Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ওঁদের হাত ধরে ঘরে ফিরলেন ভবঘুরে প্রৌঢ়

গালভর্তি দাড়ি, মলিন পোশাকে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। ষাটোর্ধ্ব সেই প্রৌঢ়কে কাছে টেনে নিয়েছিল নিউ টাউনের মহিষগোট। এই সে দিনও যিনি অনেকের কাছে ছিলেন ভবঘুরে, স্নেহের স্পর্শে সেই তিনিই ফিরে পেলেন তাঁর আসল পরিচয়— তেতার আলি

ফেরা: পরিজনদের সঙ্গে তেতার আলি (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র

ফেরা: পরিজনদের সঙ্গে তেতার আলি (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২১
Share: Save:

গালভর্তি দাড়ি, মলিন পোশাকে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। ষাটোর্ধ্ব সেই প্রৌঢ়কে কাছে টেনে নিয়েছিল নিউ টাউনের মহিষগোট। এই সে দিনও যিনি অনেকের কাছে ছিলেন ভবঘুরে, স্নেহের স্পর্শে সেই তিনিই ফিরে পেলেন তাঁর আসল পরিচয়— তেতার আলি। বাড়ি বিহারের ভাগলপুর জেলার কোতোয়ালি থানা এলাকায়। বুধবার পরিজনেদের হাতে তেতারকে তুলে দিতে পেরে বেজায় খুশি অচেনা শহরে প্রৌঢ়ের অভিভাবক ওয়াজেদ আলি, সুব্রত মিত্রেরা।

মাস পাঁচেক আগে মহিষগোট লোহাপুলের কাছে একটি বাজারে তেতারকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন দোকানে ঘুরতে ঘুরতে লটারি বিক্রেতা ওয়াজেদের দাওয়ায় বসেন প্রৌঢ়। সে দিনের মতো চা-বিস্কুট খাইয়ে ওয়াজেদ বাড়ি চলে যান। ফিরে দেখেন, তেতার তাঁর দোকানের দাওয়া ছেড়ে যাননি। ওয়াজেদের কথায়, ‘‘বাংলা উনি বুঝছিলেন না। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ইশারায় বোঝান, তিনি এখানকার বাসিন্দা নন।’’ এর পরে তেতারের দাড়ি, চুল কাটিয়ে নিজের জামাকাপড় পরতে দেন ওয়াজেদ। সেই সঙ্গে তাঁর খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা হয়। প্রৌঢ়ের পকেটে সব সময় যে একটি পেন থাকত তা নজর এড়ায়নি লটারি বিক্রেতার। এক দিন কাগজ বাড়িয়ে তেতারকে নিজের নাম-পরিচয় লেখার জন্য বলেন ওয়াজেদ। প্রৌঢ় বিহারের ভাগলপুর জেলার কোতয়ালি থানার জানার পরে সুব্রতের দ্বারস্থ হন ওয়াজেদ। শুরু হয় প্রৌঢ়ের বাড়ি খোঁজার পালা।

মোবাইল থেকে ভাগলপুর জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের নম্বর পেয়ে সেখানে দু’জন ফোন করেন। কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া যায় কোতয়ালি থানার নম্বর। পুলিশের পরামর্শ মেনে হোয়াটস্অ্যাপে তেতারের ছবি-সহ যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়। এক দিন সেই সূত্রেই ওয়াজেদের মোবাইলে ফোন করে মামার খোঁজ করেন তেতারের ভাগ্নে। ভিডিয়ো কলিংয়ে পরিজনেদের দেখে এক এক করে তাঁদের নাম বলতে থাকেন তেতার। অশ্রুসজল সেই মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি ঘটে বুধবার সকালে। ওই দিন ভাইকে নিয়ে যেতে কলকাতায় এসেছিলেন বোন পানো দেব। সঙ্গে ভাগ্নে রাজেন্দ্র আলি-সহ অন্য পরিজনেরা। তাঁদের কাছ থেকে ওয়াজেদ-সুব্রতেরা জানতে পারেন, অকৃতদার তেতার এক সময়ে পূর্ত দফতরের কর্মী ছিলেন। পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই তেতার। ভাগ্নে জানান, অবসর জীবনের পরে একাকিত্ব মামাকে গ্রাস করে। প্রায়ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। বছরখানেক আগে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যান তেতার। পরিজনদের অনুমান, ট্রেনে চড়ে সম্ভবত কলকাতায় পৌঁছেছিলেন প্রৌঢ়।

বৃহস্পতিবার ওয়াজেদ বলেন, ‘‘যাওয়ার আগে হাতে ১০ টাকা গুঁজে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ভাল থেকো। আমি আসছি।’’ সেই আশীর্বাদটুকু সম্বল করে আরও তেতারদের ঠিকানায় ফিরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ওয়াজেদ-সুব্রতেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Human Emotional
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE