সাতাশি ছুঁইছুঁই বয়সেও স্মৃতিশক্তি বা প্রাণশক্তি, কোনওটিতেই ধুলো জমেনি তাঁর। পাকিস্তানি জঙ্গিদের হামলার পরে পাল্টা প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। তাই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর দক্ষতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অতীতের দু’টি যুদ্ধে শরিক হওয়া বৃদ্ধ। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সেনাবাহিনীর সিভিলিয়ান আধিকারিক পদে নিযুক্ত ছিলেন এই বাঙালি। দু’টি যুদ্ধই খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কাশ্মীরে ২৬ জন নিরীহ ভারতীয়কে হত্যার ভয়াবহ ঘটনা আরও অনেকের মতো তাঁরও রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ভারতের সামরিক প্রত্যাঘাত তাই অতীতের অনেক স্মৃতি উস্কে দিয়েছে বৃদ্ধ শিবকুমার বটব্যালের।
শিবকুমারের আদি বাড়ি বীরভূমের সিউড়িতে। সিউড়ির সনাতনপাড়ার ‘বটব্যাল বাড়ি’ এক নামে লোকে চেনে। সরকারি আইনজীবী বাবার রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত শিবকুমার বিশ্বভারতী থেকে স্নাতক হওয়ার পরেই যুদ্ধে অংশ নিতে নাম লেখান। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৬২ সালে তখন সবে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হয়েছি। সেনাবাহিনীতে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগের বিজ্ঞাপন খবরের কাগজে বেরিয়েছিল। আমার এনসিসি-র ‘সি’ সার্টিফিকেট ছিল। বাড়ির কাউকে না জানিয়েই আবেদন করি। দিল্লিতে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার পরে বাড়িতে বলি। বাবা রাজি হলেও মা রাজি ছিলেন না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই যুদ্ধে অংশ নিতে নাম লেখাই।’’
চার বছরের চুক্তিতে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন শিবকুমার। সরাসরি যুদ্ধে শামিল না হলেও যুদ্ধক্ষেত্রের তাঁবুতে সেনাবাহিনীর খাবার-সহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরে। চিনের যুদ্ধ শেষ হওয়ার ক’বছর পরে বিয়ের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন শিবকুমার। অষ্টমঙ্গলায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময়ে খবর আসে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য ছুটি বাতিল হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে অষ্টমঙ্গলা না সেরেই ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘‘দেশের সেবায় নিযুক্ত হলে নিজের অনেক ক্ষুদ্র স্বার্থ বলি দিতে হয়। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরে রুরকিতে ছ’মাসের প্রশিক্ষণে এ কথাই বার বার মাথায় ঢোকানো হয়েছিল।’’ বর্তমানে টালিগঞ্জের পশ্চিম পুটিয়ারির বাড়িতে বসে থাকলেও শিবকুমারের মন পড়ে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটছে টিভিতে খবর দেখে এবং খবরের কাগজ পড়ে।
শিবকুমারের কথায়, ‘‘সেই আমলে এখনকার মতো যুদ্ধের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। ছিল না উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও। সে সময়ে হিমালয় পর্বতের বুকে রাস্তাও তেমন ছিল না। সেনাবাহিনীর গাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরির
বিভাগেও আমি কাজ করেছি। ডিনামাইট দিয়ে পাথর ফাটিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। এখনও সব মনে আছে।’’ শিবকুমার জানান, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী সারগোধা বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল। সেটি ছিল পাকিস্তানের সুরক্ষিত বিমানঘাঁটিগুলির অন্যতম।
তাঁর কথায়, ‘‘খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম, ভারতীয় সেনা গুলি করে পরপর পাকিস্তানের একাধিক বিমানকে মাটিতে ফেলছে। এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত। আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সম্ভারও আমাদের রয়েছে। তাই জঙ্গি তৈরির কারখানা পাকিস্তানকে অনায়াসেই কব্জা করতে পারব আমরা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)