচাপা দেয়। আমায় বাংলাদেশি বলার জন্য লিখিত অভিযোগ ওরা জানাতে দেয়নি। হিন্দিভাষী মেয়েটির তো দেশের ভাষা বৈচিত্র নিয়েই ধারণা নেই। ওর ব্যবহারে দেশের সংহতি ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’’ হিন্দিভাষী মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে আরপিএফের দাবি, হিন্দিভাষী তরুণী শক্তিরূপাকে ‘বাংলাদেশি’ বলার জন্য মুখে-মুখে ক্ষমা চেয়েছেন। শক্তিরূপা কথা কাটাকাটির সময়ে ভিডিয়ো করছিলেন। তবে সেই ভিডিয়ো তাঁকে মুছতে বাধ্য করে মুচলেকা লেখানো হয় বলেও অভিযোগ। জনপ্রশাসন (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) বিষয়ের ছাত্রী শক্তিরূপা বলছেন, ‘‘আমার চাকরি, পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখিয়ে আমায় ভিডিয়ো মুছতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়াও, লিখে দিতে হয়েছে যে, আমি কোনও পদক্ষেপ করব না!’’ তবু ঘটনাটির ভিডিয়ো কোনও ভাবে নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হইচই শুরু হয়েছে।

অনেকেরই প্রশ্ন, ‘আমার মেট্রো’ বলে বাংলায় ঢালাও প্রচারের পরে মেট্রো চত্বরে বাংলা বলার জন্য কোন যুক্তিতে এক জন হেনস্থা হবেন? মেট্রো কর্তৃপক্ষও এর দায় এড়াতে পারেন না বলে অভিযোগ তাঁদের। প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসু ঘটনাটি শুনে স্তম্ভিত। তিনি বলছেন, ‘‘ভারতে থাকলে হিন্দি জানতে হবে, মানে কী? ভারতের কোনও রাষ্ট্রভাষা নেই। সংবিধান মতে, হিন্দি এবং ইংরেজি সরকারি ভাষা বা যোগাযোগের ভাষা। কিন্তু দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনার ভিত্তিই রয়েছে বিভিন্ন ভাষার বৈচিত্রে। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি কাজে বাংলারও নিয়মিত ব্যবহার। হিন্দি চাপানোর চেষ্টায় এর আগে দক্ষিণ ভারত, উত্তর-পুবে আগুন জ্বলেছে। সংবিধানের অষ্টম তফসিল অনুযায়ী, হিন্দি, বাংলা-সহ ২২টি স্বীকৃত ভাষারই সমান মর্যাদা।’’ অনেকেই বলছেন, কেউ বাংলা না-জানতে পারেন। হিন্দিও না-জানতে পারেন। ভদ্র ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া উচিত। তার বদলে হিন্দিভাষী মেয়েটির কথায়, শরীরী ভাষায় রীতিমতো ঔদ্ধত্য ফুটে উঠেছে বলে অভিযোগ। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানান, আরপিএফের কাছে খবর পেয়ে তাঁরা মিটমাটের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশও সাহায্য করে। শিবাজীপ্রতিমের মতে, ‘‘এ তো দেখছি, সেই হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান চাপানোর রোগ। ভারত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে এমন আচরণ
চলে না।’’

শক্তিরূপা বলেন, ‘‘দেশের জাতীয় সঙ্গীত তো বাংলায়। বাঙালি হওয়া, ভারতীয় হওয়া অবিচ্ছেদ্য সত্তা। পরেও এমন ঔদ্ধত্যের সামনে নিজের ভাষায় জবাব দেব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

metro Bengali West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy