Advertisement
E-Paper

ঐত্রীর মৃত্যুতে সাসপেন্ড ইউনিট হেড

আড়াই বছরের মেয়ে ঐত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দু’দিনের মধ্যে দোষীরা শাস্তি না পেলে তিনি অনশনে বসবেন বলে শুক্রবারই হুমকি দিয়েছিলেন মা শম্পা দে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা গেল, ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালের কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১২
ঐত্রীর বাবা-মা।

ঐত্রীর বাবা-মা।

আড়াই বছরের মেয়ে ঐত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দু’দিনের মধ্যে দোষীরা শাস্তি না পেলে তিনি অনশনে বসবেন বলে শুক্রবারই হুমকি দিয়েছিলেন মা শম্পা দে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা গেল, ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালের কর্তারা। গত বুধবার সেখানে ঐত্রী মারা যাওয়ার পরে তার পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল জয়ন্তীদেবীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে সে দিনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছুটিতে যেতে বলেছিলেন। আর এ দিন তাঁকে সাসপেন্ড করা হল।

আমরি সূত্রের খবর, শিশুটির মৃত্যু নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে ছয় সদস্যের যে কমিটি গড়া হয়েছে, তাদের সোমবারের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। কমিটিতে রয়েছেন সুভাষ টোডি, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, অমিত রায়, সুদীপ্ত রায়, অতনু পাল এবং কুলদীপ কৌর জাজ। কুলদীপ ওই হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান। বাকি পাঁচ জনই চিকিৎসক। ঐত্রীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতি ও জয়ন্তীদেবীর দুর্ব্যবহার— দু’টি অভিযোগই খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।

এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, জয়ন্তীদেবীর বিরুদ্ধে আলাদা কোনও মামলা রুজু করা হবে না। চিকিৎসায় গাফিলতির যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেই মামলার সঙ্গেই জয়ন্তীদেবীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে যুক্ত করে তদন্ত করবে তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, জয়ন্তীদেবীকে দিন কয়েকের মধ্যেই ডেকে পাঠানো হবে। ঐত্রীর পরিবার তাঁর বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছে পূর্ব যাদবপুর থানায়। ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেই মূল মামলার সঙ্গে তা যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত জয়ন্তীদেবীর স্বামী কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক।

পুলিশ জানায়, এর আগেও রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ উঠেছিল জয়ন্তীদেবীর বিরুদ্ধে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ওই দিন ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়েছিলেন জয়ন্তীদেবী।

পুলিশ ও অভিযোগকারী পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ জানুয়ারি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ঐত্রী। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তার পরিবারের দাবি, ১৭ জানুয়ারি, বুধবার একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই শিশুটির খিঁচুনি শুরু হয়। সেই সময়ে অক্সিজেন দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা মাস্ক জোগাড় করতে না পারায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর পরেই কর্মীদের অবহেলা এবং গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল। অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে এসে হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় শিশুটির এক আত্মীয়াকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘আমার থেকে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।’’

জয়ন্তীদেবীকে অবশ্য এ দিনও ফোনে পাওয়া যায়নি। তিনি এসএমএসেরও কোনও জবাব দেননি।

পুলিশ জানিয়েছে, জয়ন্তীদেবীকে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও ঘটনার দিন ওই শিশুর চিকিৎসক দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের নাম এবং ওই ওয়ার্ডে থাকা কর্মীদের নামের তালিকা এ দিন বিকেলেও পূর্ব যাদবপুর থানায় পাঠায়নি হাসপাতাল। বুধবার রাতেই হাসপাতালের কাছে ওই নামের তালিকা চেয়েছিল পুলিশ। ঐত্রীর চিকিৎসার সময়কার ভিডিও ফুটেজও হাতে আসেনি তদন্তকারীদের। তবে মৃত শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেগুলি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তবে সবার নামের পূর্ণ তালিকা না এলে তদন্ত পুরোমাত্রায় শুরু করা যাবে না বলে পুলিশকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন।

এ দিন ঐত্রীর পরিবার শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে যায়। হাসপাতালে ঐত্রীর চিকিৎসার ভিডিও ফুটেজ যাতে পরিবারের হাতে দেওয়া হয়, কমিশনের চেয়ারপার্সনের কাছে সেই আর্জি জানান তাঁরা। কমিশন থেকে বেরিয়ে শম্পাদেবী বলেন, ‘‘দু’দিনের মধ্যে দোষীরা শাস্তি না পেলে আমি অনশনে বসব।’’ এর পরে তাঁরা মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে যান। ঐত্রীর চিকিৎসার বিল সংগ্রহ করেন।

পুলিশ জানায়, হাসপাতালের তরফে ঐত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র মেডিক্যাল কাউন্সিলেও পাঠানো হবে। চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়েছে কি না, তা জানতেই মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। কারণ, ঐত্রীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এ দিনও জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। তাঁরা শিশুটির দেহাংশ ‘হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল’ পরীক্ষার জন্য পাঠান।

AMRI Medical Negligence Death Suspend Unit Head জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy