Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মেট্রো স্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার অভিযোগ

সব শুনে মেট্রো রেলের এক উচ্চপদস্থ অাধিকারিকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কী দরকার ছিল এত ভিড় ট্রেনে ওঠার? নিত্যযাত্রী হয়েও স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করেন না কেন? ওঁকে আটকে রাখা হয়নি। বসিয়ে রাখা হয়েছিল। উচিত ছিল, আরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া।’’

এমন ভিড় মেট্রোতেই ধাক্কাধাক্কির ফলে টোকেন পড়ে যায় চন্দ্রিকার হাত থেকে। নিজস্ব চিত্র

এমন ভিড় মেট্রোতেই ধাক্কাধাক্কির ফলে টোকেন পড়ে যায় চন্দ্রিকার হাত থেকে। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

সময় মেনে না চলার অভিযোগ আছেই। পুরনো রেক চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির কারণে প্রায়ই মেট্রোর ছন্দ কেটে যাওয়ার অভিযোগও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বার টোকেন হারিয়ে ফেলা এক তরুণীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠল মেট্রোর এক স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জরিমানার টাকা না থাকায় ওই তরুণীকে স্টেশন মাস্টারের ঘরে চার পুরুষ অফিসারের সামনে এক ঘণ্টা বসিয়ে আরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তাঁকে বাড়িতে ফোন করতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। দেওয়া হয়নি ডেবিট কার্ড ব্যবহারের অনুমতিও। তরুণীর পরিবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

সব শুনে মেট্রো রেলের এক উচ্চপদস্থ অাধিকারিকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কী দরকার ছিল এত ভিড় ট্রেনে ওঠার? নিত্যযাত্রী হয়েও স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করেন না কেন? ওঁকে আটকে রাখা হয়নি। বসিয়ে রাখা হয়েছিল। উচিত ছিল, আরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া।’’ কিন্তু তরুণী তো কার্ডের মাধ্যমে জরিমানা দিতে চেয়েছিলেন? ওই আধিকারিকের দাবি, ‘‘এটিএম থেকে টাকা তুলে যে তিনি জরিমানা দিতেন, তার ভরসা কোথায়? আর কার্ড সোয়াইপের যন্ত্র আমাদের নেই।’’ প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র প্রচার চলছে দেশ জুড়ে, সেখানে মেট্রো স্টেশনে জরিমানার জন্য প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেই কেন? আধিকারিকের সাফাই, ‘‘কাউন্টারে ওই যন্ত্র আছে। কিন্তু জরিমানার ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা নেই।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, লেক টাউনের বাসিন্দা চন্দ্রিকা মজুমদার জানাচ্ছেন, পড়ার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের একটি সংগঠনে কর্মরত তিনি। ১১ মার্চ, সোমবার সেই কাজ সেরে রবীন্দ্র সদন থেকে ৬টা ৪৫ মিনিটের মেট্রো ধরেন তিনি। ভিড়ে ঠাসা কামরায় দাঁড়িয়ে অসুস্থ বোধ করছিলেন বলে জানাচ্ছেন চন্দ্রিকা। বেলগাছিয়া স্টেশনে নামতে গিয়ে যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কিতে হাত থেকে টোকেনটি কামরায় পড়ে যায় বলে চন্দ্রিকার দাবি। এর পরেই বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনের দরজা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চন্দ্রিকা বলেন, ‘‘কর্তব্যরত কর্মীকে সব জানাই। তিনি স্টেশন মাস্টারের ঘরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’’ অভিযোগের পর্ব শুরু হয় এখান থেকেই। চন্দ্রিকার দাবি, প্রথমে তাঁর থেকে ২৭০ টাকা জরিমানা চাওয়া হয়। চন্দ্রিকা জানান, তাঁর কাছে ওই টাকা নেই। তিনি বাড়িতে ফোন করতে চাইলে প্রথমে সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি বলে চন্দ্রিকার অভিযোগ। যত ক্ষণে তিনি ফোন করে বাড়িতে জানান, অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। চন্দ্রিকার অভিযোগ, ‘‘শরীর খুব খারাপ লাগছে, বলার পরেও জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। উপরন্তু স্টেশন মাস্টার একাধিক বার ধমকে বলেন, জরিমানা না দিলে আরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল ফুটব্রিজ, চাপা পড়ে মৃত্যু অন্তত ৬ জনের

চন্দ্রিকার বাবা তাপস মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘ফোন পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে দেখি, মেয়ে কান্নাকাটি করছে। অপমানিত হয়ে তখন ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। জরিমানার টাকা দিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসি। আমার প্রশ্ন, এ ভাবে কোনও তরুণীকে কেন এক ঘণ্টা মহিলা রেলকর্মীর উপস্থিতি ছাড়া আটকে রাখা হবে? জরিমানার টাকা নিতে কেন কার্ড সোয়াইপের যন্ত্র স্টেশনে থাকবে না?’’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই তরুণী তো জরিমানার টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। স্টেশনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা না থাকা তো তাঁর দায় নয়। জোর করে আটকে তাঁকে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আইনের চোখে তা দণ্ডনীয় অপরাধ।’’

বিষয়টি জানতে এ দিন সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনাটি জানলেও এ নিয়ে তাঁরা কথা বলতে চাননি। এ নিয়ে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগের তদন্ত করার জন্য মেট্রোয় নির্দিষ্ট দফতর রয়েছে। ওই যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেই তদন্ত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE