Advertisement
E-Paper

চাঁদা না পেয়ে দোকান ‘সিল’

এ দিন সকালে নতুনবাজারে মিষ্টির দোকান খুলতে এসে মালিক সুব্রত কুন্ডু দেখেন, শাটারের চাবি ঢোকানোর জায়গাটি সিমেন্ট দিয়ে কেউ বুজিয়ে দিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০১
বিক্ষোভ: দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ ব্যবসায়ীদের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বিক্ষোভ: দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ ব্যবসায়ীদের। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বিক্ষোভ: দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাস্তা অবরোধ ব্যবসায়ীদের। (নীচে) এ ভাবেই সিমেন্ট দিয়ে সিল করা হয়েছে দোকানের শাটার (চিহ্নিত)। শুক্রবার, দমদম ক্যান্টনমেন্টের নতুনবাজারে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কার‌ও কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা! কার‌ও কাছে দাবি ছিল, পুজোর বিজ্ঞাপন দিতে হবে। যাঁরা রাজি হননি, শুক্রবার সকালে তাঁরাই দেখলেন, কেউ বা কারা দোকান সিল করে দিয়েছে! দমদম ক্যান্টনমেন্টের নতুনবাজারের এই ঘটনায় অভিযোগের তির একটি কালীপুজো কমিটির দিকে। সেই পুজো কমিটিকে কাঠগড়ায় তুলে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর জগন্নাথ বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, “পুজোর নামে তোলাবাজি চলছে!” ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দমদম থানা পুজো কমিটির সম্পাদক বিবেকানন্দ দে (বিরু), তাঁর ভাইপো রামচন্দ্র দে এবং ক্লাবের আর এক সদস্য এবং টিএমসিপি নেতা তপু বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

এ দিন সকালে নতুনবাজারে মিষ্টির দোকান খুলতে এসে মালিক সুব্রত কুন্ডু দেখেন, শাটারের চাবি ঢোকানোর জায়গাটি সিমেন্ট দিয়ে কেউ বুজিয়ে দিয়েছে। সুব্রতবাবুরা তিন ভাই। ওই বাজারে তাঁদের আরও তিনটি দোকান রয়েছে। দেখা যায়, সেগুলির‌ও এক‌ অবস্থা। একে একে জানা যায়, বাজারে চাল ব্যবসায়ী সন্তোষ দাস, মুদিখানার মালিক সুশীল সাহা, শ্রীমা রোডে রেস্তরাঁর মালিক নীলম বিশ্বাস, কেব্‌ল ব্যবসায়ী অমিত প্রামাণিক এবং সেলুনের মালিক উত্তম পাত্রের দোকানেও এক‌ই ঘটনা ঘটেছে। নতুনবাজার চার নম্বর ওয়ার্ড ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সত্যজিৎ পালের অভিযোগ, মোট দশটি দোকানে এই কাণ্ড ঘটেছে।

এ ভাবেই সিমেন্ট দিয়ে সিল করা হয়েছে দোকানের শাটার (চিহ্নিত)। শুক্রবার, দমদম ক্যান্টনমেন্টের নতুনবাজারে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

মিষ্টির দোকানের মালিক সুব্রতবাবু বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুজো কমিটির সম্পাদক বিবেকানন্দ দে, তাঁর ভাইপো রামচন্দ্র দে-সহ আর‌ও কয়েক জন দোকানে এসে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা চায়। আমি বলি, গত বছর আড়াই হাজার দিয়েছিলাম। এ বার তিন হাজার দিতে পারি। ওরা বলল, ৪০ হাজার টাকাই দিতে হবে। আমি রাজি হইনি। তার পরে সকালে এই ঘটনা।” রেস্তরাঁর মালিক নীলম বিশ্বাস বলেন, “আমাকে ওরা বলল, পুজোয় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। রাজি না হ‍ওয়ায় বলল, রসিদ ফেলে দিয়ে গেলে কী করবেন! আট বছর এখানে ব্যবসা করছি। এমন গুন্ডারাজ আগে দেখিনি।” সেলুনের কর্মচারী মধুসূদন দাস বলেন, “আমাদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছিল। বললাম, মালিকের সঙ্গে কথা বলতে।” মুদিখানার মালিক সুশীল সাহার কথায়, “বলছে, এ বার বাজেট বেশি। তাই হাজার টাকা দিতে হবে।”

যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে রবীন্দ্রনগর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি পুজো কমিটির সম্পাদক বিবেকানন্দ দে বলেন, “কেউ কি চাঁদার কোন‌ও রসিদ দেখাতে পারবেন? আমাদের পুজোকে বদনাম করতে রাজনৈতিক চক্রান্ত চলছে। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হল।” এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ দোষীদের শাস্তির দাবিতে নতুনবাজার মোড় অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে ৪০ মিনিট পরে অবরোধ ওঠে।

কার‌ও নাম না করে চালের দোকানের মালিকের বক্তব্য, “পুজো কমিটির লোকেরা তৃণমূল করেন। তবে আমাদের কাউন্সিলরের এ সবে সায় নেই। এদের জন্যই তৃণমূলের নাম খারাপ হচ্ছে।” ব্যবসায়ীদের সুরেই স্থানীয় কাউন্সিলরের মন্তব্য, “অভিযুক্তেরা দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ডের শান্ত পরিবেশকে নষ্ট করছে। দিনদিন ওরা সীমা লঙ্ঘন করছে।” কিন্তু কাউন্সিলর পক্ষে না থাকলে অভিযুক্তদের তৃণমূল যোগের ভিত্তি কী? স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিযুক্তেরা দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পালের অনুগামী। এ দিন তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল। প্রবীরের ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তপুকে জড়ানো হচ্ছে। কারণ সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। পুরো ঘটনায় আদৌ অভিযুক্তেরা জড়িত কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ।

Donation Kali Puja Torture Dumdum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy