শহরে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। অন্তত তেমনই বলছে কলকাতা পুরসভার তথ্য। প্রতি দিন শহরে যত জঞ্জাল জমে, তার মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে বলেই পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। অথচ প্লাস্টিক বর্জ্য পচনশীল নয় বলে তা নিয়ে কী করণীয়, ভেবে কূলকিনারা করতে পারছে না পুর প্রশাসন। ওই বর্জ্য নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে তারা। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের (এইচপিএল) সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য পুরোপুরি বিনষ্ট করা যায় কি না, তা পরীক্ষামূলক ভাবে দেখতে চায় এইচপিএল। সেই পরীক্ষা করার জন্য ধাপায় একটি জায়গাও এইচপিএলের জন্য চিহ্নিত করে রেখেছে পুরসভা।
তথ্য বলছে, প্রতি দিন শহরে গড়ে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল জমে। সেই জঞ্জাল ফেলা হয় ধাপায়। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেখা যাচ্ছে, ধাপায় প়ড়া ওই জঞ্জালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। পুরসভার নিজস্ব সমীক্ষাই জানাচ্ছে, আগে দিনের মোট জঞ্জালের মধ্যে যেখানে ৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য থাকত, সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮-৯ শতাংশে! সংখ্যার দিক থেকে মাত্র ৪ শতাংশ হলেও বাস্তবে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা, সৌন্দর্যায়ন-সহ সব কিছুকে বেহাল করে দিচ্ছে এই প্লাস্টিক! পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ আগের থেকে বেড়েছে বেশ কিছুটা। কিন্তু তা নিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না। কারণ, প্লাস্টিক পচনশীল নয়।’’
এই পরিস্থিতিতেই বিষয়টি নিয়ে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে কথা হয়েছে পুরসভার। সংস্থার তরফে ধাপায় একটি ছোট জায়গা চাওয়া হয়েছে বলে পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জ্য বিনষ্ট করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষা করতে চায় হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। সে জন্য তারা ধাপায় জায়গা চেয়েছে। আমরা তাদের জন্য একটি জায়গা চিহ্নিত করে রেখেছি।’’ হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্লাস্টিক নিয়ে পরীক্ষার জন্য আমরা পুরসভার কাছ থেকে জায়গা চেয়েছি। কারণ, সচেতনতার অভাবে প্লাস্টিক একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা হবে।’’
কিন্তু প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়ির পরেও কেন তা বন্ধ করা যাচ্ছে না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুর মহলেই। গোটা বিষয়ে পুরসভার গাফিলতিই আরও এক বার স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে পুর প্রশাসনের একাংশ। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ নিয়ে অনেক কিছুই শোনা যায়। কিন্তু, জঞ্জালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ায় এটা প্রমাণিত যে তার ব্যবহার কমানো যায়নি।’’
অবাধ: (বাঁ দিকে) গড়িয়াহাট বাজারে প্লাস্টিকের ব্যাগেই চলছে আনাজ বেচাকেনা। (ডান দিকে) ক্রেতার কাছে নাইলনের ব্যাগ থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের ব্যাগেই মাছ দিচ্ছেন বিক্রেতা (চিহ্নিত)। হাওড়ার কদমতলা বাজারে। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ, দীপঙ্কর মজুমদার
শুধু কলকাতা নয়। ছবিটা একই পড়শি শহর হাওড়াতেও। প্লাস্টিক ব্যবহারের উপরে নিষেধা়জ্ঞা থাকলেও হাওড়া পুরসভা এলাকাতেই অবাধে বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের ব্যাগ। নিয়ম মতো ৫০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ২০১২-’১৩ সাল নাগাদ বাম আমলে প্লাস্টিক বন্ধ নিয়ে এক বার হাওড়ার বিভিন্ন বাজার-দোকানে অভিযানও চালানো হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই!
এই মুহূর্তে শহরের প্রায় সব ক’টি বাজার, দোকানে জিনিসপত্র কিনলেই প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। আর প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহারে পঞ্চাননতলা, টিকিয়াপাড়া, সালকিয়া-সহ একাধিক জায়গায় নর্দমার জল বেরোতে পারে না। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলের তলায় চলে যায় পথঘাট। পুরো বিষয়ে নজরদারির অভাব কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ ভাস্কর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘প্লাস্টিক নিয়ে আরও নজরদারির প্রয়োজন ছিল। তবে এখন থেকে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’